ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: তিনি বরাবরই নেপথ্য নায়ক। বছরভর মাঠে, ময়দানে সভা, মিছিলে তিনিই মুখ, অথচ সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে তিনি নেই। অথবা ঘুরপথে বলা যায়, তিনি জয়রথের মূল সারথী। তিনি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal)। বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি। রবিবার, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর বীরভূমের দখল নিজের হাতেই রাখতে সক্ষম হলেন তিনি। ১১ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতে জেতার কৃতিত্ব অবশ্য তিনি দিলেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। বললেন, ”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের কোচ, উনি খেলতে জানেন, পাসও ভাল দিতে জানেন।” বীরভূমে ভোটের আগে কমিশন এবার তাঁকে নজরবন্দি করে রেখেছিল। তা নিয়েও শ্লেষের সুরে বললেন, ”আমার নাম অনুব্রত মণ্ডল। আমাকে আটকানো মুশকিল।”
পঞ্চায়েত কিংবা বিধানসভা অথবা প্রার্থী হননি কখনও। তাঁকে ওই লড়াইয়ে কখনও শামিল করেননি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু টিমের আগা থেকে গোড়া – অনুব্রতর উপর বরাবরের ভরসা তাঁর। সেই ভরসায় কখনও টাল খেতে দেননি নেত্রীর প্রিয় ‘কেষ্ট’ও। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যখন বাংলার মাটি কামড়ে গেরুয়া শিবির লড়াইয়ের অস্ত্রে শান দিয়েছে, তখনও স্রেফ মুচকি হেসে আর মেঠো ভাষায় নরমে-গরমে কয়েকটি বাক্যবাণেই বাজিমাত করেছেন। তবে এবার অনুব্রতর লড়াই শুধুই যে বিজেপির বিরুদ্ধেই ছিল, তা নয়। কমিশনের কড়া নজরদারির মধ্যেও তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। ভোটের ঠিক দিন দুই আগে তাঁকে নজরবন্দি করতে দিল্লি থেকে প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তখনও ‘কুল’ দিদির কেষ্ট। স্মিত হেসে বলেছিলেন, ”আসুক না দিল্লির লোকজন। তা সত্ত্বেও খেলা হবে। CRPF-এর পায়ে বল দিয়ে দেব প্রয়োজনে, ওরাই খেলবে।” এ কথার ভাঁজ বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি রাজনৈতিক খবরাখবর রাখা মানুষজনের।
[আরও পডুন: দিদির কাছেই রইল বাংলা, নন্দীগ্রামে জিতে বাংলার রাজনীতিতে নজির মমতার]
বোঝালেন তিনিও, ঠিক পরেরদিনই। দিল্লির প্রতিনিধিদের নজরদারি এড়িয়ে কোথায় চলে গেলেন অনুব্রত, খোঁজ খোঁজ রব উঠল। বেশ কিছুক্ষণ পর ‘কষ্ট করে কেষ্ট মিলল’ বটে। দেখা গেল, তিনি তারাপীঠে পুজোর লাইনে দাঁড়িয়ে। শ্লেষের সুরে বললেন, ”ওরা না খুঁজে পেলে আমার কী দোষ?” সে কথারই অনুরণন শোনা গেল রবিবার, ভোটের ফলপ্রকাশের পর। রাজ্যে দু’শোর উপর আসন পেয়ে যখন তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতায় ফিরছে তৃণমূল, রাঙামাটির দেশে গেরুয়া রং ফিকে করে কার্যত সবুজ ঝড়, সেখানে দাঁড়িয়ে কটাক্ষের সুরেই অনুব্রত বললেন, ”ওরা বাংলার সংস্কৃতি জানে না। বাংলার মানুষ তার জবাব দিয়েছে। খেলা হয়েছে, ফাইন খেলা হয়েছে। আমাকে দুটো নোটিস দিয়েছিল, নজরবন্দি করেছিল। তারপরেও আটকাতে পারেনি।”
[আরও পডুন: দাঁত ফোটাতে পারলেন না ‘গদ্দার’রা, দলবদলু শুভেন্দু-রাজীবদের ‘খেলা শেষ’ করল তৃণমূল]
বললেন আরও। ‘দিদি’র স্নেহধন্য ‘কেষ্ট’র কথায়, ”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের কোচ, উনি খেলতে জানেন, পাসও ভাল দিতে জানেন। ওঁর টিমের ১১ জনের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমরা জয়লাভ করেছি। বাংলার মেয়েকে অপমান করবে, বাংলা তা মেনে নেবে না। বাংলার মেয়েরা সব ভোট তৃণমূলকে দিয়েছে।” আবারও বোঝালেন, তিনি লড়াইয়ে না থেকেও তিনিই নায়ক এবং যথাযথ কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসাযোগ্য। একুশের ভোটে তাই অন্তত বীরভূমে ‘স্টার’ অনুব্রত মণ্ডল।