সন্দীপ চক্রবর্তী ও শান্তনু কর: উত্তরবঙ্গে এসেই দলের জরুরি কোর কমিটির বৈঠকে বুথে বুথে নেতাদের যাওয়ার নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। স্পষ্ট বার্তাও দিলেন, দলে কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ রাখা যাবে না। দলের সব সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় করে চলতে হবে। আর সরকারের উন্নয়নের সুফল যাতে মানুষ পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে জেলার নেতাদেরই। দুয়ারে সরকার কর্মসূচিকে সফল করতে হবে, মানুষের কাছে গিয়ে এই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং কর্মসূচিতে যুক্ত করতে হবে। সোমবার বৈঠকে মমতার বার্তা এমনই। আর সেই বৈঠকে বার্তার পর ‘ক্ষুব্ধ’ নেতারাও আশ্বস্ত। সরাসরি কিছু না বললেও সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
সোমবার কলকাতা থেকে বাগডোগরা হয়ে বিকেলে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার এবিপিসি মাঠে কর্মীসভা তাঁর। তৃণমূল দল গঠনের পর জলপাইগুড়িতে এসে এখানেই প্রথম সভা করেছিলেন মমতা। আর এবারও মেদিনীপুর, রানিগঞ্জ ও বনগাঁর পর উত্তরবঙ্গে এটাই প্রথম সভা। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার কর্মীদের বার্তা দেবেন তিনি। কিন্তু তার আগেই দুই জেলায় দলের পদাধিকারীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন মমতা। ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, গৌতম দেব এবং প্রাক্তন সাংসদ, বিধায়ক ও পুর প্রশাসক, দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। মূলত জলপাইগুড়ি জেলার স্থানীয় নেতৃত্বের কিছু ক্ষোভ সামনে এসেছে। সেই কারণে কোর কমিটির বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ। ময়নাগুড়ি বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী নেতৃত্বের কয়েকজনের কাজে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহন বসুকে প্রশাসক না করায় ক্ষুব্ধ বলে জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর। অনন্তদেব বৈঠকে এলেও মোহন বসু ‘অসুস্থ’ থাকায় আসেননি।
[আরও পড়ুন: দলীয় নেতা ‘তোলাবাজ’, বিরোধিতা করে তৃণমূল ছাড়ার হুমকি বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলরের]
অনন্ত দেব বৈঠকের পর কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূল (TMC) সূত্রে খবর, মমতা যেভাবে সবাইকে ভোটের আগে মান অভিমান বা ক্ষোভ বিক্ষোভ সরিয়ে একসঙ্গে মাঠে নামতে বলেছেন তাতে আশ্বস্ত বিক্ষুব্ধরা। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দুই গোষ্ঠী গুরুং ও তামাং তৃণমূলকে সমর্থন করায় ডুয়ার্স এলাকায় কিছু কেন্দ্রে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোহন শর্মা। তবে তার আগে দলের দুই জেলার নেতৃত্বকে একজোট রাখা যে জরুরি সেটা স্পষ্ট। সে কারণেই মমতার এদিনের দুই বৈঠক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলীয় কর্মীসভায় তিনি কী বার্তা দেন সেদিকেও নজর থাকবে। এই সভার পরেই মমতা কোচবিহার যাবেন। সেখানে বিকেলেই দুটি সরকারি কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। বুধবার রাসমেলা মাঠে দলের কর্মীসভায় বক্তব্য রাখবেন। ওই জেলার ক্ষেত্রেও স্থানীয় নেতৃত্বকে সমন্বয়ের বার্তা যে দেবেন বলার অপেক্ষা রাখে না। দলের প্রবীণ নেতা মিহির গোস্বামী সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আরও দু-একজন বিধায়ক ‘বেসুরো’ গাইছেন। মমতা বার্তা দিলেই এবং একসঙ্গে সবাইকে ডাকলেই এই বিক্ষুব্ধদের মানভঞ্জন করা সম্ভব, এমনটাই বলছেন উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতারা।