সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি মর্নিং ওয়াকে বেরোলেই নাকি বিজেপির দুজন অনুগামী বেড়ে যায়। বঙ্গ-বিজেপিতে এ নাকি প্রাচীন প্রবাদ। স্পষ্টবক্তা, খানিকটা ঠোঁটকাটাই বলা যায়। তবে তাঁর কথা-বার্তা, চালচলনে যা সবথেকে স্পষ্ট, তা হল- লড়াই। রাজনীতির জমিতে তিনি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়তে জানেন। ২০১৯-এ বাংলার প্রায় প্রতিকূল মাটিতেও তিনি পদ্ম ফুটিয়েছিলেন। ১৮টি সিট পেয়ে বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে বিজেপিকে তীব্র ভাবে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছিলেন। অথচ চব্বিশের লোকসভা তাঁর জন্য বয়ে আনল দুঃসংবাদ। সারা বাংলায় যে বিজেপি প্রত্যাখ্যানের ট্রেন্ড, সেই ঝড়ে নিজেকে আলাদা করে রক্ষা করতে পারলেন না। শেষমেশ হেরেই গেলেন দিলীপ ঘোষ।
দিলীপ ঘোষ যে হেরে যেতে পারেন, তা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। এমনকী যাঁরা রাজনৈতিক ভাবে দিলীপের বিরোধী শিবিরে, তাঁরাও জানতেন যে, সংগঠন গড়তে তিনি ওস্তাদ। জনসংযোগে যোস্ত। তাঁর উপর উচিত কথা উচিত জায়গায় বলতে দ্বিধা করেন না। এরকম একজন সর্বজনগ্রাহ্য নেতা হেরে যাবেন কী করে! যদিও এবার তাঁর কেন্দ্র নিয়ে গোড়া থেকেই ছিল খানিক ওলটপালট হাওয়া। মেদিনীপুর থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুর। ভোট ঘোষণার বহু পরেও বিজেপি প্রার্থী তালিকা নিয়ে চূড়ান্ত জটিলতা ছিল। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ফের টিকিট পাবেন কিনা, তা নিয়ে নানা জল্পনা মাথাচাড়া দেয়। শোনা যায়, মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী হিসাবে ভেবেছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে তা নিয়ে নাকি চূড়ান্ত মতবিরোধ ছিল। বারবার দিল্লির শাহী দরবারে তা নিয়ে নাকি তদ্বিরও করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদাররা। যদিও সে গুঞ্জনকে মিথ্যা বলেই দাবি করে গেরুয়া শিবির। এর পর আর মেদিনীপুরে টিকিট পাননি দিলীপ। পরিবর্তে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট দেওয়া হয় তাঁকে।
[আরও পড়ুন: ভোটগণনা শুরু হতেই বিরাট ধস শেয়ার বাজারে]
কেন্দ্র বদল হয়েছিল ঠিকই। তবে মনোবল হারাননি। কেননা তিনি চিরকালের 'লড়াকু'। তাই বোধহয় ভোটপ্রচারে ধ্বনি উঠেছিল 'হাউ ইজ দ্য জোশ, দিলীপ ঘোষ'। গড় বদলে যে কিছু যায় আসে না তাঁর, তা বারবার প্রমাণ করেছেন। পরিবর্তে প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণার পর থেকেই বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে একপ্রকার ঘাঁটিই গেড়েছিলেন দিলীপ। মাটি আঁকড়ে পড়েছিলেন। জনসংযোগে ফাঁকি দেননি এতটুকু। গড় বদলেও স্বমেজাজে বারবার ধরা দিয়েছেন দিলীপ। বিরোধীদের হুঙ্কারও দিয়েছেন বারবার। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে কীর্তি আজাদকে যেন মানতেই চাননি তিনি।
কিন্তু ভোটের অঙ্ক সে কথা মানল কই! দেখা গেল, তৃণমূলের তারকা প্রার্থী কীর্তি আজাদের কাছে প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে হার বিজেপি প্রার্থীর। নিঃসন্দেহে বাংলার রাজনীতিতে এই ফলাফল রীতিমতো চমকপ্রদ। বিশেষত দিলীপের মতো দুঁদে রাজনীতিবিদ কীর্তির কাছে হেরে যাবেন, এটা অনেকেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন। তবে ফলাফলের গণিত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ঊর্ধ্বে। দিলীপের এই হার তাই খতিয়েই দেখবে বিজেপি শিবির। যাঁর হাত ধরে বঙ্গে বিজেপির উত্থান, তাঁর পরাজয় কি বিজেপির নিজস্ব রণকৌশলের খামতিই চিহ্নিত করে না। দিলীপ লড়াই করেছিলেন। কিন্তু সামগ্রিক ভাবেই বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলার মানুষ। সেই প্রত্যাখ্যানের কারণ সামগ্রিক ভাবে বিজেপিরই। একা কুম্ভ দিলীপ ঘোষ আর গড় রক্ষা করবেন কী করে! অতএব সবুজ-সাইক্লোনে ঘর ভাঙল তাঁরও। যে বিজেপিকে এই বাংলায় জয়ের পথ চিনিয়েছিলেন, আজ নিজেই তিনি সেই পথ হারিয়ে ফেললেন। তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে তা ঠিক করবে গেরুয়া শিবির। তবে বাংলার রাজনীতি দিলীপের মতো বর্ণময় চরিত্রকে ফিরে ফিরেই চাইবে। হয়তো আগামীতে বঙ্গ-বিজেপিও সে কথা গুরুত্ব দিয়েই ভেবে দেখবে।