শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: সাতসকালে দরজা খুলেই চক্ষু চড়কগাছ শেফালি বড়দোলইয়ের। দুয়ারে হাজির স্বয়ং মা লক্ষ্মী! হাতে লক্ষ্মীর ভাঁড়। বার দুই চোখ কচলেও বিশ্বাস হচ্ছে না বছর পঁয়তাল্লিশের শেফালিদেবীর। আর তখনই মা লক্ষ্মী বলে ওঠেন, ‘‘মা মমতা আমাকে তোদের দুয়ারে পাঠিয়েছেন। এই যে আমার হাতে ভাঁড় দেখছিস এ অফুরন্ত। কোনওদিন শূন্য হবে না। যতই নিবি ততই পাবি। তবে আমার ভাইদের জোড়াফুলে ভোটটা দিবি। মা আমাকে বলে পাঠিয়েছেন।’’ আর শেফালি হাসিমুখে মা লক্ষ্মীর হাত ধরে বাড়ির অন্দরে নিয়ে গেলেন। সে কি খাতির! এমন অভিনব প্রচার করে ভোট (West Bengal Panchayat Election 2023) চাইলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। ঘটনা ঘাটাল ব্লকের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানগর গ্রামের।
শুধু রাধানগর নয়। নবগ্রাম, সিংহডাঙা, পাথরা, বীরসিংহ গ্রামে বহুরূপী সেজে ভোটপ্রচার করেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। সঙ্গে রয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদ প্রার্থীরা। শুধু বীরসিংহ গ্রাম নয়, ঘাটাল মহকুমার প্রায় সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারই হয়ে উঠছে তৃণমূলের ভোটপ্রচারের মূল হাতিয়ার। কেউ কেউ আবার মহিলা ভোটারদের বলছেন, সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসকে ভোট দিলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকা জমা বন্ধ হয়ে যাবে। মূলত মহিলা ভোটারদের কাছে টানতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে হাতিয়ার করছে তৃণমূল। শাসকদলের নেতাদের দাবি, শুধু ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রচার করেই বাজিমাত করবে ভোট বাজারে। অবশ্য অনেক আগেই শাসকদল তাঁর মহিলা কংগ্রেস নেত্রীদের ও সদস্যদের ভোট ময়দানে নামিয়েছেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ হাতে নিয়ে।
[আরও পড়ুন: চোখে রাসায়নিক স্প্রে, খাস কলকাতায় যুবকের গায়ে জ্যান্ত সাপ ছেড়ে সোনার চেন নিয়ে উধাও ৪ ‘সন্ন্যাসী’]
বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী তথা ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্ত রায় বলেন, ‘‘ভোটপ্রচারে আমরা বেশি করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তুলে ধরছি মহিলাদের কাছে। কেন না এই প্রকল্প গ্রাম বাংলায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি মহিলাদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে। তাই আমারাও এই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পকে বেশি করে ভোটপ্রচারে তুলে ধরছি।’’ তাই লক্ষ্মী সেজে হাতে লক্ষ্মীর ভাঁড় নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। আর এই বহুরূপী দেখতে ভিড় জমিয়েছেন গ্রামের মহিলা ও পুরুষরা। লক্ষ্মীরূপী তৃণমূল কর্মী বলেন, “এই ভাঁড় অফুরন্ত। যতই নিবি ততই পাবি। শেষ আর হবে না।”
মহিলারা বুঝছেন কার্যত তাই-ই। কেননা প্রতি মাসেই ঢুকছে শয়ে শয়ে টাকা। আর শেফালি তফসিলি জাতি হওয়ায় তাঁর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ঢুকছে প্রতি মাসে হাজার টাকা। আর এই ভোট প্রচারেই কুপোকাৎ বিরোধীরা। কী বলছেন ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট? তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ফুটো হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। কেননা পাঁচশো টাকা বেশি দিতে পারবে না এই সরকার। আমরা ক্ষমতায় এলে মাতৃভাণ্ডার চালু করে মাসে তিন হাজার টাকা করে দেব প্রতি মাসে।’’ কার্যত লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকেই স্বীকৃতি দিলেন শীতলবাবু। আর সিপিএমের ঘাটাল এরিয়া কমিটির সম্পাদক চিন্ময় পাল বলেন, ‘‘এ সবই সরকারি টাকায় ভোট কেনা। মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে টাকার টোপ দিচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপি।’’ কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে বিরোধিতা করতে পারছেন না চিন্ময়বাবুও।
দেখুন ভিডিও: