shono
Advertisement

নজরে শেষ দফার ৩৫ আসনের নির্বাচনী লড়াই, কী বলছে গ্রাউন্ড রিপোর্ট?

শেষলগ্নে কে মাত দেবে কাকে, উত্তর মিলবে ২ মে পর্যন্ত।
Posted: 04:11 PM Apr 26, 2021Updated: 06:32 PM Apr 26, 2021

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাত দফা শেষ। এবার রাজ্যের ভোটপুজোর অন্তিম লগ্ন। অর্থাৎ অষ্টম দফা ভোটগ্রহণ (West Bengal Assembly Polls 2021)। বৃহস্পতিবার মালদহ, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা ও বীরভূমের মোট ৩৫ আসনে নির্বাচন। ভাগ্য নির্ধারণ একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীর। শেষ রাউন্ডে কে, কাকে, কোন চালে মাত দেবে, তা নিয়ে অঙ্ক কষা সারা হয়েছে ইতিমধ্যে। এখন শুধু ভোটগ্রহণের অপেক্ষা। কোন আসনে কে কাটবে ভোট, আর কে সেই অঙ্কের ফায়দা তুলে ভরবে ভোটের ঝুলি, সেই হিসেব নিকেশ নিয়েই রইল অষ্টম দফার গ্রাউন্ড রিপোর্ট।

Advertisement

মালদহ
মানিকচক: আসনটি বরাবরই বামেদের দখলে থাকত। এখান থেকে জিতে একসময় মন্ত্রিসভায় ছিলেন সিপিএমের সুবোধ চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে একবার বরকত গনি খান চৌধুরী থাবা বসিয়ে ‘স্নেহধন্য’ রামপ্রবেশ মণ্ডলকে কংগ্রেসের প্রতীকে জিতিয়েছিলেন। তারপর আসনটি ফের বাম দখলে চলে যায়। ২০১১ সালে সিপিএমকে পরাজিত করে তৃণমূলের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান সাবিত্রী মিত্র। ২০১৬ সালে কংগ্রেসের মোত্তাকিন আলমের কাছে পরাজিত হন তৃণমূলের সাবিত্রী। একুশেও মুখোমুখি সাবিত্রী-মোত্তাকিন। কিন্তু এবার হাওয়া যেন আলাদা। চ‍্যালেঞ্জ ছুড়ে ময়দানে নেমেছে গেরুয়া শিবির। মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল বিজেপির প্রার্থী। পদ্মপ্রতীক নিয়ে লড়ছেন তৃণমূলত‍্যাগী গৌর। এতেই এবার হাড্ডাহাড্ডি, লড়াই ত্রিমুখী।

মালদহ: এবারও কংগ্রেসের প্রার্থী ভূপেন্দ্রনাথ হালদার (অর্জুন)।২০১৬ সালে তিনি তৃণমূলের বাবলা (দুলাল) সরকারকে পরাজিত করেন। এবার প্রার্থী বদল করে নতুন মুখ এনেছে তৃণমূল। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি উজ্জ্বল চৌধুরী তৃণমূল প্রার্থী। তবে এখানেও পরিবর্তনের ডাক দিয়ে প্রচারে অনেকটাই সাড়া ফেলেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি প্রার্থী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দিনকয়েক আগে তিনি দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন। এরপর কিছুটা হলেও সিমপ‍্যাথি তৈরি হতে পারে। আশা বিজেপির। কংগ্রেস-বিজেপির জোর লড়াইয়ের মাঝে ঘাসফুল গজানো নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ইংলিশবাজার: এখানে অগ্নিপরীক্ষা এবার প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী নীহাররঞ্জন ঘোষের কাছে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব‍্যবধানে তিনি হেরেছিলেন। এবারও তৃণমূলের প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুবাবু। বাম-কংগ্রেস জোট তথা সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী এবার সিপিএমের নতুন মুখ কৌশিক মিশ্র। দুঃসময়েই ডুবে রয়েছে বামেরা। কিন্তু মালদহ জেলার এই নজরকাড়া কেন্দ্র ইংলিশবাজারে সিংহের থাবা বসাতে কোমর কষেই ময়দানে নেমেছেন বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। ‘নির্ভয়া দিদি’ হিসাবে তিনি পরিচিত। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রায় ৯৬ হাজার ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। লোকসভায় প্রার্থী ছিলেন শ্রীরূপাদেবীই। বিজেপির এই অঙ্কের সঙ্গেই এখানে লড়তে হচ্ছে তৃণমূলকে। লড়াই কঠিন বলা যায়।

মোথাবাড়ি: এখানে লড়াইটা যেন তৃণমূল বনাম তৃণমূল। দলীয় বহু নেতাকর্মী তলে তলে গাছ কাটতে সক্রিয় বলে কানাঘুষো চলছে। আর এতে ভরসা করে খোশমেজাজেই প্রচার চালাচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী শেখ দুলাল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন জয়ী হয়েছিলেন। প্রায় ৩৬ হাজার ভোটের ব‍্যবধানে তৃণমূলের নজরুল ইসলামকে পরাজিত করেছিলেন তিনি। পরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সাবিনা। এবার তিনি তৃণমূল প্রার্থী। কাঠখড় পুড়িয়েও নজরুল এবার প্রার্থী হতে পারেননি। লড়াই এখানেই। শেষ মুহূর্তেও চাপা দ্বন্দ্ব অব‍্যাহত। এখানে বিজেপি প্রার্থী দলের প্রবীণ নেতা শ‍্যামচাঁদ ঘোষ। এলাকায় নামডাক রয়েছে তাঁরও। তৃণমূল আর কংগ্রেসের মধ্যে সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হলেই শিঁকে ছিড়তে পারেন শ‍্যামচাঁদ। আশায় গেরুয়া শিবির।

সুজাপুর: এই সেই সুজাপুর, যে কেন্দ্র থেকে জিতে প্রথম বিধায়ক হয়েছিলেন আবু বরকত আতাউল গনি খান চৌধুরী। এই এলাকার মানুষের ভোটেই একদা দিল্লির মসনদে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রয়াত গনি খান। এযাবৎ এই কেন্দ্র কংগ্রেসের দখলেই রয়েছে। বারবার বিধায়ক হয়েছেন কোতোয়ালি তথা গনি পরিবারের সদস্যরা। এবার একজন ‘ভূমিপুত্র’কে প্রার্থী করে গনির গড়ে পরিবর্তন আনতে মরিয়া তৃণমূল। ২০১৬ সালে কংগ্রেস প্রার্থী ইশা খান চৌধুরী প্রায় ৪৬ হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী আবু নাসের খান চৌধুরীকে পরাজিত করেন। ইশা খান সাংসদ ডালুর একমাত্র ছেলে। এবারও কংগ্রেস প্রার্থী ইশা। তৃণমূলের প্রার্থী আবদুল গণি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই গণির বাড়ি সুজাপুর কেন্দ্রের গয়েশবাড়ি গ্রামে। তৃণমূল বলছে, ভূমিপুত্র প্রার্থী। বিজেপি এখানে কোনও ফ‍্যাক্টর নয়। সুজাপুরে তৃণমূলের দলীয় সংগঠন যথেষ্ট মজবুত। সংগঠন এগিয়ে রেখেছে দলীয় প্রার্থী আবদুল গণিকে। কিন্তু পরম্পরায় এগিয়ে সেই ‘গনি-মিথ’ই।

বৈষ্ণবনগর: এই কেন্দ্র থেকেই মালদহে খাতা খোলে বিজেপি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী স্বাধীন সরকার প্রায় পাঁচ হাজার ভোটের ব‍্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থী আজিজুল হককে পরাজিত করেন। এবারও দুই দল থেকে এই দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তৃণমূলের প্রার্থী জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি চন্দনা সরকার। পিছিয়ে পড়া এলাকা। পাশেই বাংলাদেশ। নদী ভাঙন আর সীমান্ত সমস্যায় জর্জরিত মানুষ। ২০১১ সালে সিপিএমকে হারিয়ে জিতেছিলেন কংগ্রেসের ইশা খান। তার আগে ২০০৬ সালে সিপিএমের বিশ্বনাথ ঘোষ কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)-কে হারিয়েছিলেন। সমস্যায় জর্জরিত মানুষজন প্রত‍্যেকবার বিধায়ক বদল করেছেন। এবার প্রচারে ঝড় তুলতে চেষ্টা চালিয়েছে তিনদলই। কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূল। তবে বিজেপির সঙ্গে এখানে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করছে কংগ্রেস।

[আরও পড়ুন: ভোটের সকালে প্রয়াত মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের ‘প্রতিষ্ঠাতা’ সাগির হোসেন]

মুর্শিদাবাদ
খড়গ্রাম: গতবার কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বিধায়ক আশিস মার্জিত এবার তৃণমূলের প্রার্থী। এবার সংযুক্ত মোর্চার তরফে প্রার্থী হয়েছেন বিপদতারণ বাগদি। লোকসভার ভোটের হাওয়া ধরে রাখতে মরিয়া কংগ্রেস। লড়াইটা কংগ্রেস বনাম তৃণমূলের। এখানে তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারবেন না গেরুয়া শিবিরের আদিত্য মৌলিক।

বড়ঞা: অধীর চৌধুরীর গড় হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন প্রতিমা রজক। এবার তাঁকে প্রার্থী করেনি দল। বদলে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন অধীর চৌধুরী ঘনিষ্ঠ শিলাদিত্য হালদার। লোকসভা ভোটেও এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শিক্ষক জীবনকৃষ্ণ সাহা। লড়াই এই দু’জনের মধ্যেই। পাল্লা ভারী অবশ্যই কংগ্রেসের। নির্বাচনের কোনও ফ্যাক্টর নন বিজেপি প্রার্থী অমিয়কুমার দাস।

কান্দি: ২০১৬ সালে এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন অপূর্ব সরকার। পরে হাওয়া বদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন তিনি। এবার তিনিই তৃণমূল প্রার্থী। এলাকায় দাপট রয়েছে রাজ্যের শাসকদলের। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে। সেই নিরিখে দেখতে গেলে এগিয়ে তাঁরাই। কিন্তু লোকসভা ভোটে বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। সেই হাওয়া নিজেদের পালে ধরে রাখতে মরিয়া সংযুক্ত মোর্চা প্রার্থী করেছে সইফুল আলম খানকে। প্রচারে ঝড় তুলেছেন বিজেপি প্রার্থী গৌতম রায়ও। ফলে এই কেন্দ্রে সহজে কেউ জমি ছেড়ে দেবে না।

ভরতপুর: ভরতপুর ১ ও ভরতপুর ২ ব্লক নিয়ে তৈরি এই কেন্দ্র। রয়েছে ১৫টি পঞ্চায়েত। তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ হুমায়ুন কবীর। যদিও তিনি রেজিনগরের ভোটার। ২০১৬ সালে জয় পেয়েছিল কংগ্রেস। এবার সেই ধারা বজায় রাখতে প্রার্থী করেছেন বিদায়ী বিধায়ক কমলেশ চট্টোপাধ্যায়কে। তবে তাদের সংগঠনের খুঁটি এবার নড়বড়ে। এলাকায় প্রভাব ফেলতে পারছে না বিজেপি। তাঁদের প্রার্থী ইমনকল্যাণ মুখোপাধ্যায় প্রচারেও তেমন ঝড় তুলতে পারেনি। ফলে কংগ্রেস-তৃণমূলের লড়াইয়ে পাল্লা ভারী ঘাসফুল শিবিরের।

রেজিনগর: কংগ্রেসের গড় ছিল এই এলাকা। কিন্তু পরপর দুই প্রভাবশালী নেতা হুমায়ুন কবীর এবং রবিউল আলম চৌধুরীর দলত্যাগের জেরে ধাক্কা খেয়েছে কংগ্রেসের সংগঠন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন রবিউল আলম চৌধুরী। এবার তিনি শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থী। তাঁর মূল লড়াই সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কাফিরুদ্দিন শেখের সঙ্গে। লড়াইয়ের ময়দানে বিজেপির অরবিন্দ বিশ্বাস থাকলেও ফ্যাক্টর নন তিনি। এই কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়কের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে রবিউল আলম চৌধুরীর। আর এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জয়ের পথে কাঁটা বিছোতে পারে রবিউল আলম চৌধুরীর। এমনটাই আশঙ্কা করছেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। তবে দলের সার্বিক সংগঠন ও উন্নয়নকে হাতিয়ার করে জয় পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল শিবির।

বেলডাঙা: মুর্শিদাবাদের যে গুটিকয়েক আসনে এখনও অধীর চৌধুরীর প্রভাব রয়েছে তার মধ্যে বেলডাঙা অন্যতম। তাঁর ক্যারিশমার উপর ভরসা করেই নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে চাইছেন সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর শেখ সাইফুজ্জমান। পালটা দলীয় সংগঠন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে মন্ত্র করে জিততে চাইছেন তৃণমূল প্রার্থী হাসানুজ্জমান শেখ। আর ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটির ফসল তুলতে মরিয়া বিজেপির সুমিত ঘোষ। তবে সামগ্রিকভাবে বাকি দু’জনের তুলনায় সামান্য এগিয়ে কংগ্রেস।

বহরমপুর: অধীর চৌধুরীর গড়। গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে বিপুল লিড পেয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীররঞ্জন চৌধুরী। তৃণমূলকে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। এবার বিধানসভা ভোটেও বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থীর দ্বিতীয় হওয়ার লড়াই। ধারে ও ভারে, জনসংযোগে বাকিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তী। গতবারও বিধায়ক ছিলেন তিনি।

হরিহরপাড়া: সিপিএমের শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল এই কেন্দ্র। রাজ্যে পালাবদলের পর নিয়ামত শেখের হাত ধরে কেন্দ্রটি দখল করে তৃণমূল। এবারও তিনি রাজ্যের শাসকদলের প্রার্থী। তবে এবার বাম-কংগ্রেসের জোট হওয়ায় কিছুটা হলেও চাপে তিনি। সংযুক্ত মোর্চার এই কেন্দ্রের প্রার্থী অধীর ঘনিষ্ঠ মীর আলমগীর পলাশ। গত বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেসের জোট না হওয়ার সুবিধা তুলেছিল তৃণমূল। এবার জোট হওয়ায় অঙ্কটা অন্যরকম। লড়াইয়ের ময়দানে থাকলেও বড় ফ্যাক্টর হবেন না বিজেপি প্রার্থী তন্ময় বিশ্বাস।

নওদা: জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খানের খাস তালুক এই এলাকা। তবে রাজ্যের শাসকদল ছেড়ে সদ্য বেরিয়ে গিয়েছেন দাপুটে নেতা মোশারফ হোসেন মণ্ডল (মধু)। তাতেই ধাক্কা খেয়েছে ঘাসফুল শিবির। এদিকে সেই দলত্যাগী নেতাকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তৃণমূলের শাহিনা মমতাজ বেগম। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন অনুপম মণ্ডল।ফলে এই কেন্দ্রে তৃণমূল বনাম কংগ্রেসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

ডোমকল: প্রবল পরিবর্তনের হাওয়ার মাঝেই এই কেন্দ্রে জয় পেয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী আনিসুর রহমান। তিনি গত ন’বারের বিধায়ক। লোকসভা নির্বাচনে আবার এগিয়ে ছিল তৃণমূল।সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী জাফিকুল ইসলাম।রাজ্যে শাসকদলের উন্নয়নকে হাতিয়ার করে লড়াই করছেন তিনি। ময়দানে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী রুবিয়া খাতুনও।তবে কংগ্রেস ও বাম একসঙ্গে লড়াই করায় এই আসনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সংযুক্ত মোর্চা।

জলঙ্গি: গত বিধানসভা ভোটে জয় পেয়েছিলেন বাম প্রার্থী। আবার উনিশের লোকসভায় এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এবার সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হয়েছেন সাইফুল ইসলাম মোল্লা। তৃণমূল প্রার্থী করেছে আবদুর রজ্জাককে। জোটের ভোট অঙ্কের নিরিখে তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে সংযুক্ত মোর্চা। আবার এই কেন্দ্রে ৩৩ হাজারের কিছু বেশি ভোটার হিন্দু। ওয়াকিবহার মহল বলছে, তাঁদের মধ্যে ‘গেরুয়া’ হাওয়া বইছে। সংযুক্ত মোর্চা ও তৃণমূল প্রার্থীর মধ্যে সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটি হলে ম্যাজিক দেখাতে পারে গেরুয়া শিবিরও।

[আরও পড়ুন: তৃণমূলের পতাকা ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে সুতিতে তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের, দেখা নেই পুলিশ-বাহিনীর!]

