বিক্রম রায়, কোচবিহার: গণতন্ত্রের উৎসব। হাত জোড় করে দুয়ারে দুয়ারে প্রার্থী। এ বলে, আমায় ভোট দিন, তো ও বলে আমায়। ভোট দিতে গিয়েছিলেন আনন্দ বর্মন। ১৮ বছরের প্রথম ভোট। ধেয়ে এল গুলি। লুটিয়ে পড়লেন যুবক। সব শেষ। কার দোষ? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মরিয়া নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু যাঁর কোল খালি হল, সেই মা? বিছানায় শুয়ে বারবার ডুকরে কেঁদে উঠছেন বাসন্তী দেবী। কখনও আবার ছেলের নাম ধরে ডেকে উঠছেন। বিশ্বাসই করতে পারছেন না, তাঁর আনন্দ আর ফিরবে না। শোকে জ্ঞান হারাচ্ছেন বারবার। আত্মীয়-পড়শি মহিলারাই ঘিরে রয়েছেন। চোখেমুখে জল দিচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই আবার প্রশ্ন, ছেলেটা কি আর ফিরবে না? কোনওদিন মা বলে ডাকবে না? সন্তানহারা মায়ের প্রশ্নের উত্তরে কী বলবেন? ভেবেই পাচ্ছেন না কেউ।
শীতলকুচির পাঠানটুলি গ্রামের টিনের বাড়িতে এখন শুধুই হাহাকার। বাড়ির পাশ দিয়ে গেলেও যেন বিষাদ গ্রাস করছে। সান্ত্বনা দিতে আসছেন অনেকেই। সকলের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকছেন আনন্দর বাবা জগদীশ বর্মন। কী বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। অভাবের সংসার। দুই ছেলেই রোজগার করত। ছোটছেলে আনন্দ। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তারপর চাষের কাজ করতেন। আর চাষের কাজ না থাকলে হায়দরাবাদে গিয়ে রাজমিস্ত্রি কিংবা শ্রমিকের কাজ করতেন। ভোটের পরও আনন্দর হায়দরাবাদে যাওয়ার কথা ছিল। জানান, তাঁর দাদা গোবিন্দ।
[আরও পড়ুন: বিশেষ কারণে বাতিল তৃণমূল সুপ্রিমোর নির্বাচনী প্রচার, স্বরূপনগরে সভা হচ্ছে না মমতার]
ভাইয়ের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না গোবিন্দ। জানান, মাস খানেক আগেই বাড়িতে ফিরেছিলেন আনন্দ। শনিবার সকালে তিনিই ভাইকে বলেছিলেন সকাল সকাল গিয়ে ভোটটা দিয়ে আসতে। দাদার কথা মেনেই পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে ৫/২৮৫ নম্বর জায়গির গোলেনাওহাটি ফিফথ প্ল্যান প্রাইমারি স্কুলের বুথে গিয়েছিলেন ১৮ বছরের যুবক। অভিযোগ, ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আনন্দ। কিন্তু তা দিতে পারেননি। তার আগেই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। সব শেষ। দোষারোপ, পালটা দোষারোপের পালা চলছেই। কিন্তু বাসন্তী দেবীর সেই হুঁশ কোথায়? তাঁর চোখের জল বাঁধই মানছে না।