সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে শিলাদিত্য মৌলিক পরিচালিত ‘সোয়েটার’। এই ভরা গরমেও ‘সোয়েটার’ দেখে বিরক্ত হওয়ার বদলে সবার মনে এনে দিয়েছে এক মৃদু হিমেল হাওয়া। আর এই সোয়েটার-এর অন্যতম কারিগর হলেন শ্রীলেখা মিত্র। বরাবরই তাঁর অভিনয় দক্ষতা নজর কেড়েছে সবার। ভিড়ের মাঝে কোথাও যেন আলাদা করা গিয়েছে তাঁকে। বড় বাজেটের ছবিতে হয়তো তাঁকে দেখা যায় না, বক্স অফিসেও তার ছাপ পড়ে না। সাফল্যের পরও ঠিক কী কারণে তাঁর ছবির তালিকা এত কম, তা নিয়ে তাঁর কী প্রতিক্রিয়া? বিস্ফোরক শ্রীলেখা মিত্র। আড্ডায় আরাত্রিকা দে।
সোয়েটার তো বুনলে, বুনন কতটা সূক্ষ্ম হল, ফিড ব্যাক কেমন?
শ্রীলেখা: দারুণ! সবার কাছ থেকে দারুণ ফিড ব্যাক পাচ্ছি। এতটা আশা করিনি। এর মধ্যে হল ভিজিট-এও গিয়েছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই উচ্ছ্বসিত। খুব ভাল লাগছে।
শ্রীলেখা মিত্র কি নিজে সোয়েটার বুনতে পারে?
শ্রীলেখা: না একেবারেই না। ছবির জন্যও শিখতে হয়নি। প্রথমটায় আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেছিলাম, ‘সোয়েটার’ টিচারের চরিত্র আবার বোনা শিখতে হবে নাকি? কিন্তু লাকিলি শিখতে হয়নি। বরং আমার স্টুডেন্টরা এ ব্যাপারে অনেক পারদর্শী। (হাসি)
নিন্দুকেরা বলে, শ্রীলেখা মিত্র ঠোঁট কাটা, তুমি কি সেটা মানো?
শ্রীলেখা: অবশ্যই মানি, আমি সত্যি সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে ভালবাসি। অনেক চেষ্টা করেও চাপতে পারি না। (হাসি)
এই কারণে ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা বেগ পেতে হয়?
শ্রীলেখা: প্রভূত, সেই কারণেই আমাকে অনেকে পছন্দ করেন না। ছবিতে নেন না। কারণ দেখান আমি মোটা তাই চরিত্রে আমি ফিট করছি না, এরকম অনেক কথা আমায় শুনতে হয়েছে। প্রথম প্রথম ভাবতাম শুরুতে এমনটা হচ্ছে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আজও কিছু ঠিক হল না সব একই রয়ে গেল। তবে শুধু ইন্ডাস্ট্রির ভিতরের কথা কেন? অনেক সাংবাদিকও আমাকে পছন্দ করেন না। আমি জানি না কেন। কোনও এক রেডিও স্টেশনে তো আমায় প্রশ্ন করা হল, আমার ছবিতে তেমন কোনও এ গ্রেগেড স্টার নেই, তাহলে ছবি নিয়ে আমি কতটা আশাবাদী। আমি সত্যি জানি না এগুলো প্রশ্ন না অপমান? এ গ্রেডেড স্টার কাকে বলে? মানে আমরা কোন গ্রেডেড স্টার?
[ আরও পড়ুন: কবাডি শিখতে গোটা উত্তর ভারতটাই চষে ফেলেছেন রিচা চাড্ডা ]
তোমার বক্স অফিস তো তেমনটা বলে না, তাহলে সমস্যাটা ঠিক কোথায় বলে তোমার মনে হয়?
