স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা ও বোলপুর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) চুরি যাওয়া নোবেল পদক অবিলম্বে উদ্ধার করুক সিবিআই। তদন্তের অগ্রগতি কী, প্রকাশ্যে জানাক তারা। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে এই দাবি আরও জোরদার করছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। শুধু তাই নয়, সিবিআই এই তদন্তে তাদের অপারগতার কথা আদালতে জানিয়ে দিলে দায়িত্ব নিয়ে এখনও তার কিনারা করতে প্রস্তুত রাজ্য সরকার। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছিলেন, সেই নীতিতেই অনড় রয়েছে দল এবং সরকার। রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি যখন ‘সিবিআই, সিবিআই’ রব তুলছে, তখন নোবেল তদন্তে সিবিআইয়ের ব্যর্থতাকে হাতিয়ার করে পালটা প্রচার তীব্রতর করছে তৃণমূল।
১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (Nobel Prize) পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৬১তম জন্মদিনের আগে নোবেল কমিটি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিশ্বকবিকে। ‘দ্য নোবেল প্রাইজ’ ওয়েবসাইটে তাঁর নিজের হাতে লেখা ‘জনগণমন’-র ইংরেজি অনুবাদের পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশ করেছে নোবেল কমিটি। সঙ্গে রয়েছে তাঁর একগুচ্ছ ছবি। মহাত্মা গান্ধী, আইনস্টাইনের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবিও রয়েছে সেখানে। বিশ্বজুড়ে শ্রদ্ধার এই আবহে নেই শুধু এ দেশের গর্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদকটি। বিশ্বের রবীন্দ্র-অনুরাগীরা বিশ্বভারতীতে এসে দেখতে পান নোবেল পদকের রেপ্লিকাটি। আঠারো বছর পার করেও তদন্ত শেষ করে চুরি যাওয়া নোবেল উদ্ধার করে দিতে পারেনি সিবিআই (CBI)। কোনও কিনারা হয়নি সিবিআইয়ের তদন্তে। অথচ, আশ্চর্যজনকভাবে তদন্ত শেষও করেনি তারা!
[আরও পড়ুন: উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র আশঙ্কা, পিছিয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর]
আদালতে জানিয়ে দেয়, তদন্তে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। তাই তদন্ত বন্ধ রাখা হোক। নতুন সূত্র মিললে তবেই ফের তদন্ত হবে। এভাবে কার্যত ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরি কাণ্ডে। তদন্ত আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করেই দীর্ঘসূত্রতায় বছরের পর বছর পার হচ্ছে। এখানেই রবীন্দ্র-অনুরাগীদের প্রশ্ন, তাহলে তদন্ত কেন ছাড়ছে না সিবিআই? নাকি, ব্যর্থতার দায় নিতে চাইছে না? বেশ কয়েক বছর আগে বিশ্বভারতীতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, নোবেল চুরির তদন্তে সিবিআই কী করেছে তা তাঁর জানা নেই। তবে তদন্তের সুযোগ পেলে রাজ্যের গোয়েন্দারা আর একবার চেষ্টা করবেন। কিন্তু সেই সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। রবীন্দ্রভক্তদের প্রশ্ন, বাংলার রবীন্দ্র-আবেগের কার্যত কোনও দামই বিজেপির কাছে যে নেই, তা এতেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
২০০৪ সালের ২৫ মার্চ সকালে জানা যায়, রবীন্দ্রভবনের সংগ্রহশালা থেকে নোবেল পদক চুরি হয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে আরও ৫০টি মূল্যবান জিনিসও চুরি হয়। ছ’দিন পরেই তদন্তভার নেয় সিবিআই। প্রথম পর্যায়ের তদন্ত চলে ২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত। তিন বছর ধরে তদন্তের পর আর কোনও সূত্র না মেলায় প্রায় এক বছর তদন্তের কোনও কাজই হয়নি। ফের নতুন সূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আদালতে ফের তদন্ত শুরু করার আবেদন করে সিবিআই। কিন্তু একইরকমভাবে ২০০৯ সালে আগস্টে আবার সিবিআই আদালতকে জানায়, তদন্ত এগোচ্ছে না। ফলে তা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া হোক। ২০১০-এর ৫ আগস্ট আদালত অনুমতি দেয়। ব্যস, এরপর থেকে নোবেল নিয়ে সিবিআই স্পিকটি নট!
[আরও পড়ুন: ফেসবুকে আলাপ, মাদক খাইয়ে তরুণীকে ধর্ষণ! গুরুতর অভিযোগ রাজস্থানের মন্ত্রীপুত্রের বিরুদ্ধে]
১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা থেকে ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়া, কোনও কিছুতেই তদন্তে দাঁত ফোটাতে পারেনি তারা। অথচ, তদন্ত ছাড়তেও চায়নি। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের অন্দরেও এর কোনও যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর নেই। ভিনদেশে পাচার হয়ে গিয়েছে, নাকি নোবেলের সোনা গলিয়ে ফেলা হয়েছে, নাকি তা বিশ্বের কোনও সংগ্রহকারীর গোপন দেরাজে ঠাঁই নিয়েছে–সবই অনুমান মাত্র। এখানেই রবীন্দ্র অনুরাগীদের প্রশ্ন, তদন্তে যখন অনুমান ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি সিবিআই, তাহলে তদন্ত আঁকড়ে রেখে কী লাভ হয়েছে? অন্য কোনও রাজ্য সরকারি এজেন্সিও তো তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত।