সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলায় পরিবর্তন আনতে আপ্রাণ লড়াই চালিয়েছে গেরুয়া শিবির। জয় নিশ্চিত করতে একাধিক সাংসদকে টিকিট দেওয়া হয় বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Elections)। প্রার্থীদের হয়ে বঙ্গে লাগাতার প্রচার চালিয়েছেন মোদি-শাহ। কিন্তু মোদি ম্যাজিক যে বাংলায় কার্যকরী হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। পরাজিত হয়েছেন বিজেপির একাধিক হেভিওয়েটও। তবে জয়ের হাসিও হেসেছেন বেশ কয়েকজন। এক নজরে দেখে নিন রিপোর্ট কার্ড।
মুকুল রায় (কৃষ্ণনগর উত্তর) – ২০ বছর পর ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ‘দলবদলু’ বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তৃণমূলের তরফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়। প্রথম থেকেই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মুকুল। শেষমেশ জয়ের শিরোপা উঠল তাঁর মাথায়।
লকেট চট্টোপাধ্যায় (চুঁচুড়া) – বাংলায় বিজেপির অন্যতম নেত্রী লকেট। লোকসভা ভোটে অত্যন্ত ভাল ফল করেছিলেন তিনি। সাংসদ পদে ছিলেন। বিধানসভা ভোটেও তাঁর উপরই ভরসা রেখেছিল দল। কিন্তু এবার দলকে খুশি করতে পারলেন না লকেট চট্টোপাধ্যায়। অনেক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত তিনি।
শমীক ভট্টাচার্য (রাজারহাট-গোপালপুর) – বহুদিনের রাজনীতিবিদ তিনি। তবে বিধানসভা ভোটে সদ্য রাজনীতির ময়দানে পা রাখা অদিতি মুন্সির কাছে পরাজিত হলেন শমীক।
বাবুল সুপ্রিয় (টালিগঞ্জ) – লোকসভা ভোটে প্রচুর ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। সেই কারণেই বিধানসভায় তাঁর উপর ভরসা করেছিলেন মোদি-শাহ। কিন্তু আশাভঙ্গ হল। রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত বাবুল।
রাহুল সিনহা (হাবড়া) – এবারেও জেতা হল না রাহুল সিনহার। একাধিকবার বিজেপি তাঁকে টিকিট দিলেও এখনও পর্যন্ত সফল হতে পারেননি তিনি।
[আরও পড়ুন: ভোটের আগেই দুঃসংবাদ, করোনায় মৃত্যু বৈষ্ণবনগরের নির্দল প্রার্থী সমীর ঘোষের]
সব্যসাচী দত্ত (বিধাননগর)- দলবদলেও মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারলেন না বিজেপি নেতা সব্যসাচী দত্ত। সুজিত বসুর কাছে প্রচুর ভোটে হারলেন তিনি।
অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় (বোলপুর) – অনুব্রত গড়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর দায়িত্ব ছেড়েছিল বিজেপি। কিন্তু ভোটগণনার শুরু থেকেই দেখা গেল পিছিয়ে অনির্বাণ। শেষমেশ জয়ের হাসি হাসলেন তৃণমূল প্রার্থী।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (ডোমজুড়) – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের সৈনিক ছিলেন রাজীব। কিন্তু গত নভেম্বরে তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দল ছাড়েন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনে রাজীবকে তাঁর আসন ডোমজুড়েরই টিকিট দেয় বিজেপি। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। আর রাজীবের উপর আস্থা রাখলেন না স্থানীয়রা।
সুব্রত সাহা (রাসবিহারী) – সকাল থেকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও দেবাশিস কুমারের কাছে হার মানতে হল সেনা কর্মী সুব্রত সাহা।
নিশীথ প্রামাণিক (দিনহাটা) – লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন নিশীথ প্রমাণিক। লোকসভা নির্বাচনে জয়ীও হন। বিধানসভাতেও তার উপর আস্থা রেখেছিল দল। সেই ভরসার মর্যাদা রাখলেন নিশীথ।
চন্দ্রমণি শুক্লা (বারাকপুর) – গতবছর বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বারাকপুর-খড়দহ এলাকা। মণীশ শুক্লার প্রতি মানুষের সহানুভূতিকে বিধানসভা নির্বাচনে কাজে লাগাতে তাঁর বাবা চন্দ্রমণি শুক্লাকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। অনেক ব্যবধানে তাঁকে হারালেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী রাজ চক্রবর্তী।
চাঁদিমা রায় (হেমতাবাদ) – হেমতাবাদ আগেরবার ছিল বিজেপির দখলে। বিধায়ক ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ বর্মন। গতবছর উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ। অভিযোগ ওঠে, খুন করা হয়েছে তাঁকে। বিধানসভা নির্বাচনে মৃত বিধায়কের স্ত্রীকে টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থীর কাছে প্রায় ২৭ হাজার ভোটে হারলেন তিনি।