স্টাফ রিপোর্টার: উচ্চমাধ্যমিকে সামান্য বেড়েছে পাসের হার। তবে প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছে ভালো ফল করা পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা। এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হয়েছেন ৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৮৪ জন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র ৮৩৩১ জন পেয়েছেন ৯০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর। অর্থাৎ, সফল পরীক্ষার্থীদের মাত্র ১.২৩ শতাংশের ঝুলিতেই এসেছে এই নম্বর। ৬০, ৭০ ও ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের সংখ্যাও কম। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে। অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, যেখানে সিবিএসই ও সিআইএসসিই বোর্ডের দ্বাদশে ভালো নম্বর পাওয়া পড়ুয়াদের আধিক্য থাকে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে না তো?
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় (Higher Secondary Exam) ৬০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছেন ২,৭৮,১৩৯ জন। অর্থাৎ, মোট সফল পড়ুয়ার ৪০.৯২ শতাংশ। ৪৯,২৩৪ জন (৮.৪৭ শতাংশ) পেয়েছেন ৮০-৮৯ শতাংশ নম্বর। ৭০-৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন ৯৪,৫২৪ জন (২২.৩৮ শতাংশ)। এবং ৯০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পাওয়া পড়ুয়াদের সংখ্যা নিতান্তই কম। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের (WBCHSE) সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের কথায়, “পেপার সেটারদের বলা থাকে, সব প্রশ্ন যেন সোজা না হয়। যারা ভালো, মেধাবী পড়ুয়া তারা যেন নিজেদের মেধার বহিঃপ্রকাশের একটা সুবিধা পায়। আবার জাতীয় ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য যাতে অনেক পড়ুয়া পাস করতে পারে, সেভাবেও প্রশ্ন রাখা হয়। কিন্তু ৯০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর একটা বিশাল সংখ্যক পড়ুয়া পেয়ে যাবে, সেটাও কখনওই কাম্য নয়।”
[আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়া সন্দেশখালির নির্যাতিতারা ভুয়ো? রেখা পাত্রর নয়া ভিডিও ঘিরে শোরগোল]
তবে ভালো ফলাফলের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে রাজ্যের সরকার অধীনস্থ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সিবিএসই (CBSE) বা সিআইএসসিই (CISCE) বোর্ডের পড়ুয়াদের তুলনায় যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংসদ সভাপতি। তাঁর মতে, “আর্থসামাজিক দিকটিও বিবেচনা করা দরকার। সিবিএসই, আইএসসির পড়ুয়াদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের থেকে আলাদা। ওই দুই বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা অভিভাবকদের থেকে টিউশন, কোচিং-এর মতো যে ধরনের সাহায্য পায়, সেটা উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা আশা করতে পারে না। অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলের, প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া থাকে। এই হিসাবে ৯০ শতাংশের উপর তারাই পায়, যারা সত্যিই মেধাবী।”
এবার শুরু হবে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া। ভালো ফল কম হওয়ায় সেখানে গিয়ে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। সংসদ সভাপতির মতে, সেমেস্টার ব্যবস্থার সঙ্গে পার্সেন্টাইল চালু হলে এর অনেকটাই সমাধান হবে। তিনি বলেন, “আমি সবসময় মনে করি, পার্সেন্টাইল ফলাফলের সবথেকে ভালো প্রতিনিধিত্ব করে। উচ্চশিক্ষায় বিশেষত, আইআইটি, এনআইটিতে কিন্তু রিলেটিভ গ্রেডিং দেখা হয়। সেমেস্টার ব্যবস্থায় মার্কশিটে আমরা পার্সেন্টাইলের উল্লেখ করব।” এবার অনলাইন ফলাফলে রয়েছে সামগ্রিক ও বিষয়ভিত্তিক পার্সেন্টাইলের উল্লেখ।
[আরও পড়ুন: কমছে হিন্দুদের সংখ্যা, মুসলিম বেড়েছে ৪৩%, নির্বাচনের মধ্যেই প্রকাশ্যে রিপোর্ট]
এ বছর উচ্চমাধ্যমিকের জন্য নাম নথিভুক্ত করেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি ৯ হাজার ১২৪ জন। এ প্রসঙ্গে সংসদ সভাপতি বলেন, “স্কুলছুটের সমস্যাটা সব জায়গাতেই কমবেশি থাকে। যত পড়ুয়া মাধ্যমিক পাস করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়, তত ছাত্র কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে বসে না। এর কারণ, সামাজিক প্রেক্ষাপটগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। এটা আমরা স্কুল শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে কথাবার্তা বলে এটা করব।” সচেতনতামূলক কর্মশালা করার কথা জানিয়েছেন সংসদ সভাপতি।