shono
Advertisement

৫০ বছরের স্বাধীনতার প্রাক্কালে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বাংলাদেশ চাই

বাংলাদেশে চলছে ইসলামিকরণের চেষ্টা। The post ৫০ বছরের স্বাধীনতার প্রাক্কালে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বাংলাদেশ চাই appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:27 AM Mar 07, 2020Updated: 11:36 AM Mar 09, 2020

জয়ন্ত ঘোষাল: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ঢাকা সফরে যাচ্ছেন। ১৭ মার্চ তাঁর যাওয়ার কথা। ‘বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

এই সফরের আগে হঠাৎই ঢাকায় বেশ কিছু মৌলবাদী সংগঠন নড়েচড়ে বসেছে। জামাত গোষ্ঠী তো বটেই, এবার হেফাজতে ইসলাম, সঙ্গে চর মোনাইয়ের পিরও হুঙ্কার ছেড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ‘বঙ্গবন্ধু’-র নামাঙ্কিত বিমানবন্দরে অবতরণ করলেই নাকি তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাবেন, ঢাকা অচল হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত আসতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর এ জন‌্য অনিশ্চয়তায়- এমন খবরও প্রকাশিত। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এই সফর বাতিল করার কথা এক মুহূর্তের জন‌্য ভাবেননি। তবে বাংলাদেশে যেভাবে ইসলামিকরণের চেষ্টা চলছে তা নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। প্রায় প্রত্যেক দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কিত রিপোর্ট আসছে। তিনি ইউরোপ সফর বাতিল করলেন করোনার জন‌্য। কিন্তু ঢাকা নয়।

[আরও পড়ুন: জনসমক্ষে হেনস্তা! ঠিকানা ও ছবি-সহ CAA বিক্ষোভকারীদের নামে পোস্টার উত্তরপ্রদেশে]

তবে ঢাকায় যেভাবে মৌলবাদীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তার জন‌্য ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিজেপির অতি সক্রিয়তা নিশ্চয়ই একটি কারণ। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ভারতে, এমনকী পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণকে যতই তীব্র করুক না কেন, বা তার জন‌্য বিজেপির রাজনৈতিক লাভ এই দেশে যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় সংখ‌্যালঘু। সে দেশে যদি কোনও হিন্দু মূর্তি ভেঙে যায়, তাহলে এ দেশে সংঘ পরিবারে প্রতিক্রিয়া হয়। হিন্দু শরণার্থীদের ব‌্যাপারেও অধুনা বিজেপি সহানুভূতি ব‌্যক্ত করছে। ফলে এ দেশে, দিল্লির দাঙ্গায়, যখন বহু মুসলমান নিহত, তখন ঢাকায় সংখ‌্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজে তার প্রতিক্রিয়া হবে, তাতে অস্বাভাবিকতা কোথায়?

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই সেখানে দু’টি সত্তার সমন্বয় আছে। একটি বাঙালি সত্তা, অন্যটি ইসলামিক সত্তা। আসলে, বাংলাদেশের ইসলামিক সত্তাকে অবজ্ঞা করাও তো অনুচিত। শেখ মুজিবর রহমানের সময়েই তো ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু মুজিবর এবং পরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ক্রমশ ধর্মনিরপেক্ষতার পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। শেখ হাসিনার সময়েই ঢাকার শীর্ষ আদালতের ধর্মনিরপেক্ষতা সংক্রান্ত রায় এবং হাসিনা সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু সাম্প্রতিক ভারতের ঘটনাবলি শেখ হাসিনাকেই বেশ অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এমনিতেই খালেদার দল ‘বিএনপি’ এবং তৎসঙ্গী জামাত চিরকালই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে যে, তিনি ‘ভারতের এজেন্ট’। ভারতের সাম্প্রতিক রাজনীতি তাঁকে আরও বিপদে ফেলে দিল।

চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসার মৌলবি আল্লামা শফির অনুসারীরা হেফাজতে ইসলামি। এরা জামায়াতে ইসলামির চেয়েও কড়া মৌলবাদী। বাংলাদেশে শরিয়তি ব‌্যবস্থা এদের কর্মসূচি। শফি বলেন, মেয়েদের ক্লাস থ্রি—র বেশি পড়ানো চলবে না। তাদের বাড়ির বাইরে বেরনো চলবে না। হাসিনার গুরু এই শফি। সরকার তাঁদের তেল দিয়ে চলে। তথ‌্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের মামা হন মৌলানা শফি। সেই জন্য চোর, সাম্প্রদায়িক হয়েও হাসান এখন হাসিনার নয়নের মণি, দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লোক।

শফির বয়স সম্ভবত ৯২। মহাসচিব বাবু গরি হেফাজতের দু’নম্বর। রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসাবে আমার মনে হচ্ছে, ভারতের এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে যতই মৌলবাদীরা সক্রিয় হচ্ছেন, যতই সেখানে ইসলামিক মৌলবাদীরা ঢাকাকে ‘কট্টরবাদী’ রাষ্ট্রবাদের দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন, ততই হাসিনাকেও পালটা কৌশল নিতে হচ্ছে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার রণকৌশল কৌটিল‌্য নীতি। হেফাজত বনাম জামায়াতের রাজনীতিতে সেই কৌশল আছে কি? গত কয়েক দিন ধরে এই হিংটিংছট প্রশ্নটাই আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি এই নিবন্ধ লিখছি মানেই আমার কথা শেষ কথা– এমন নয়। বরং এ হল মুক্তচিন্তার খোলামেলা বিতর্কের মঞ্চ। যদি ঢাকা বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন মত থাকে, তাঁরা এ লেখা পড়ে জানাবেন।

পরিস্থিতি সামলাতে বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গেলেন। ঢাকার বিদ্বৎসমাজ তাঁকে ভালবাসেন। কারণ, আমেরিকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে তিনি ঢাকায় হাই কমিশনার ছিলেন। তারও আগে তিনি দিল্লিতে সাউথ ব্লকে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ছিলেন। দার্জিলিংয়ের এই মানুষটিকে আমি দেখেছি ভালবেসে বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে। তিনি ফিরে এসেও কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে যা রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে এটাই বলা হয়েছে ঢাকায় ‘সুপবন বহিতেছে’ এমন নয়। ১৭ মার্চ, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে, প্রধানমন্ত্রী যাবেন। তারপর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ‌্যায়, যাঁকে ঢাকার মানুষ অভিভাবক জ্ঞান করেন, তিনি যাবেন। সুস্থ থাকলে সোনিয়া গান্ধীও যাবেন ২৬ এপ্রিল। আবার এ বছর মুজিবুরের জন্মশতবর্ষ, তো আগামী বছর পালিত হবে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর।

এত উৎসবের মধ্যে সম্প্রতি ঢাকা শহরের পুর নির্বাচনও হয়ে গেল। সেখানে মাত্র শতকরা ২৩ ভাগ ভোট কেন পড়ল, তা নিয়ে ঢাকার সংবাদমাধ‌্যমে প্রশ্ন উঠেছে। মানুষ কি তবে কিঞ্চিৎ অনীহার মধ্যে? ভারত সরকারের জন‌্য না হলেও বিজেপির রাজনীতিও কি কোনও প্রভাব ফেলছে?

এই অবস্থায় যদি হাসিনা সরকার হেফাজতেপন্থীদের প্রতি নরম মনোভাব নেন, তাতে কিন্তু ভারতের বিদেশ সচিবও প্রমাদ গুনবেন। এতে অবাক হওয়ার কী আছে? ২০১৮-’১৯ সালের পয়লা জানুয়ারি যে—সিলেবাস ছাত্রছাত্রীদের জন‌্য তৈরি হয়, তা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাদ না গেলেও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ‌্যায় (বঙ্কিম—ভ্রাতা) কেন বাদ গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার খোদ নজরুলের কবিতায় ‘সজীব করিব মহাশশ্মান’—কে বদলে ‘গোরস্থান’ করে দেওয়া নিয়েও বিতর্ক হয়। এটা হয়, হেফাজতের সুপারিশে। আর এখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, দিল্লির দাঙ্গার পর হেফাজতে—র সুপারিশ: সমস্ত সরকারি স্কুলে নমাজ পড়া বাধ‌্যতামূলক করতে হবে। খাবিজি মাদ্রাসাগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে। তারা তো বিজ্ঞান—অঙ্ক পর্যন্ত পড়ানোর বিরুদ্ধে। এখন আধুনিক চিকিৎসার বদলে জলপড়া দিয়ে চিকিৎসা ব‌্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছে।

আধুনিকতার বদলে এই পশ্চাৎমুখী যাত্রার সঙ্গে যদি শেখ হাসিনাকেও আপস করতে হয়, তবে খুব দুঃখ হবে। বিজেপির তা নিয়ে উদ্বেগ থাক বা না থাক, প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রকের আছে। কারণ, বাংলাদেশ আজ ভারতের জন‌্য বড়ই গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশ নিয়ে চিন বিশেষ উৎসাহী। শুধু পদ্মা সেতু নয়, বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রকল্প আজ চিন করছে। করোনা ভাইরাসের জন‌্য কিছু প্রকল্প বিলম্বিত হবে কি না, তা নিয়ে এই মুহূর্তে ঢাকাও চিন্তিত। লাখ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প। যা ভারতের পক্ষে সম্ভবই নয়।

শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম নেত্রী। খালেদা জেলে। বিএনপি-র অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের মতো। কিন্তু হাসিনা তো চিরদিন ক্ষমতাসীন থাকবেন না প্রকৃতির নিয়মে। হাসিনার পর কে, তা নিয়েও কূটনীতির বৃত্তে নানা নৈশভোজে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। পুত্র-কন‌্যা এখনই না এলে নিকটাত্মীয়রা দায়িত্ব নেবেন কি না, তা নিয়েও আওয়ামি লিগের নেতাদের মধ্যেই কত প্রশ্ন। আবার আওয়ামি লিগের বহু শীর্ষ নেতা প্রয়াত। এই দলটার অবস্থাও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মতো। শতছিন্ন দামি কার্পেটের মতো।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভবিষ‌্যৎ নিয়ে শেখ হাসিনা আজ নিজে যতটা উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে কম উদ্বিগ্ন নন নরেন্দ্র মোদিও। আমরা সবাই স্বাধীনতার অর্ধশতবর্ষে এক শক্তিশালী ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে দেখতে চাই।

[আরও পড়ুন: দিল্লি হিংসার ‘একপেশে’ খবর সম্প্রচার! দুই টিভি চ্যানেলে ৪৮ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা কেন্দ্রের]

The post ৫০ বছরের স্বাধীনতার প্রাক্কালে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বাংলাদেশ চাই appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement