দেবব্রত দাস, সোনামুখী: অশান্ত আফগানিস্তান। ২০ বছর পর আফগানিস্তানে ফের শুরু হয়েছে তালিবানি শাসন (Taliban Terror)। তালিবানের নিয়ন্ত্রণাধীন সুদূর আফগানিস্তানের এই রাজনৈতিক পালাবদলের ঢেউয়ের ছোঁয়া এবার পড়ছে এই রাজ্যের পাগড়ি শিল্পেও। রাজ্যের পাগড়ি শিল্পের জন্য বিখ্যাত বাঁকুড়ার (Bankura) সোনামুখী। আফগানিস্তানের এই অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির জেরে সোনামুখীর পাগড়ি শিল্পে এখন বাজার মন্দা। মাথায় হাত সোনামুখীর শতাধিক পাগড়ি শিল্পীর। আর্থিকভাবে চরম লোকসানের সম্মুখীন হতে বসেছেন এখানকার পাগড়ি শিল্পীরা।
বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরের তন্তুবায় সম্প্রদায়ের তৈরি পাগড়ি বিশ্বখ্যাত। সোনামুখী শহরে বর্তমানে দেড় হাজার তাঁতশিল্পী রয়েছেন। গামছা, চাদর থেকে লুঙ্গি, শাড়ি সবই তৈরি করেন তাঁতশিল্পীরা। তাদের মধ্যে শতাধিক তাঁতশিল্পী পাগড়ি তৈরি করেন। সোনামুখীর তৈরি এই পাগড়ির কদর বিদেশ বিভুঁইয়ে রয়েছে। স্থানীয় তাঁতশিল্পীরা জানিয়েছেন, সোনামুখীর তাঁতে তৈরি রেশমের পাগড়ি সুদূর আফগানিস্তান, সৌদি আরব-সহ বহু দেশে রপ্তানি হয়। গত দেড় বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির জন্য এখানকার পাগড়ি ব্যবসা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সম্প্রতি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ফের এই ব্যবসা সচল হবে বলে আশা করেছিলেন তাঁতশিল্পীরা। কিন্তু আফগানিস্তানের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফের দুর্দিন শুরু হয়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: জাতীয় স্তরে প্রশংসিত রাজ্যের আরেক প্রকল্প, দেশের মধ্যে ১ নম্বরে ‘বাংলার বাড়ি’, জানাল কেন্দ্র]
স্থানীয় তাঁতশিল্পী তারাপদ দত্ত বলেন, “আমাদের এখানকার তাঁতের তৈরি রেশমের পাগড়ি পাড়ি দিত কাবুল, কান্দাহার থেকে গজনী-সর্বত্র। আফগানিস্তান থেকে কাবুলিওয়ালারা এখানে সরাসরি এসে বা কলকাতায় এসে রেশমের পাগড়ি কিনে নিয়ে যেতেন। গত বছর থেকে করোনা পরিস্থিতির জন্য দীর্ঘদিন এই ব্যবসা মার খেয়েছে। সম্প্রতি বর্হিবিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু হওয়ায় আশা করেছিলাম আফগানিস্তান থেকে কাবুলিওয়ালারা এসে আবার পাগড়ি কিনে নিয়ে যাবেন। কিন্তু গত দু’সপ্তাহ ধরে আফগানিস্তানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে এখন কেউ আর সেখান থেকে পাগড়ি কিনতে আসবেন না। আমাদের এখানকার তৈরি পাগড়ি এখন বাড়িতেই মজুত রয়ে গেল। লক্ষ লক্ষ টাকার পাগড়ি এইভাবে মজুত থাকলে প্রচুর টাকা লোকসান হবে। তাঁতশিল্পের উপরেই আমাদের ভরসা। এখন কি যে করব ভেবে পাচ্ছি না।”
সোনামুখীর আরেক তাঁতশিল্পী রাজু পাল বলেন, “ভাল পাগড়ি দুই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সিন্থেটিক পাগড়ি তিনশো টাকায় বিক্রি হয়। এখন বাজার পুরোপুরি মন্দা। বিক্রি নেই। মজুত সামগ্রী বিক্রি না হওয়ায় সুতো থেকে কারিগর কাউকেই মজুরি দিতে পারছি না। চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছি আমরা। সরকার উৎপাদিত পণ্য কেনার ব্যবস্থা করলে আমরা খুবই উপকৃত হব।” ফলে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কবে আবার শান্ত ও স্বাভাবিক হবে সেদিকেই এখন তাকিয়ে সোনামুখীর পাগড়ি শিল্পীরা।