সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলার দু’দফার নির্বাচন মিটেছে। তৃতীয় দফার ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলির ৩১টি আসনে ভোটগ্রহণ (WB Assembly Election 2021)। তিন জেলাই তৃণমূলের গড় হিসেবে পরিচিত। তবে লোকসভা নির্বাচনে বেশকিছু আসনে বিজেপির অনুকূলে চোরাস্রোত বয়েছে। তাই একুশের নির্বাচন সবপক্ষের কাছেই ‘অ্যাসিড টেস্ট’। সব পক্ষই একে অপরকে কড়া টক্কর দিতে কোমর বেঁধে তৈরি। কোন আসনে এগিয়ে কে, কে-ই বা কাকে কিস্তিমাত দেবে, তৃতীয় দফা নির্বাচনের আগে কী বলছে গ্রাউন্ড রিপোর্ট?
দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বাসন্তী: এলাকায় বিজেপির প্রভাব রয়েছে। ভোট কাটাকাটি হতে পারে তৃণমূল ও আইএসএফের মধ্যে। সেই অঙ্কে কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজ পেতে পারে বিজেপি। তবে লড়াই মোটেও সহজ নয়।
কুলতলি: এই কেন্দ্রে এসইউসিআইয়ের সংগঠন মজবুত। মানুষের আস্থা বাড়ছে তাদের উপর। ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি চতুর্মুখী লড়াই হতে চলেছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
কুলপি: এই এলাকা তৃণমূলের গড় হিসেবে পরিচিত। বিজেপির সংগঠন নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে লোকসভা ভোট সবক্ষেত্রেই এগিয়ে তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট কাটতে পারে আইএসএফ প্রার্থী। ভোট কাটলে লাভ বিজেপির। পীরজাদার দলের ভোট কাটাকাটির অঙ্কের উপর ভরসা করে আশায় বুক বাঁধছে গেরুয়া শিবির। তবে সেই কাটাকুটিতে কতটা লাভ হয়, 5তা ২ মে-এর আগে বোঝা যাবে না।
রায়দিঘি: তৃণমূলের প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। তবে তাঁকে প্রার্থী না করে সেই পরিস্থিতি একটু হলেও সামাল দিতে পেরেছে তৃণমূল। তবে ঘাসফুল শিবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি কাঁটাকে কাজে লাগাতে চাইছেন সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। আমফানের সময় সুন্দরবনের মানুষের পাশে ছিলেন তিনি। তাঁর ভাবমূর্তিকে ভরসা করেই আশায় বুক বাঁধছে বামেরা। অন্যদিকে প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক সত্য বাপুলির ছেলে শান্তনু বাপুলি। তিনি আগে তৃণমূলে ছিলেন। এবার বিজেপি প্রার্থী। ভোটের মুখে দলবদলটা মোটেও ভালভাবে নিচ্ছে না মানুষ। গেরুয়া শিবিরেও ক্ষোভ রয়েছে। এই ক্ষোভের ফসল নিজের ঘরে তুলতে পারে তৃণমূল। তবে ত্রিমুখী লড়াইটা বেশ কঠিন।
মন্দিরবাজার: বিজেপির প্রার্থীকে নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে। বেশকিছু এলাকায় তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। আবার আইএসএফ প্রার্থী বহিরাগত। ফলে তৃণমূল বনাম বিজেপির দ্বিমুখী লড়াই এই কেন্দ্রে।
জয়নগর: এই কেন্দ্রে এসইউসিআইয়ের সংগঠন মজবুত। মানুষের আস্থা রয়েছে তাদের উপর। যেন তেন প্রকারেণ এই আসন ফেরত পেতে চাইছে তারা। ফলে এই কেন্দ্রেও লড়াই চতুর্মুখী হতে চলেছে।
