অরিঞ্জয় বোস: বঙ্গ রাজনীতিতে মহীরুহের পতন। পাঠান গর্জনে কুপোকাত বহরমপুরের 'রবিনহুড'। হারলেন 'দাদা', জিতলেন 'ভাইজান।' টানা পাঁচবারের সাংসদ পারলেন না ডবল হ্যাটট্রিক করতে। বহরমপুরের মাটিতে দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন ক্রিকেট মাঠ থেকে উঠে আসা ইউসুফ পাঠান (Yusuf Pathan)। জয়ের ব্যবধান ৮০ হাজারের বেশি।
১৯৯৯ থেকে বহরমপুরে জিতছেন অধীর (Adhir Ranjan Chowdhury)। একটা সময় লড়েছেন বামেদের বিরুদ্ধে। প্রথমবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। ২০০৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সেভাবে চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হয়নি। প্রথমবার তিনি সত্যিকারের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ২০১৯ সালে। মুর্শিদাবাদের দুর্গ দখল করতে শুভেন্দু অধিকারীকে পাঠালেন তৃণমূল নেত্রী। একে একে তৃণমূলে যোগ দেওয়া শুরু করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সাঙ্গপাঙ্গরা। লোকসভায় নিজের জেলায় দুটি আসন হারালেন অধীর। তবে তৃণমূলের বিজয়রথ সেবার রুখে দিয়েছিল বহরমপুর। এবার পারল না।
[আরও পড়ুন: মেলেনি কুলার, বার বার নেওয়া হচ্ছে ওজন! তিহাড়ে কেজরির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আপের]
আসলে এবারের চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক কঠিন। এই প্রথম অধীরের মূল প্রতিপক্ষ ছিলেন মুসলিম প্রার্থী। প্রচারে তৃণমূল বলছিলেন, 'দাদা' নয়, এবার ভোট দিন 'ভাইজান'কে। অধীরের ভাষায়, 'ভাইজান পাঠান।' আসলে প্রায় ৫০ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বহরমপুরে এ যাবৎকাল সংখ্যালঘু সাংসদ পায়নি। এবার তাই ভাইজানকে সাংসদ হিসাবে পেতে মরিয়া ছিলেন সংখ্যালঘুদের একটা অংশ। পালটা হিন্দুভোট একত্রিত হয়েছে বিজেপির পক্ষে। গেরুয়া শিবিরও এবার বহরমপুরে জয়ের গন্ধ পেয়ে ভালো প্রার্থী দিয়েছিল। অতএব, হিন্দুরা আশ্রয় খুঁজেছেন বিজেপির কোলে। অতএব ধর্মযুদ্ধ। আর সেই ধর্মযুদ্ধের মাঝে পড়ে পিষে গেলেন একা কুম্ভ অধীর। লোক-লস্করহীন 'সামন্ত' রাজা। যেটুকু লড়াই তিনি দিলেন পুরোটাই ব্যক্তিগত ক্যারিশমা আর কাল্ট অধীরের নামে। কিন্তু সংগঠনহীন, ন্যারেটিভহীন 'দাদা' এবার হার মানলেন ভাইজানের কাছে।
[আরও পড়ুন: ফের একবার মোদি সরকার! ৫০০ বছর আগে কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন কালদ্রষ্টা নস্ট্রাদামুস?]
সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠে গেল অধীরের নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে নিয়ে। এবার কি করবেন অধীর? বাংলায় তৃণমূলের চমকপ্রদ ফল। কংগ্রেসের ব্যর্থতা। তৃণমূলকে নিজেদের শিবিরে রাখতে হাইকম্যান্ডতো বহরমপুরের সদ্যপ্রাক্তন সাংসদকে প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে সবার আগে সরিয়ে দেবে? তাহলে কি বিজেপিতে পা বাড়াবেন চৌধুরী? আদর্শগতভাবে তাঁর পক্ষে সেটা সম্ভব? নাকি ইউসুফ পাঠানের কাছে পরাজিত হয়ে রাজনৈতিক কেরিয়ারটেই শেষ হয়ে গেল বহরমপুরের রবিনহুডের? এবার কি সত্যিই বাদাম বেচবেন তিনি?