গৌতম ব্রহ্ম: নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে পর্যালোচনার সময় চার মন্ত্রীকে ভর্ৎসনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘আপনারা সরকারের অংশ। এমন কোনও বক্তব্য পেশ করবেন না, যা ঠিক নয়। নতুন স্কিম ঘোষণার আগে আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে।’’
বুধবার নবান্ন (Nabanna) সভাঘরে সমস্ত দপ্তরের মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের আধিকারিকদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম ৪৫ মিনিট তিনি দপ্তরের সব আধিকারিকদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কথা বলেন। পরিচিত হন। ভারচুয়ালি বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক থেকে শুরু করে বিডিও, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে থানার আইসি। তারপরই একাধিক প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
[আরও পড়ুন: সলমনের ছবির গানে নার্সারির ছড়ার ব্যবহার, ভাইজানের উপর বিরক্ত শিশু কল্যাণ সংগঠন]
তিরষ্কারের পর্ব শুরু হয় সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে (Partha Bhowmik) দিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘গঙ্গা ভাঙন আমরা নিজেরাই হাতে নিয়ে করব।’ পার্থ ভৌমিকের এমন একটা সেটমেন্ট দেখলাম। এটার ব্যাপারে তো কোনও ক্লিয়ারেন্স আসেনি। মন্ত্রী কেন এমন বক্তব্য করেছেন, তার কৈফিয়ত চান মমতা। বলেন, ‘‘এভাবে বললে লোকের আশা জাগে। তোমরা তো বিবৃতি দিয়ে খালাস। আমার সিস্টেম হচ্ছে বরাদ্দ হওয়ার পরই প্রকল্পের ঘোষণা করা। খবর করার জন্য বাড়তি কথা বলা উচিত নয়।’’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ‘‘কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পের টাকা আমরাই দিয়েছি। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান ৩০ বছর ধরে পড়ে রয়েছে। অনেককে বলেছি। যারা একশো দিনের কাজের টাকা দেয় না, তারা মালদহ-মুর্শিদাবাদে গঙ্গা ভাঙনের টাকা দেবে? ফরাক্কা ইন্দো-বাংলা জলচুক্তির ৭০০ কোটি টাকাও দেয়নি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, গঙ্গা ভাঙন আটকানো মুশকিল। রোজ হতেই থাকবে। এক পাড় ভাঙছে, অন্য পাড় গড়ছে। এখানে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী সামশেরগঞ্জের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। জানান, যাদের পাঁচ বছরে ঘরবাড়ি ভেসে যেতে পারে তাদের কিছু সরকারি জমি দেওয়া যেতে পারে। একটা টাস্কফোর্স, এক্সপার্ট টিম তৈরি করা হোক। এরা এই গঙ্গাপাড়ের বিপন্ন মানুষগুলির পুনর্বাসন নিয়ে ভাবুক। প্রয়োজনে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের মতো সংস্থার সঙ্গে কথা বলতে হবে।
[আরও পড়ুন: গরু পাচার মামলায় এবার গ্রেপ্তার অনুব্রতকন্যা সুকন্যা মণ্ডল]
এদিন বৈঠকে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে ৯৪ লক্ষের বেশি কৃষককে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কাজ শুরু হয়। জানা গিয়েছে, কৃষকবন্ধুর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে বক্তব্য রাখতে গেলে এদিন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে মুখ্যমন্ত্রী পালটা প্রশ্ন করেন। জানতে চান, কেন এখনও সিঙ্গুরের জমিগুলি চাষযোগ্য করা গেল না। একটি প্রকল্পের সূত্র ধরে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কেও (Babul Supriyo) সতর্ক করেন মমতা। বলেন, “মুকুটমনিপুরের কটেজে কতগুলি সাপ বেরিয়েছে জানো? পনেরাটা সাপ বেরিয়েছে। কী করে হয়? ওখানে একটা ওপেন এয়ার থিয়েটার করার কথা ছিল না? সেটার কী খবর? ওখানে তো একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হওয়ার কথা।’’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেবল গান করলে হবে না। পর্যটনটাও ভাল করে দেখ।’’ মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে কথা বলে কাজ করার পরামর্শও দেন।
এদিন তারাপীঠের প্রস্তাবিত বাসস্ট্যান্ড তৈরির প্রসঙ্গ নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজ এগিয়েছে কী না জানতে চান। স্নেহাশিস সদুত্তর দিতে না পারায় মুখ্যমন্ত্রী বিরক্ত হন। মন্ত্রীকে বলেন, ‘‘এক কোটি টাকা তো লাগবে। দ্রুত কাজ করুন।’’ মুখ্যমন্ত্রী এদিন পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়কে (Pulok Roy) ম্যাকিনটোস বার্নের কাজকর্ম নিয়ে সতর্ক করেন। জানান, ওরা অনেক ভুল করছে। ওদের কাজে নজরদারি বাড়াতে হবে। এদিন পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের প্রমোশনের বিষয়টি দ্রুত ত্বরান্বিত করতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের কাছে বাম জমানার আবাসন দফতরের ৪৭টি কেস এসেছে। ওদের বাড়ি দেবে বলে দেয়নি। সেটা আমি এখন দিচ্ছি।’’