সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জয়ের নেশায় বার বার দলবদল। শেষ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বীকে চাপে ফেলা। 'বাহুবলী' তকমায় জনমত নিমেষে পালটে ফেলা - কোনও কৌশলই কাজে এল না। ক্ষমতার চোখরাঙানিতে আর ভয় পেলেন না বারাকপুরবাসী। অর্জুন সিংকে পরাস্ত করে নিজের স্বচ্ছ, সাংস্কৃতিক ভাবমূর্তি আর মন্ত্রিত্বের জোরে বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হলেন তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। অর্জুন অবশ্য দোষ চাপালেন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে। আর জিতেই পার্থ ভৌমিকের হুঁশিয়ারি, ''মজদুর ভবনে (অর্জুনের বাসভবন) রেড হবে, ওটা সমাজবিরোধীদের ডেরা।''
কথিত আছে, বারাকপুর মানেই এককথায় অর্জুন-গড়। কিন্তু এই 'মিথ' ভেঙে দিল চব্বিশের লোকসভা ভোট (Lok Sabha Election 2024)। বারাকপুরের ফলাফল বুঝিয়ে দিল, রাজনীতির লড়াই স্রেফ বাহুবলের নয়, নীতিরও। একদা সতীর্থ পার্থ ভৌমিকের কাছে অর্জুনের এই হার কত বড় বিপর্যয়, তা বুঝতে গেলে একটু পিছনে ফিরতে হবে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্জুন সিং (Arjun Singh)। সেবার বারাকপুরের প্রার্থী হয়ে জয় পেলেও ব্যবধান ছিল ১৪ হাজারের কম। পরাজিত হন তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ, হেভিওয়েট দীনেশ ত্রিবেদী। গেরুয়া শিবিরের আস্থা অর্জন করেছিলেন 'বাহুবলী'।
[আরও পড়ুন: জনতার এথিক্স কমিটিতে ‘বহিষ্কার’ ফিরল ‘পুরস্কার’ হয়ে, লড়াই করে সংসদের রুদ্ধপথ খুললেন মহুয়া]
একুশের বিধানসভা ভোটের আগে অর্জুন যোগ দেন তৃণমূল (TMC)শিবিরে। তাঁকে ঘরে ফেরালেও অত্যন্ত বুঝেশুনে পদক্ষেপ নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অর্জুনকে কোনও দায়িত্বই দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও সহকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বিবাদে জড়ান। সেই বিবাদ কাটাতে শীর্ষ নেতৃত্ব অবতীর্ণ হলেও মেটেনি সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর উন্নয়নে তেমন কোনও কাজও করতে পারেননি সাংসদ অর্জুন সিং।
[আরও পড়ুন: মতার গ্যারান্টি আর অভিষেকের পরিশ্রমেই ‘এভারগ্রিন’ বাংলা]
এর পর ফের ২০২৪ লোকসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে পদ্মশিবিরে ভিড়লেন তিনি। টিকিটও পেলেন। কিন্তু জয়ের স্বাদ আর পাওয়া হল না। বার বার দলবদল করা অর্জুন সিংকে এবার গণতান্ত্রিকভাবে একেবারে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন এলাকাবাসী। তুলনায় 'কাজের লোক' পার্থ ভৌমিকের (Partha Bhowmick) উপর আস্থা রাখলেন তাঁরা। কারণ, পার্থ ভৌমিক পরীক্ষিত। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি নৈহাটি থেকে জিতে নিজের পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। যেমন এলাকাবাসীর প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনই সংগঠনকেও চাঙ্গা করে তুলেছেন। উনিশে বারাকপুর বিজেপির (BJP)দখলে যাওয়ার পর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সাতের মধ্যে ছটিই পুনরুদ্ধার করেছেন তৃণমূলের পার্থ। তাঁর উপর ভরসা রেখে দল তাঁকে মন্ত্রিত্বও দিয়েছে। পারফরম্যান্সের নিরিখে 'হ্যালো স্যর' খ্যাত পার্থকেই ঘাসফুল শিবির এগিয়ে দিয়েছে দিল্লির লড়াইয়ে। আর সেই যুদ্ধে হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বী অর্জুন সিংকে প্রায় ৭০ হাজার ভোটে হারিয়ে জয়ের চওড়া হাসি অর্জুনের 'সমনামী'র মুখে।