কলকাতা

চৌরঙ্গি: তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। দল তৈরির পর থেকে এই কেন্দ্রে কখনও হারেনি তৃণমূল। এই কেন্দ্রে প্রায় ৩৫ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার। উর্দুভাষী মুসলিমের সংখ্যা বেশি। আবার প্রায় ৩০ শতাংশ অবাঙালি ভোট। তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করছেন নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সুদীপ-নয়না দম্পতির দাপট। ফলে এলাকাবাসীর সঙ্গে তাঁদের গভীর যোগাযোগ। লোকসভায়ও বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তৃণমূলের মাথাব্যথা অবাঙালি ভোট, গেরুয়া শিবিরের প্রতি চোরা হাওয়া এবং দলবদল। রাজনৈতিক মহল বলছে, বামেদের ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপিতে গিয়েছে। যা নিয়ে সামান্য চিন্তায় ঘাসফুল শিবির। এদিকে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে সন্তোষ পাঠককে। তিনি অবাঙালি হওয়ায় বিজেপির ভোটব্যাংকে থাবা বসাতে পারেন তিনি। যার সুবিধা পাবে তৃণমূল। ফলে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়।

এন্টালি: এই কেন্দ্রে বিরাট সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোটার। রয়েছেন কলোনির বাসিন্দা। তাঁদের উন্নয়নে প্রচুর কাজ করেছে রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুরসভা। তৃণমূল প্রার্থী করেছে স্বর্ণকমল সাহাকে। তবে এই কেন্দ্রের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তোলাবাজি, দুর্নীতি, অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। যা চিন্তা বাড়িয়েছে ঘাসফুল শিবিরের। বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। এলাকায় পরিচিত মুখ, লড়াকু নেত্রী। লড়াইয়ে রয়েছেন আইএসএফ প্রার্থী ড. মহম্মদ ইকবাল আলম। ‘সত্যি সত্যি’ যদি বামেরা আইএসএফ প্রার্থীর জন্য বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট চায়, তাহলে বামমনস্ক সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব পড়তে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তিন পক্ষই।

বেলেঘাটা: এলাকার বিধায়ক পরেশ পাল সারা বছর আমজনতার পাশে থাকেন। তবে তাঁর চিন্তা বাড়িয়েছে কাউন্সিলরদের প্রতি আমজনতার ক্ষোভ। কাউন্সিলরদের দুর্ব্যবহার, দুর্নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। এই এলাকায় প্রচুর পূর্ববঙ্গীয় ভোটার রয়েছে। তাঁদের মধ্যে মেরুকরণের রাজনীতি করছে বিজেপি। আবার ভোটারদের একাংশের উপর মতুয়াদের প্রভাব রয়েছে। এই ফ্যাক্টরগুলিকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। তবে দলীয় প্রার্থী কাশীনাথ বিশ্বাস। এলাকায় তেমন পরিচিত মুখ নন। ফ্যাক্টর হবেন না সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী রাজীব বিশ্বাসও। তবে সরকারি পরিষেবা, ভাবমূর্তির উপর ভরসা করে সহজ জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী পরেশ পাল।

জোড়াসাঁকো: এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মীনাদেবী পুরোহিত কলকাতার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র। ২৫ বছরের কাউন্সিলর। এলাকায় কাজ করেছেন তিনি, পরিচিত মুখ। পরিবারেরও পরিচিতি রয়েছে। রয়েছে বিজেপির দলীয় সংগঠনও। তৃণমূল সূত্রে খবর, এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক স্মিতা বকসির বিরুদ্ধে দলেরই একাংশের ক্ষোভ ছিল। কার্যত তাই এবার তাঁকে প্রার্থী করেনি দল। বদলে টিকিট পেয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ বিবেক গুপ্ত। তিনি অবাঙালি হওয়ায় বিজেপির ভরসাস্থল অবাঙালি ভোটব্যাংকে থাবা বসাতে পারেন বলে আশা ঘাসফুল শিবিরের। দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের একটা অংশকে প্রচারে সেভাবে দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, উনিশের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তাই গেরুয়া শিবিরের দাবি, কলকাতার এই আসনে তাঁদের জয় নিশ্চিত। তাজমল খানকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। তিনি এলাকার মুসলিম ভোটব্যাংকে থাবা বসাতে পারেন বলে আশঙ্কা।

শ্যামপুকুর: এই কেন্দ্রে এখনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজিত পাঁজার প্রভাব বর্তমান। তাঁর আমলেই তৈরি হয়েছিল সংগঠন। বর্তমান বিধায়ক শশী পাঁজার ভরসা শ্বশুরমশাইয়ের সেই সাংগঠনিক পরিকাঠামো।পাশাপাশি মন্ত্রী হিসেবে প্রচুর কাজ করেছেন তিনি। সেই উন্নয়নকে মন্ত্র করেই ভোটের ময়দানে লড়াই করছেন তৃণমূল প্রার্থী। তিনি এখন করোনা আক্রান্ত।এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। এই কেন্দ্রে বেশিরভাগই হিন্দু ভোটার। তাঁদের প্রভাবিত করছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের পর থেকে সংগঠন মজবুত করেছে বিজেপি। ফলে এই কেন্দ্রে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। জয়ের ব্যবধান খুব বেশি হবে না।

মানিকতলা: কাউন্সিলরদের সঙ্গে বিধায়ক সাধন পাণ্ডের সারা বছরে লড়াই প্রভাব ফেলতে পারে একুশের ভোটে। সাধন পাণ্ডের গোষ্ঠীর সঙ্গে কাউন্সিলরদের গোষ্ঠীর সংঘর্ষ ঘটেছে প্রকাশ্যে। ভোটবাক্সে এই লড়াইয়ের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। গতবারের বিধায়কই এবার তৃণমূল প্রার্থী। বিপরীতে লড়াই করছেন বিজেপির কল্যাণ চৌবে। তিনি গত লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। এই কেন্দ্রে প্রচুর বনেদি, ফুটবলপ্রেমী ভোটারের বাস। কল্যাণ চৌবে ময়দানের সেই আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছেন। তিনি ময়দানের প্রাক্তন ফুটবলার। অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তৃণমূল প্রার্থী। বাবার হয়ে প্রচার সারছেন মেয়ে শ্রেয়া পাণ্ডে। ফলে এই কেন্দ্রে লড়াইটা বেশ হাড্ডাহাড্ডি। ময়দানে থাকলেও তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারবেন না সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী রূপা বাগচি।

কাশীপুর-বেলগাছিয়া: এই বিধানসভায় ৩২-৩৩ শতাংশ বস্‌তিবাসী। ১৭-১৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার। ১, ২ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষের বাস। আবার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবাঙালি ভোটারদের বাস। এই ওয়ার্ডে লোকসভা ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তবে অতীন ঘোষকে প্রার্থী করতেই তৃণমূল কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। প্রশাসনিক দক্ষতা প্রশংসনীয়। ভাবমূর্তিও স্বচ্ছ। জনসংযোগও দুরন্ত। কাজের মানুষ হিসেবে পরিচিত। গতবারের বিধায়ক মালা সাহাকে নিয়ে ক্ষোভ ছিল। প্রার্থী বদল হওয়ায় এবার সেই ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছে। দুয়ারে-দুয়ারে প্রচার করে ঝড় তুলেছেন তিনি। ফলে এই কেন্দ্রে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। উলটোদিকে বিজেপির প্রার্থী শিবাজী সিংহরায় প্রবীণ ব্যক্তি। সংগঠন নেই তেমন। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাও শূন্য। সংযুক্ত মোর্চার নতুন মুখ প্রতীপ দাশগুপ্ত ভোটে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবেন না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

বীরভূম

দুবরাজপুর: ২০১৬ সালে বিধানসভার দখল নিয়েছিল তৃণমূল। তবে পাশা উলটে উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বেশকিছুটা এগিয়ে যায় বিজেপি। সেই ধারা বজায় রেখে একুশের ভোটে জয় পেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। প্রার্থী করেছে অনুপ সাহাকে। তাঁর বিপরীতে রয়েছেন তৃণমূলের দেবব্রত সাহা। টিকিট পাননি গতবারের বিধায়ক। প্রথমে ঘাসফুল শিবির এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিলেন অসীমা ধীবরকে। পরে তাঁকে বদলে দেবব্রত সাহাকে প্রার্থী করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে। উপরন্তু এবারের প্রার্থীকে ঘিরে দলের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে। কারণ তিনি বাম ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা। তাঁকে ঘিরে দলের অন্দরে উদাসীনতা রয়েছে। বাম প্রার্থী বিজয় বাগদি গত ছ’বার জয়ী হয়েছে। তবে প্রবীণ প্রার্থী বর্তমানে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছেন। ‘বহিরাগত’ বিজেপি প্রার্থীকে ঘিরেও দলে ক্ষোভ ছিল। তবে শাসকদলের ‘বঞ্চনা’ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সেই নিরিখে সামান্য হলেও এগিয়ে বিজেপি।

