সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বাঙালির যাবতীয় আলোচনার আঁতুরঘর রাস্তার ধারে থাকা ছোট ছোট চায়ের দোকানগুলি। নির্বাচনের (West Bengal Assembly Elections) অনেক আগে থেকেই জনমত সমীক্ষা বা নির্বাচনের পরে বুথ ফেরত সমীক্ষা সমস্ত কিছুর আঁচ পাওয়া যায় এখানেই। তাই ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে চায়ের দোকানগুলিতে ভিড় বাড়ে। পাল্লা দিয়ে বাড়ে আড্ডার আওয়াজ। অনেক সময় দুই বন্ধু একটা ইস্যু নিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফলে অনেক সময় অস্বস্তিতে পড়েন দোকানে আসা অন্যান্য মানুষ ও দোকান মালিকও। অশান্তিও যে বাধে না, তা নয়। চায়ের দোকানের পরিবেশ ভরা চৈত্রের গরমের মধ্যে রাজনৈতি আলোচনায় আরও উত্তপ্ত না হয় তার জন্য নোটিস ঝোলাতে বাধ্য হলেন দোকান মালিক। বড়শুলের ‘জেঠুর চায়ের দোকানে’ গেলেই চোখে পড়ছে সেই নোটিস।
বর্ধমান-২ ব্লকের বড়শুল পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে জেঠুর চায়ের দোকান। ষাটোর্ধ্ব স্বামী-স্ত্রী দুর্জয় ও ভারতী মণ্ডল দোকান চালান। ঘরে রয়েছে প্রতিবন্ধী ছেলে। এলাকার মানুষ ও ব্লক চত্ত্বরের অফিস কর্মীরাই এই চায়ের দোকানের খদ্দের। সকাল-সন্ধেয় এলাকার বিভিন্ন বহু মানুষ গরম চায়ে চুমুক দিতে ভিড় জমান ওই দোকানে। চলে ভোট নিয়ে আলোচনা। সেই তর্ক কখনও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। বন্ধু-বান্ধবরাই তখন হয়ে যান প্রতিপক্ষ। এই ঘটনায় যেমন দোকানের পরিবেশ নষ্ট হয়, ঠিক তেমনই শান্তিও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই জেঠুর কড়া ফরমান- “ভোটের ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই চায়ের দোকানে রাজনীতি বিষয়ক কোনও আলোচনা করা যাবে না।”
[আরও পড়ুন: দোলনা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দুই আদিবাসী কিশোরীকে গণধর্ষণ, চাঞ্চল্য বর্ধমানে]
দোকানের মালিক ভারতী মণ্ডল বলেন, “আমি আর স্বামী ভোর থেকে দোকান চালাই। বাড়িতে প্রতিবন্ধী ছেলে, গরিবের সংসারে এই দোকানই সম্বল। আমি চাই না রাজনৈতিক আলোচনা থেকে উত্তেজনা সৃষ্টি হোক। এতে আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হতে পারে।” একই দাবি দুর্জয়বাবুরও। এই পোস্টার নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। বর্ধমান উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী নিশীথ মালিক বলেন, “ভোট মানুষের। সেখানেই মানুষের উৎসাহ থাকবে এটাই স্বভাবিক। তবে, এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে অশান্তি যাতে না হয় সেটা মনে করানোর জন্যই এই উদ্যোগ বলে মনে হয়। এরমধ্যে রাজনীতি না টানাই ভাল।” সিপিএম প্রার্থী চন্ডীচরণ লেট বলেন, “ভোট নিয়ে মানুষ কতটা ভীত সন্ত্রস্ত, এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।” বিজেপি প্রার্থী রাধাকান্ত রায় বলেছেন, “শাসকদল ভোটকে প্রহসনে পরিণত করেছে। তাই মানুষ আলোচনা করতেই ভয় পাচ্ছে।”