চন্দ্রজিৎ মজুমদার ও সাবিরুজ্জামান: ভোটের (WB Panchayat Election 2023) ঠিক আগের দিন তপ্ত মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) সফরে গেলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রেলপথে তিনি বহরমপুর হয়ে নবগ্রাম, খড়গ্রাম যান। নিহতদের পরিবার তাঁর কাছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নালিশ জানান বলে খবর। তুললেন সিবিআই তদন্তের দাবিও। রাজ্যপাল তাঁদের কথা শোনেন। সবরকমভাবে পাশে থাকার আশ্বাসও দেন। পরে সেখান থেকে আবার বহরমপুর (Baharampur) ফিরে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল। নির্ভয়ে সকলকে ভোটদানের আবেদন জানান। তবে রাজ্যপালের এই সফর ঘিরে কটাক্ষ করেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
শুক্রবার কলকাতা (Kolkata) থেকে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সকাল ১০ টায় বহরমপুর পৌঁছে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose) চলে যান নবগ্রামে। সেখানে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পর্ব মিটতেই অর্থাৎ ১৫ জুন খুন হন নবগ্রাম থানার হজবিবিডাঙ্গা অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মোজাম্মেল শেখ। ওই রাতে তিনি স্থানীয় পাথরডাঙা অঞ্চল তৃণমূল কার্যালয় থেকে দলীয় প্রার্থীকে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, ওই সময় একদল সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদল তাঁকে পিটিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। এদিন রাজ্যপাল মৃত তৃণমূল নেতা মোজাম্মেল শেখের সাহেবনগরের বাড়িতে উপস্থিত হন। সেখানে মৃতের পরিবারকে সমবেদনা জানান তিনি। এছাড়া মৃতের পরিবারকে সুবিচার পাইয়ে দিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দেন। এই বিষয়ে হজবিবিডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান মাফজার আলি বলেন, “রাজ্যপাল গোটা ঘটনা বিস্তারিত শোনেন। তদন্তের কাজে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার কথাও উনি জানতে চান। তাঁকে আমরা সব কিছু খোলসা করে বলেছি। উনি মৃতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।”
[আরও পড়ুন: আসন্ন এশিয়ান গেমসে খেলবে ভারতীয় ক্রিকেট দল, আরও এক বড় সিদ্ধান্ত নিল BCCI]
এদিকে বিরোধীদের হাতে দলীয় নেতা খুন এবং ভোট প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে এভাবে রাজ্যপালের সরেজমিনে পরিদর্শন আসা ও মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন ব্লক তৃণমূল (TMC) সভাপতি মহম্মদ এনায়েতুল্লাহ। তাঁর দাবি, “ঘটনার তদন্তে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। ভোটের ঠিক আগে মুহূর্তে রাজ্যপাল এভাবে এলাকায় ঘুরে মানুষকে কি বার্তা দিতে চাইছেন বুঝছি না।”
[আরও পড়ুন: ‘রিঙ্কুকে দলে নেওয়া উচিত ছিল’, বলছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ওপেনার]
নবগ্রাম থেকে খড়গ্ৰামের রতনপুর-নলদ্বীপ গ্রামে মৃত কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখের বাড়িতে যান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল কে পাশে পেয়ে মৃত কংগ্রেস কর্মীর পরিবারের সদস্যরা সিবিআই তদন্তের (CBI Probe) দাবি জানালেন। কংগ্রেস কর্মীর পরিবারের অভিযোগ, “খুনের ঘটনা ঘটার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্তরা ধরা পড়েনি। অন্যদিকে, কংগ্রেস পরিবারের উপর লাগাতার হুমকি ও নির্যাতন চলছে বলে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করেছে মৃত কংগ্রেস কর্মীর পরিবার। পুলিশি নিরাপত্তায় গলদ রয়েছে। কোনওরকম নিরাপত্তা পাওয়া যাচ্ছে না পুলিশের পক্ষ থেকে।” তাই খুনের ঘটনার সঠিক তদন্তের জন্য সিবিআই তদন্তের দাবি করেন মৃত কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখের পরিবার। রাজ্যপাল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election) আগে মনোনয়ন জমার প্রথম দিনে কংগ্রেস কর্মী খুনের ঘটনায় মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানা এলাকার মারগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের রতনপুর গ্রাম অগ্নিগর্ভ হয়। যদিও পুলিশ এই খুনের ঘটনার পর রাতেই কাজল শেখ ও সফিরুল শেখ নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেয়। এই মামলায় ১৫ জনের নামে অভিযোগ হয়েছে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।