সিউড়ি: গত বিধানসভা ভোটে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। উনিশে সেই অঙ্ক উলটে দিয়ে এগিয়ে যান বিজেপি প্রার্থী। এবার সেই ধারা ধরে রাখতে এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ভূমিপুত্র। ভূমিপুত্র চঞ্চল চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। তৃণমূল প্রার্থী করেছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীকে। তিনি ভূমিপুত্র নন, বোলপুরের বাসিন্দা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত দশ বছরে সদর সিউড়ির কোনও উন্নতি হয়নি। অভিযোগ রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা নিয়েও। এই দুই ইস্যুতে বেকায়দায় তৃণমূল। উপরন্তু গতবারের বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন বহিরাগত। দাবি করেছিলেন, ভোট জিতে এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি বলেই দাবি এলাকার মানুষের। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভকে সঙ্গী করে জয়ের আশায় বুক বাঁধছেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়।

বোলপুর: ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। তবে প্রবল বিজেপি হাওয়ার মধ্যেও উনিশের লোকসভা ভোটে অনুব্রতর গড়ে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। বোলপুর শহরে প্রায় ১০ হাজার ভোটে লিড পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ইলামবাজার এবং পাড়ুই সংখ্যালঘু হওয়ার জন্য ওই এলাকায় এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এবার নিজেদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে ঘাসফুল শিবির প্রার্থী করেছে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে। গতবারও জয়ী হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে চিকিৎসক অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তাঁরা এবার বোলপুরের মাটিতে পদ্ম ফোটাতে মরিয়া। তাই একুশের দ্বিমুখী লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

নানুর: ২০১৬ সালে তৃণমূলকে হারিয়ে নানুরের দখল নিয়েছিল সিপিএম। জিতেছিলেন শ্যামলী প্রধান। এবারও তাঁকে প্রার্থী করেছে সংযুক্ত মোর্চা। যদিও উনিশের লোকসভা ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এবারও সেই জয়ের ধারা বজায় রাখতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। প্রার্থী করেছে বিধানচন্দ্র মাঝিকে। এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে এই এলাকায় তৃণমূলের অন্দরে তুমুল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল। গত কয়েক বছরে সেই দ্বন্দ্ব অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এনেছে। সংগঠন শক্তপোক্ত করেছে গেরুয়া শিবির। ফলে এবার লড়াই হবে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে।

লাভপুর: ২০১৬ সালে মণিরুল ইসলাম তৃণমূলের বিধায়ক পদে বসেন৷ দ্বিতীয় বারের জন্য নির্বাচিত হন তিনি। এবার তাঁকে প্রার্থী করেনি দল। প্রার্থী হয়েছেন অভিজিৎ সিংহ। এই এলাকায় ৩৫ শতাংশ মুসলিম। আর তাই এই আসনে তৃণমূলের জেতার সম্ভাবনা প্রবল। উনিশের লোকসভাতেও এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ মণ্ডল। লড়াইয়ে রয়েছেন সংযুক্ত মোর্চার সাইফুল ইসলাম মোল্লা। তবে লড়াইয়ে তারা বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

সাঁইথিয়া: ২০১৬ সালের বিধায়ক নিলাবতী সাহাকে এবারও প্রার্থী করেছে শাসকদল। উনিশের লোকসভা ভোটে অল্প ব্যবধানে হলেও এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এবারও সেই জয়ের ধারা বজায় রাখতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। বিজেপির প্রিয়া সাহার প্রার্থী পদ নিয়ে দলের অন্দরে অসন্তোষ রয়েছে। অভিযোগ, তাঁকে হারাতে সক্রিয় হয়েছে দলেরই একাংশ। প্রার্থীর সঙ্গে দলীয় কর্মীদেরও সদ্ভাব নেই বলেই অভিযোগ। এলাকার উন্নয়নকে হাতিয়ার করে নিজের জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল প্রার্থী। সংযুক্ত মোর্চার তরফে আরএসপির তপন হোড়কে প্রার্থী করা হলেও তা খুব একটা প্রভাব ফেলবে না বলেই দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।

