ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: লোকসভা ভোটে বোলপুর শহরে ভোটের নিরিখে বিজেপি থেকে অনেকটা পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। কিন্তু গত এক বছরে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে ইস্যু করে একাধিক আন্দোলন করে নিজেদের হারানো জমি অনেকটা ফেরত পেয়েছে শাসকদল। এবার বিধানসভা ভোটে সেই উপাচার্যের বিভিন্ন ইস্যুকেই হাতিয়ার করতে চলেছে তারা। সেই কথা প্রকাশ্যে জানানোর পাশাপাশি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal) অভিযোগ করেছেন, উপাচার্য আর এসএসের লোক, এবার রবীন্দ্রনাথকে মুছে দেবেন। বলেছেন, “বোলপুরের মানুষদের বলব আপনারা সবাই গর্জে উঠুন। এই উপাচার্যকে তাড়াবার দরকার আছে। আর যাঁকে বোলপুর কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী করেছে, তিনি উপাচার্যের এক নম্বর লোক। তাই ওঁকে একটাও ভোট নয়।”
বোলপুর (Purulia) বিধানসভার শহরাঞ্চল বলতে বোলপুর এবং শান্তিনিকেতন। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে শান্তিনিকেতন এবং বোলপুর এখন রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। হোটেল তৈরি করতে কয়েকশো কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন স্থানীয় এবং বাইরে থাকে আসা ব্যবসায়ীরা। এখানে সারা বছর এখানে দেশ-বিদেশ থেকে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে বসন্ত উৎসব এবং পৌষমেলাতে। এলাকার হাজার হাজার মানুষের রুজি রোজগার জড়িয়ে শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর সঙ্গে।
[আরও পড়ুন: ভোটের মুখেই রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে সরানো হল সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে]
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে মেলা এবং বসন্ত উৎসব। বিশ্বভারতী (Visva Bharati University) কর্তৃপক্ষ নিজেদের জায়গা ঘিরে ফেলার ফলে শান্তিনিকেতনের বিরাট এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে যে সব রাস্তা সাধারণ মানুষ নিজেদের যাতায়তের জন্য ব্যবহার করতেন, সেগুলিও বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। আর এরপরই আম জনতার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে বিশ্বভারতী। তাদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের জায়গা তারা ঘিরবে। রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন নিয়ে বোলপুর ও শান্তিনিকেতনের মানুষের যে সেন্টিমেন্ট রয়েছে, তাকে এখন উসকে দিয়েছে তৃণমূল। আর এটাই এখন ভোটের অন্যতম ইস্যু।
তাই অনুব্রত মণ্ডল জানিয়ে দিয়েছেন, “সবাইকে আমি বলছি বোলপুরের যিনি প্রার্থী তিনি উপাচার্যের প্রার্থী। কোথায় রফা হয়েছে জানেন ? কলকাতার একটা বড় হোটেলে। সেই ছবিটা বেরিয়ে এসেছে। দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাবেন। যাকে প্রার্থী করেছে তার দিল্লি বাড়ি। আপনাদের ঘরের ছেলে বাড়ির ছেলে চন্দ্রনাথ সিনহা। তাকে ভোট দিন। বিজেপির প্রার্থীকে ভোট (WB assembly polls 2021) দিলে বিজেপির হাত শক্ত হবে, উপাচার্যের হাত শক্ত হবে।”
[আরও পড়ুন: শিয়রে ভোট, এবার জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা মুকুল রায়কে]
জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে বারবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিরোধী কোনও সিদ্ধান্ত বিশ্বভারতী করলে তার বিরোধিতা করবে বিজেপি। কিন্তু বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্য উপাচার্যের সর্মথনে বা বিপক্ষে কোন আন্দোলনে নামেনি বিজেপি।
উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুরু করেছিলেন, ওঁ নয়। তাই বিশ্বভারতী বন্ধ করার ওঁ কেউ নন। একজন প্রতিনিধিমাত্র। সেই অনুসারেই কাজ করছেন।