বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: আহত মহারাষ্ট্রের ‘স্ট্রং ম্যান’। শরদ পওয়ারকে পিছন থেকে ছুরি মেরে আক্রান্ত করলেন আর কেউ নন, তাঁর নিজের ভাইপো অজিত পওয়ার। রাতারাতি বিরোধী শিবিরে যোগ দিলেন। সেই সঙ্গে বসে পড়লেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আহত ‘স্ট্রং ম্যানে’র পাশে যথারীতি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলেন ভেঙে না পড়ার বার্তা। পাশে আছেন বলে জানিয়ে দিলেন।
ভাইপোর শিবির বদলে তিনি যে দমে যাচ্ছেন না, স্পষ্ট করে দিলেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ার (Sharad Pawar)। তিনি জানিয়েছেন, রবিবার মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা জোটে অজিত যোগ দেওয়ার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা তাঁর কাছে একেবারেই নতুন নয়। আশির দশকেও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের ভালবাসায় সেই সংকট কাটিয়ে ওঠেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, বিপদের সময় পাশে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে। তাঁরা দু’জনেই ফোন করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন বলে জানিয়েছেন স্ট্রং ম্যান।
এদিকে এই ঘটনার পিছনে গেরুয়া শিবিরের গোপন ‘গেমপ্ল্যান’ আছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। জেশজুড়ে বিরোধী জোট দানা বাঁধতেই আতঙ্কে গেরুয়া শিবির। বিরোধী জোট ভাঙতে মরিয়া বিজেপি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে আরও সক্রিয় করার পরিকল্পনা করেছে। অজিত পওয়ারের দলবদল তারই অংশ বলেই মনে করছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: ২১ জুলাই কলকাতায় বিজয় সমাবেশ, মালদহে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে ঘোষণা অভিষেকের]
অজিত পওয়ার দাবি করেন, শুধু তিনি একা নন, এতে ৯ জন এনসিপি (NCP) বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। মারাঠা রাজনীতিতে এনসিপি খুবই গুরত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। সেই দলের অন্যতম সদস্য সুপ্রিমো শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত। দলের মধ্যে থেকেও বেসুরো ছিলেন তিনি। কিন্তু জুন মাসের মাঝামাঝি দলের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে বড়সড় বদল আনেন শরদ পওয়ার। মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেকে এনসিপি-র কার্যকরী সভাপতি করেন তিনি। কার্যকরী সভাপতি পদে বসান তাঁর অত্যন্ত বিশ্বস্ত প্রফুল প্যাটেলকেও। তারপর থেকেই অজিত বিদ্রোহী হন।
সম্প্রতি রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই বিদ্রোহের সূচনা হয়ে যায় এনসিপি-র অন্দরে। অজিতের বিরোধী দলনেতার পদ ছাড়ার ঘোষণার পর তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় মারাঠা রাজনীতিতে। এনসিপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যেত বিরোধী শিবিরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন তিনি। যদিও সেই জল্পনাকে আমল দিতে নারাজ ছিলেন শরদ পওয়ার। কিন্তু রবিবার মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একের পর এক ঘটনা ঘটে। এনসিপির ৩০ জন বিধায়কের সঙ্গে নিজের বাড়িতেই বৈঠক করেন অজিত। তারপর সোজা চলে যান রাজ্যপালের কাছে। জল্পনা শুরু হয়, ফের ২০১৯ সালের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে মহারাষ্ট্রে। সেই জল্পনার মাঝেই রবিবার দুপুরেই মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অজিত।
[আরও পড়ুন: ৩২০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী, বন্ধ হল অস্ট্রিয়ার প্রাচীন সংবাদপত্র ওয়েনার জেইতুং!]
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালেও অজিত তৎকালীন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসের শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। তিনদিনের জন্য উপমুখ্যমন্ত্রীও হন অজিত। যদিও সেই জোট ভেঙে যায় অচিরেই। নিজের ঘরে ফিরে আসেন অজিত। এখন দেখার এই শিবির বদলের বিষয় কোনদিকে বাঁক নেয়।