বারুইপুর পূর্ব: বারুইপুর পূর্ব কেন্দ্রে এবার তৃণমূলের প্রার্থী এলাকার যুবনেতা বিভাস সরদার। কাউন্সিলর হিসাবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন। গতবারের জয়ী নির্মল মণ্ডলকে এবার বয়সজনিত কারণে প্রার্থী করেনি দল। অন্যদিকে, বিজেপির প্রার্থী চন্দন মণ্ডল একেবারে নতুন। বিভিন্ন জায়গায় তিনি প্রচার সারছেন নিজস্ব ভঙ্গিমায়। ইতিমধ্যেই গ্রামীণ এলাকাগুলিতে তিনি কিছুটা সাড়াও ফেলেছেন। সিপিএম প্রার্থী স্বপন নস্কর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় প্রভাব ফেলতে সচেষ্ট। আব্বাস সিদ্দিকি তাঁর হয়ে প্রচারে এসেছেন। সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটির অঙ্কে কে কিস্তিমাত করে, সেটাই এখন দেখার।
ক্যানিং পশ্চিম: এলাকায় বিজেপির সংগঠন নেই। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের উপর ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে চায় তৃণমূল। ঘাসফুল শিবিরের গড় হিসেবেই পরিচিত এই এলাকা।
ক্যানিং পূর্ব: বিজেপির সংগঠন নেই। তবে তৃণমূলকে কিছুটা লড়াই দিতে পারেন আইএসএফ প্রার্থী। ব্যবধান কমলেও তৃণমূল প্রার্থীর জয় একপ্রকার নিশ্চিত বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বারুইপুর পশ্চিম: বারুইপুর পশ্চিম বিধানসভার প্রার্থী হিসাবে গত দু’বারের বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০ বছরের তৃণমূলের খতিয়ানকে হাতিয়ার তাঁর। দেবোপম চট্টোপাধ্যায় এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। তাঁর হাতিয়ার মোদি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি। আগামী দিনে বারুইপুরকে কীভাবে নতুন করে সাজাবেন, তাও তিনি তুলে ধরছেন। অন্যদিকে লড়াইয়ে রয়েছেন সিপিএমের তরুণ তুর্কি লায়েক আলি। মূলত সংখ্যালঘু এলাকাগুলোতে প্রচারে তিনি যথেষ্ট সাড়া ফেলছেন। ফলে এই আসনেও সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটির অঙ্ক তৈরি হয়েছে। সেই অঙ্কে কে সুবিধা পাবে, তা এখনই বলা মুশকিল।
মগরাহাট পূর্ব: এই কেন্দ্রে বিজেপির একটা প্রভাব রয়েছে। ফলে তৃণমূলকে লড়াই দিতে পারেন বিজেপি প্রার্থী চন্দন মণ্ডল। ব্যবধান কমলেও তৃণমূলের জয়ের বিষয়ে আশাবাদী দলীয় কর্মীরা।
মগরাহাট পশ্চিম: আইএসএফ প্রার্থী মইদুল ইসলাম মোল্লা প্রভাব ফেলবেন বলে প্রথমে মনে করা হয়েছিল। বেকার যুবক-যুবতীদের টানতে পারবে বলে মনে ধরা হচ্ছিল। এখানে তৃণমূলেরও সংখ্যালঘু প্রার্থী। ফলে দু’জনের মধ্যে ভোট কাটাকাটি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতার জেরে লড়াইতেই নেই বিজেপি।
ডায়মন্ড হারবার: ২০১১ ও ২০১৬ পরপর দু’বার জিতে তৃণমূলের বিধায়ক হন দীপক কুমার হালদার। সেই দীপকবাবুই এবার বিজেপি প্রার্থী। তাঁর নাম ঘোষণার পরই বিজেপির মধ্যে তীব্র হয় অন্তর্দ্বন্দ্ব। রাজ্য নেতৃত্বের এহেন পদক্ষেপের পর লোকচক্ষে অন্তত বিজেপি-র আদি ও নব্য এখন একজোট। যদিও আদি বিজেপি নেতাদের মনে এখনও ক্ষোভ রয়েছে। ফলে তাঁদের পকেটে থাকা ভোট কতটা বিজেপি-র ভোটবাক্সে পড়বে তা হলফ করে বলা মুশকিল। তবে ডায়মন্ড হারবারের মানুষের চোখে দীপক হালদারের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। জনসংযোগ তাঁর দুর্দান্ত। তৃণমূল এবার প্রার্থী করেছে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও একসময়ের ভাইস-চেয়ারম্যান পান্নালাল হালদারকে। তাঁর জনসংযোগও নেহাত কম নয়। এদিকে সিপিএমের তরুণ প্রার্থী প্রতীক উর রহমান। তাঁর রাজনৈতিক পরিচিতি যথেষ্ট। ফলে এই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি ত্রিমুখী লড়াই।
ফলতা: এই কেন্দ্র থেকে তিনবারের বিধায়ক ছিলেন তমোনাশ ঘোষ। তাঁর মৃত্যুর পর এবার তৃণমূল প্রার্থী শংকরকুমার নস্কর। এই কেন্দ্রে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই শাসকদলে। একেবারে শেষ মুহূর্তে বিজেপি প্রার্থী করেছে বিধান পাড়ুইকে। গত বিধানসভা ভোটে তিনি সিপিএম প্রার্থী ছিলেন। ফলে প্রার্থী হিসাবে তাঁকে মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের বড় অংশ। সংযুক্ত মোর্চা এখানে প্রার্থী করেছে কংগ্রেসের আবদুর রেজ্জাক মোল্লাকে। ধারে-ভারে তাই এই কেন্দ্রে এবারও এগিয়ে তৃণমূলই।
সাতগাছিয়া: এই কেন্দ্রটি তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। ২০০১-২০১৬ পর্যন্ত চারবারই এই কেন্দ্রে বিধায়ক হন সোনালী গুহ। দল এবার তাঁকে প্রার্থী না করায় তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তবে এই কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী তিনি নন, প্রার্থী হয়েছেন আমতলার কল্যাণনগরের বাসিন্দা চন্দন পাল। আদি বিজেপি-র একজন অত্যন্ত সক্রিয় কর্মী তিনি। তৃণমূল প্রার্থী মোহনচন্দ্র নস্করের সঙ্গে তাঁর জোর লড়াই হবে। সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী গৌতম পাল। তাল ঠুকছেন তিনিও। সোনালী গুহর অনুপস্থিতি এবার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই নিশ্চিত তৃণমূল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, সোনালী গুহ তো বিধায়ক হয়েও এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁকে প্রার্থী না করায় ভালই হয়েছে। ইঙ্গিতটা পরিষ্কার। ২০১৬-র বিধানসভা হোক বা উনিশের লোকসভা, দুটি ভোটেই ব্যবধান বাড়িয়েছে তৃণমূল। এবারও সেই ধারা বজায় থাকে কিনা সেটাই দেখার।
বিষ্ণুপুর: ২০১১ ও ২০১৬ পরপর দু’বারই জিতে তৃণমূল বিধায়ক হন দিলীপ মণ্ডল। এবারও ওই আসনে তিনিই প্রার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি-র অগ্নিশ্বর নস্কর। তাঁর প্রার্থীপদ নিয়েও তুঙ্গে ছিল বিজেপি-র ঘরোয়া কোন্দল। অন্তর্ঘাত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করছে বিজেপি-র একটা বড় অংশ। সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী ঝুমা কয়াল। তবে তিন প্রার্থীর মধ্যে তৃণমূলের দিলীপ মণ্ডলের দিকেই পাল্লা ভারী। ক্রমেই জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েছেন তিনি। বিধানসভার পর লোকসভা নির্বাচনেও ব্যবধান বাড়িয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এবার এই ধারা বজায় রাখতে পারবে বলে আশা প্রার্থীর।
[আরও পড়ুন : ‘বিজেপি শ্যামাপোকার মতো, ভোটের পর দেখা মিলবে না’, কটাক্ষ অভিষেকের]
হাওড়া
উলুবেড়িয়া উত্তর: ২০১১ সাল থেকে তৃণমূলের দখলে এই কেন্দ্র। লোকসভা নির্বাচনেও এই কেন্দ্র থেকে লিড পেয়েছিল তৃণমূল। তবে ব্যবধান সামান্য কমেছিল। তৃণমূলের উন্নয়নের উপর ভরসা করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার চেষ্টা করছেন প্রার্থী নির্মল মাজি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আমজনতার মধ্যে সামান্য ক্ষোভ রয়েছে। এলাকায় বিজেপি নিজের সংগঠন তৈরি করেছে। তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে আমজনতার ভোট নিজের ঝুলিতে টানতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তবে লড়াই সহজ নয়। দু’পক্ষই জেতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।
উলুবেড়িয়া দক্ষিণ: এগারো থেকেই তৃণমূলের দখলে এই কেন্দ্র। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে ভোট বাড়িয়েছে ঘাসফুল শিবির। তৃণমূলের সংগঠন মজবুত। ফলে তৃণমূল প্রার্থী পুলক রায়কে লড়াই দেওয়া বেশ কঠিন বিজেপি প্রার্থী পাপিয়া অধিকারী এবং আইএসএফ প্রার্থী কুতুবউদ্দিন আহমেদের।
শ্যামপুর: এই এলাকা তৃণমূলের গড়। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ব্যবধান বাড়িয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ফলে এই কেন্দ্রে কঠিন দ্বিমুখী লড়াই হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
বাগনান: লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে বিশাল ব্যবধান পেয়েছিল তৃণমূল। তাঁদের সংগঠন মজবুত। অন্যদিকে বিজেপির জনপ্রিয়তা তেমন একটা নয়। ফলে লড়াই হলেও জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ঘাসফুল শিবির।
আমতা: এই কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দখলে। তবে লোকসভা নির্বাচনে একক লড়াই করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ে হাত শিবির। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। এবার সংযুক্ত মোর্চার শরিক হিসেবে আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া কংগ্রেস। আবার লোকসভা নির্বাচনের ফল ধরে রাখতে কোমর বেঁধেছে তৃণমূলও। এই দুই দলের ভোট কাটাকাটির অঙ্কে বেরিয়ে যেতে চায় বিজেপি। ফলে এই আসনের লড়াই বেশ আকর্ষণীয় হতে চলেছে।
উদয়নারায়ণপুর: লোকসভায় তৃণমূলকে বড় অঙ্কের লিড দিয়েছিল এই কেন্দ্র। এই আসনে ৯০ শতাংশ তফসিলি ভোট। কিছু অংশে তৃণমূল বিরোধী চোরাস্রোত রয়েছে। তবে এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর সমীর পাঁজার জনসংযোগ খুব ভাল। আমফান, করোনার সময় প্রচুর কাজ করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় তিনি সেই চোরাস্রোত কতটা আটকাতে পারেন, সেটাই দেখার। তবে বিজেপি প্রার্থী বারবার দলবদল করায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। সব মিলিয়ে দ্বিমুখী কঠিন লড়া্ই এই কেন্দ্রে।
জগৎবল্লভপুর: এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট ৩০-৩৫ শতাংশ। ভোট টানতে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। তৃণমূলের প্রার্থী ভূমিপুত্র সীতানাথ ঘোষ। তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। তবে তাঁর জয়ের পথে কাঁটা দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আইএসএফ-তৃণমূলের ভোট কাটাকাটির ফায়দা তুলতে মরিয়া বিজেপিও। ফলে ত্রিমুথী কঠিন লড়াই হাওড়ার এই কেন্দ্রেরও।
[আরও পড়ুন : এটা ইলেকশন নাকি বিজেপির সিলেকশন! কার প্রমোশন হচ্ছে নজর রাখছি: মমতা]
হুগলি
জাঙ্গিপাড়া: ২০১৬ সালে এই আসনে জিতেছিল তৃণমূল। তবে লোকসভা ভোটে এই বিধানসভায় ভোটের ব্যবধান কমেছিল ঘাসফুল শিবিরের। ব্যাপক লড়াই দিয়েছিল বিজেপি। এবার প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটা অংশের ভোট কাটতে পারেন তিনি। তবে মূলত লড়াই তৃণমূল বনাম বিজেপির। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে দু’পক্ষের মধ্যেই।
তারকেশ্বর: বিজেপি প্রার্থী স্বপন দাশগুপ্তের সমর্থনে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরেও তারকেশ্বরের অলি-গলিতে তাঁর জনপ্রিয়তা এখনও অনেকটাই কম। তুলনায় প্রচারের দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী রমেন্দু সিংহরায়। এলাকার পরিচিত মুখ। ফলে প্রচারে এগিয়ে তিনি। সিপিএম প্রার্থীর জনপ্রিয়তাও একটা অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে ঘাসফুল ও পদ্মফুলের কঠিন লড়াইয়েও আ্যাডভান্টেজ পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তৃণমূল।
ধনেখালি: তৃণমূল প্রার্থী অসীমা পাত্রের বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভ রয়েছে। বিধায়ককে অনেক সময় কাছে না পাওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। উলটোদিকে, এই কেন্দ্রের গ্রামীণ এলাকায় বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের প্রভাব রয়েছে। সেই সূ্ত্র ধরে স্পেশ্যাল অ্যাডভান্টেজ পেতে পারেন বিজেপির তুষার মজুমদার। তবে লড়াইটা মোটেই সহজ নয়।
হরিপাল: করোনা পরিস্থিতিতে রক্তের সংকট কাটাতে গোটা এলাকা ঘুরে মহিলাদের নিয়ে রক্তদান শিবির করেছেন এবারের তৃণমূল প্রার্থী করবী মান্না। লকডাউনে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। ফলে এলাকায় ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে তাঁর। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী সমীরণ মান্না তৃণমূলে ছিলেন। দলবদল করে নব্য বিজেপি তিনি। তবে তৃণমূলে থাকাকালীন প্রচুর কাজ করেছেন সমীরণ। সেটা তাঁকে কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজ দেবে। তবে এই কেন্দ্রেও কঠিন লড়াইয়ে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী তৃণমূল।
পুরশুড়া: এই এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন মজবুত। তবে লোকসভায় ভোটে কড়া টক্কর দিয়েছিলেন বিজেপির বিমান ঘোষ। সংগঠন মজবুত করেছেন তিনি। এদিকে তৃণমূলের দিলীপ যাদব পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। বহু নিষ্ক্রিয় কর্মীদের দলে ফিরিয়েছেন। ফলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে এই কেন্দ্রে।
আরামবাগ: লোকসভার নিরিখে এই বিধানসভা কেন্দ্রে চার হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জিতেছিল তৃণমূল প্রার্থী। সংখ্যালঘু এলাকা হওয়ায় বিজেপির সংগঠন নড়বড়ে। ফলে তৃণমূলের জয় পাওয়া অনেকটাই সহজ বলেই দাবি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের।
গোঘাট: লোকসভায় এক হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। সংগঠনের নিরিখে অনেকটা এগিয়ে তাঁরা। অন্যদিকে বিজেপির এবারের প্রার্থী বিশ্বনাথ কারক আগে ফরোয়ার্ড ব্লকে ছিলেন। গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী হওয়ায় দলের অন্দরেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল। তবে এবার লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি।
খানাকুল: তৃণমূলের দখলে এই কেন্দ্র। গত বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছিল ঘাসফুল শিবির। লোকসভা ভোটেও এগিয়েছিল তৃণমূল। সংখ্যালঘু প্রধান এলাকা হওয়া সত্ত্বেও আইএসএফ প্রার্থী তেমন একটা সুবিধা করতে পারবেন না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সংগঠনের নিরিখে পিছিয়ে বিজেপিও। ফলে লড়াইটা তুলনামূলক সহজ ঘাসফুল শিবিরের।