শ্রীলেখা: আমি সত্যি জানি না, আমি চাই তোমরা একটু ডিরেক্টর প্রোডিউসারদের জিজ্ঞাসা করো না, হোয়াই নট শ্রীলেখা মিত্র? (হাসি)। আমি জানি আমি ভাল অভিনয় করি, ভাল কাজ করতে চাই। কিন্তু তার জন্য আমি কোনওভাবেই কম্প্রোমাইজ করব না। কারণ মানুষ হিসাবে আমি মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই।
অভিনয় জগৎ থেকে রাজনীতির আঙিনায় আসা নতুন বিষয় নয়। কিন্তু এই প্রবণতা বাড়ার কারণ কী?
শ্রীলেখা: ঠিক জানি না। সত্যি এটা আগেও হত, এখনও হচ্ছে। হয়তো নেতা-মন্ত্রীরা অভিনয় জগতের গ্ল্যামারটা কাজে লাগাতে চাইছেন। আবার হয়তো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মনে হচ্ছে এতে নিজেদের প্রচার বাড়বে। এর কোনওটাই নাও হতে পারে। হয়তো রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হয়েই তাঁরা আসছেন।
তুমি কখনও রাজনীতিতে আসার প্রস্তাব পাওনি?
শ্রীলেখা: হ্যাঁ পেয়েছি। ক’দিন আগেই একটি দল থেকে আমায় অফার করে। কিন্তু আমি রাজি হইনি।
তবে কি খুব তাড়াতাড়ি রাজনীতির মঞ্চে শ্রীলেখা মিত্রকে দেখতে পাব?
শ্রীলেখা: একদম না, যা হচ্ছে তার সঙ্গে আমি নিজেকে কিছুতেই মানাতে পারব না। কোনও দলে আমি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারব না। দেশে রাজনীতিতে যা হচ্ছে তাতে ইনফ্যাক্ট আমি এই দেশ ছেড়ে, এই রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে চাই।
ওয়েব সিরিজ এখন একটা বড় দিক। এটা নিয়ে কী বলবে? এরপর কি ওয়েব সিরিজই ভবিষ্যৎ?
শ্রীলেখা: না, ঠিক তেমনটা নয়, আমার মনে হয় ওয়েব সিরিজ, টেলিভিশন দুটো প্যারালালভাবে চলবে। একেবারে কোনওটাই বন্ধ হবে না। তবে ওয়েব একটা বিরাট মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আঁতাঁত অনস্বীকার্য। আমার বাড়িতেই তো সারাক্ষণ নেটফ্লিক্স চলে।
[ আরও পড়ুন: সমালোচকদের একহাত নিলেন সোফিয়া, ফের ইনস্টাগ্রামে নগ্ন ছবি পোস্ট মডেলের ]
‘সোয়েটার’ তো হল আগামিদিনে কী কী কাজ করতে চলেছ।
শ্রীলেখা: শুভ্রজিৎ মিত্রর একটা ছবি, আদিত্য বিক্রম সেনের সঙ্গে কাজ করছিল, বাংলাদেশে একটা ছবির কথা চলছে। করছি। বেশ কয়েকটা কাজই হাতে আছে। ওয়েব সিরিজও করার ইচ্ছা আছে আগামিদিনে।
সম্প্রতি ভবিষ্যতের ভূত বন্ধ হওয়া নিয়ে উত্তাল ছিল চলচ্চিত্র জগৎ। এপ্রসঙ্গে তুমি কী বলবে?
শ্রীলেখা: এটা তো হওয়ারই ছিল। আমি শুধু বলব এটা মানুষের জয়। আর যারা এই সময় পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলার আছে, একদিকে ভালই হয়েছে, যাঁরা ছবিটা দেখতেন না তাঁরাও এবার ছবিটা দেখবেন। এটা দেখার জন্য যে ঠিক কী কারণে ছবিটা আটকানো হয়েছিল। (হাসি)
ছবি : শুভেন্দু চৌধুরি
The post ‘আমি দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই’, বিস্ফোরক শ্রীলেখা appeared first on Sangbad Pratidin.