ময়ূরেশ্বর: গতবারের বিধায়ক অভিজিৎ রায়কেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে লড়াই করছেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল। শেষ মুহূর্তে এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চা প্রার্থী করেছে সিপিএমের শিবনাথ পালকে। মনে করা হয়েছিল, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী ভোট কাটবে। কিন্তু শেষ মুহুর্তে ‘দুর্বল’ প্রার্থী দেওয়ায় সেই অঙ্ক তেমন একটা কাজ করবে না বলেই ধারণা। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ভোট কাটাকাটির অঙ্ক কার্যকর হলে সহজ জয় পেত বিজেপি। কিন্তু তা এখন হওয়ার নয়। তবে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের একাংশের মনে ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে পারলে ময়ূরেশ্বরে পদ্মফুল ফুটতেই পারে।

রামপুরহাট: গত পাঁচবারের বিধায়ক ডা. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কেই এবার টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। যদিও লোকসভা নির্বাচনে শহরাঞ্চলে বিপুল ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। আশিসবাবুর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজেপির শুভাশিস চৌধুরী। তিনি পাঁচবারের কাউন্সিলর। এলাকাবাসী বলছে, বিধানসভার লড়াই এসে দাঁড়িয়েছে হাটতলায়। কারণ, বিধানসভা ভোটে এই ওয়ার্ড থেকে লিড পান তৃণমূল প্রার্থী। আবার পুরসভা ভোটে এগিয়ে থাকেন বিজেপি প্রার্থী। শহরাঞ্চলের ভোট যদি তৃণমূলের ঝুলিতে না যায় তাহলে শুভাশিসবাবুর মুখের হাসি চওড়া হতে পারে। যদিও পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ আশিসবাবুর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, উন্নয়নের উপর ভর করে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল।

হাসন: গতবারের কংগ্রেস বিধায়ক মিলটন রশিদকেই প্রার্থী করেছে সংযুক্ত মোর্চা। রাজ্যের অন্যতম সক্রিয় বিধায়ক। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী সিউড়ির বিদায়ী বিধায়ক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়। তিনি পেশায় চিকিৎসক। এই এলাকায় তাঁর কর্মজীবনের শুরু। ফলে এলাকাবাসীর সঙ্গে তাঁর ভাল যোগাযোগ রয়েছে। লোকসভায় এগিয়েছিল তৃণমূল। লড়াইটা দ্বিমুখী। মিলটন রশিদ বনাম অশোক চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজেপির নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তারাপীঠের পান্ডা। পরিচিত মুখ। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হলে এবং তারাপীঠের অধিকাংশ ভোটার নিথিলবাবুক ভোট দিলে, এই কেন্দ্রে চমক দিতে পারে বিজেপি। যদিও এলাকার মানুষ চাইছে ক্ষমতায় ফিরুক কংগ্রেস প্রার্থী মিলটন রশিদই।

নলহাটি: প্রাক্তন বিধায়ক মইনউদ্দিন সামশকে তৃণমূল প্রার্থী না করায় তিনি এবার নির্দল হয়ে লড়ছেন। জোড়াফুল শিবিরের টিকিটে লড়ছেন রাজেন্দ্র প্রসাদ সিং। তিনি নলহাটির পুরপ্রধান পাশাপাশি এলাকার পরিচিত মুখ। সংখ্যালঘুদের উপর প্রভাব রয়েছে মইনউদ্দিন সামশেরও। সংযুক্ত মোর্চা প্রার্থী করেছে ফরোয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়কে। তিনিও এই এলাকায় তিনবারের বিধায়ক। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির তাপসকুমার যাদব। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় মইনউদ্দিন সামশ ভোট কাটলে বিপাকে পড়তে পারেন তৃণমূল প্রার্থী। সেক্ষেত্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর দিকে পাল্লা ভারী হতে পারে।

মুরারই: সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী মোতাফার হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেন তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করছেন। গতবারও কেন্দ্রটি ছিল তৃণমূলের দখলে। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছেন বিজেপির দেবাশিস রায় এবং কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন মহম্মদ আসিফ ইকবাল। লোকসভায় এই কেন্দ্র থেকে বিরাট লিড পেয়েছিল তৃণমূল। এবারও সেই ধারা বজায় রাখতে মরিয়া তৃণমূল। উন্নয়ন, ব্যক্তিগত স্বচ্ছতার উপর নির্ভর করে এই কেন্দ্রে জয় কার্যত নিশ্চিত তৃণমূলের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement