ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: লকডাউনের আগে পর্যন্ত সরাসরি চাষিদের থেকে মোট ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কিনেছে খাদ্য দপ্তর। লকডাউন শুরুর পর থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কিনেছে ৩ লক্ষ ৪৮৫ মেট্রিক টন। অন্নদাত্রী পোর্টালের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া চলছে। টাকাও সরাসরি অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাচ্ছে চাষিদের। যে পরিমাণ ধান কেনা হচ্ছে তাতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফ্রি রেশনের চালের জোগান সহজেই হয়ে যাবে বলে দাবি খাদ্য দপ্তরের। কিন্তু সর্ষের মধ্যে কোথাও ভূত ঢুকে আখের গোছাচ্ছে কিনা, তার হদিশ পেতে এবার চাষিদের ঘরে ঘরে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা-সহ চিঠি পাঠানো শুরু করল খাদ্যদপ্তর।
দপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, এটা আসলে ফড়ে ধরার ফাঁদ। যেসব চাষি সরকারকে ধান বিক্রি করেন, তাঁদের তালিকা দপ্তরের হাতে রয়েছে। আবার যাঁরা সরকারকে ধান বিক্রি করেছেন, তাঁরা নিজেরা সেই তথ্য রাখেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পেলেই বুঝবেন। দপ্তরের আধিকারিকদের বক্তব্য, এখানে কেউ যদি চালাকি করে ঢুকে পড়তে চায়, তবে সেই চাষিই তা ধরিয়ে দেবেন। কারণ, ধান না বেচে যদি কেউ মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা পান, তাঁর মনে প্রশ্ন জাগবেই। এই প্রক্রিয়া চলাকালীনই প্রত্যেক চাষির কাছে ধরে ধরে তথ্য নিতে ফোন করা হচ্ছে। কোথাও গাফিলতি থাকলে তখনই তা জানা যাবে। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, “আমরা প্রক্রিয়াটা শুরু করে দিয়েছি। যাঁরা আমাদের তালিকাভুক্ত কৃষক তাঁদের ফোন করা হচ্ছে। লকডাউনের মধ্যে কেউ এ চালাকি করলে সঙ্গে সঙ্গে কড়া পদক্ষেপ করবে দপ্তর।” তাঁর কথায়, “ধান কেনার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাওয়া শুরু হয়েছে। কেউ যদি ধান না বিক্রি করে থাকেন, তবে তিনি বলে দেবেন। এই পরিস্থিতিতে কেউ যাতে চালাকি না করতে পারে, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই বুদ্ধিটা দিয়েছেন।”
[আরও পড়ুন: জামিন পেয়েও ফেরা হল না ঘরে, লকডাউনে বাসস্ট্যন্ডই ঠিকানা বিচারাধীন বন্দির]
দপ্তর সূত্রের খবর, বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫২ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষমাত্রা রাখা হয়েছে। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এফসিআই কিনবে ৬ লক্ষ মেট্রিক টন। খাদ্যদপ্তর এখনও যা কিনেছে, তার পরেও তাদের কেনা বাকি কমবেশি ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন ধান। যা দিয়ে ফ্রি রেশনের চাল জোগানো অনায়াসে সম্ভব বলেই দাবি করেছেন মন্ত্রী। একইসঙ্গে বলেছেন, রাজ্যের প্রায় ৪০০ ধানকল রয়েছে যাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় চাল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে রবিবার পর্যন্ত নানা অভিযোগের ভিত্তিতে ১৩ জন ডিলারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগ মিলিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৪৫। এ পর্যন্ত শোকজ করা হয়েছে ৫০২ জনকে। পেনাল্টি ও সাসপেনশন-সহ সব মিলিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৭১৩ জনের বিরুদ্ধে। সোমবার রাজ্যের সব রেশন দোকান বন্ধ ছিল স্যানিটাইজ করার জন্য।
মঙ্গলবার থেকে আবার দোকান খুলেছে। এর মধ্যে আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়ে আগামী দু’বছরের জন্য ধনী-দরিদ্র সকলকে ফ্রি রেশন দেওয়ার দাবি তুলেছে সর্বভারতীয় ডিলারদের সংগঠন। সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসুর বক্তব্য, “দু’মাস তো লকডাউন চলবে। তার পরের অবস্থা তো আরও খারাপ হবে। তখন কী হবে? ধনী-দরিদ্র সকলকে কেন্দ্রের এই ফ্রি রেশন প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হোক।”
[আরও পড়ুন: করোনা মুক্ত হয়েই শ্বশুরবাড়িতে পুলিশকর্মী! সংক্রমণের আতঙ্কে রাস্তা অবরোধ স্থানীয়দের]
The post চাষিদের আড়ালে ফড়ে, ধরতে খাদ্যদপ্তরের হাতিয়ার ‘মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি’ appeared first on Sangbad Pratidin.