সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: কোনওটা বয়স দেড়শোর বেশি, কোনওটা শতবর্ষ ছুঁইছুঁই। রাজ্যের তিন পুরসভা প্রথমবার বিরোধীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল শাসকদল তৃণমূল (TMC)। ২০২২-এর পুরভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর, মুর্শিদাবাদের দুই পুরসভা – বহরমপুর ও জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জে এবার ঘাসফুল ঝড়। কোন জাদুতে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দল? কেনই বা এতদিন ধরে এসব গড় অধরা ছিল রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলটি? এসব প্রশ্ন তো উঠছেই। তার উত্তরও খুঁজল বিশেষজ্ঞ মহল।
প্রথমেই আসা যাক মুর্শিদাবাদের ‘অধীর গড়’ বলে পরিচিত বহরমপুরে (Baharampur)। দেড়শো বছরের প্রাচীন পুরসভা ১৯৯৮ সাল থেকে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর (Adhir Ranjan Chowdhury)দখলে ছিল। ৩০ বছর ধরে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বহরমপুর পুরসভা। গত পুরভোটে ২৮ আসনের মধ্যে ২৬টি-তে জিতেছিল কংগ্রেস। ২টি ওয়ার্ড ছিল তৃণমূলের হাতে। কিন্তু ২০১৬ সালের শেষের দিকে কংগ্রেসের ক্ষমতাশালী কাউন্সিলররা দলবদল করেন। ফলে বোর্ডের দখল নেয় তৃণমূল। আবার ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন অধীর চৌধুরী। একুশের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে জিতেছিল বিজেপি। ফলে কংগ্রেসের ‘হাত’ দুর্বল হচ্ছিলই। আর বাইশের পুরভোটে ঘাসফুল ঝড়ে কার্যত তা ভেঙে গেল। প্রায় আড়াই দশক পর প্রথমবার ‘অধীর গড়’ ছিনিয়ে নিল তৃণমূল।
এই জেলারই আরেক পুরসভা জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ (Jiaganj-Azimganj)। তারও বয়স প্রায় শতবর্ষ। এতদিন বামদুর্গ বলে পরিচিত ছিল। পুরসভাও ছিল সিপিএমের (CPM)। ২০১৫ সালের পুরভোটেও গড় ধরে রাখতে পেরেছিল কাস্তে-হাতুড়ি-তারা। কিন্তু ২০১৬ সালে একজন বাদে সব কাউন্সিলর যোগ দেন ঘাসফুল শিবিরে। ফলে পুরসভার দখল নেয় শাসকদল। ২০২২-এর পুরভোটে নিজেদের যোগ্যতায় লড়াই করেই জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভায় তৃণমূলের বোর্ড তৈরি হতে চলেছে। এ নিয়ে পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ”সারাবছর আমরা থাকি মানুষের সঙ্গে। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটেছে পুরভোটে।
[আরও পড়ুন: ইউক্রেনে প্রাণ গেল আরও এক ভারতীয় পড়ুয়ার, যুদ্ধের আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু]
এবার আসা যাক দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর পুরসভার ফলাফলে। ১৫২ বছরের রেকর্ড ভেঙে এবার প্রথম তৃণমূলের দখলে। ইতিহাস বলে, সমাজ সংস্কারক শিবনাথ শাস্ত্রী উমেশচন্দ্র দত্ত চিকিৎসক নীলরতন সরকার, বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই পৌরসভা জয়নগর। বিপ্লবী থেকে চিকিৎসক সমাজ সংস্কারক থেকে ইতিহাসবিদ জন্মেছিলেন এই পুর এলাকায়। আর রয়েছে জয়নগরের বিখ্যাত মোয়া।
এবার সমস্ত রেকর্ড ভেঙে এবার প্রথম এই পুরসভা জয় পেল শাসকদল তৃণমূল। জেলার মধ্যে একমাত্র বিরোধীদের দখলে থাকা পুরসভাটি এবার ঘাসফুলের পতাকার নিচে এল। সবসময়ই শাসকদলের বিরুদ্ধে থাকতেই পৌরসভা। রাজ্য যখন বাম সরকারের শাসন কাল তখন এই পৌরসভা ছিল কংগ্রেসের দখলে। চেয়ারম্যান ছিলেন প্রশান্ত সরখেল। তৃণমূল জমানাতেও এর বদল ঘটাতে পারেনি। তারপর প্রশাসক বসানো হয় এই পৌরসভাতে। নতুন করে ভোটে এবার জয়ী ঘাসফুল শিবির। শাসকদলের কাছে এই পৌরসভা ছিল এবার প্রেস্টিজের লড়াই। ১৪ জন বিধায়ক জয়নগর পৌরসভার ১৪ টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব নিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করেছেন সেখানে। আর তার ফলেই বিরাট জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেস। ১৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২ টিতেই জয়ী তৃণমূল। একটিতে কংগ্রেস ও একটিতে এসইউসিআই জিতেছে।