সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যেভাবেই হোক বাংলা দখল করতে হবে। সেই লক্ষ্যে সমাজের প্রায় সব শ্রেণির মানুষের জন্য ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে বঙ্গ নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করল বিজেপি (BJP)। গেরুয়া শিবিরের দাবি, সমাজের সব স্তরের মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে সুপরিকল্পিতভাবে এই ইস্তাহার তৈরি করা হয়েছে। এবং রাজ্য বাজেটের মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থব্যয় করেই এই সমস্ত প্রতিশ্রুতিপূরণ করা সম্ভব। কিন্তু এরাজ্যের শাসকদল গেরুয়া শিবিরের সেই দাবি পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, বিজেপির এই ইস্তাহার আসলে পুরোটাই জুমলা। এবং তৃণমূলেরই অনুকরণ।
রবিবার গেরুয়া শিবির যে ইস্তাহার প্রকাশ করেছে তাতে সুপরিকল্পিতভাবে সরাসরি সাধারণ মানুষকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যা কিনা আসলে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মূলমন্ত্র। গেরুয়া শিবিরের ইস্তাহারে, মহিলাদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণ। সরকারি বাসে মহিলাদের বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা। মৎস্যজীবী, ভূমিহীন প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দুর্ঘটনা বিমা। ৬ হাজার টাকা অনুদান। শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পাশাপাশি পরিবার পিছু ১০ হাজার টাকা অনুদান। পুরোহিতদের মাসে ৩ হাজার টাকা ভাতা। পুরোহিত কল্যাণ বোর্ড গঠন। উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহলে মোট ৩ টি এইমস (AIIMS) নির্মাণ। অন্নপূর্ণা আহার কেন্দ্রে ৫ টাকায় তিনবেলা ভরপেট পুষ্টিকর খাবার। রেশন গ্রহীতাদের জন্য ১ টাকায় চাল, ৩ টাকায় চিনি। কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে কৃষকদের বার্ষিক ১০ হাজার টাকার অনুদানের মতো একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। যার সুবিধা সরাসরি পৌঁছে যাবে আম আদমির পকেটে। তৃণমূলের দাবি, গেরুয়া শিবিরের এই ইস্তাহার আসলে তৃণমূলেরই বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকরণ।
[আরও পড়ুন: চাকরিতে ব্যাপক সংরক্ষণ, নিখরচায় বাসযাত্রা! বিজেপির ইস্তাহারে মহিলাদের জন্য প্রতিশ্রুতির বন্যা]
বিজেপির ইস্তাহার প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের (Sougata Roy) বক্তব্য, “এদের ইস্তাহারে তেমন কিছু নেই। যা আছে জুমলা। আগের ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতিই পূরণ করতে পারেনি। বিজেপির সবটাই জুমলা, ওঁদের বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। আমাদের সব অনুকরণ করছে।” বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা বলছেন, “বিজেপির মুখে বিদ্যাসাগর-রবীন্দ্রনাথের কথা মানায় না। বিজেপিই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। এখন বলছে, পুরোহিতদের জন্য পুরোহিত কল্যাণ করবে। আমরা তো আগে থেকেই পুরোহিতদের জন্য আর্থিক সাহায্য চালু করেছি। তৃণমূলের মা কিচেনের অনুকরণে অন্নপূর্ণা কিচেনের কথা বলছে। মেয়েদের নিয়ে নানান কথা বলছে। অথচ, অসম উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের সুরক্ষার কী অবস্থা? সবটাই ভাঁওতাবাজি, জুমলা।”
[আরও পড়ুন: চাকরিতে ব্যাপক সংরক্ষণ, নিখরচায় বাসযাত্রা! বিজেপির ইস্তাহারে মহিলাদের জন্য প্রতিশ্রুতির বন্যা]
তৃণমূল একা নয়, বামেরাও বিজেপির এই ইস্তাহারকে ভোটের লক্ষ্যে ভাঁওতাবাজি বলে তোপ দেগেছে। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, “ভোটের জন্য মূল্যহীন মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ইস্তাহারে প্রলোভিত করতে গিয়ে রাজ্যবাসীর কাছে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের মাশুল, পেট্রল-ডিজেল বা গ্যাসের দাম কমানো নিয়ে বিজেপির ইস্তাহারে একটি কথাও বলা হয়নি। সবকিছুর দাম দ্বিগুণ করে দিয়ে এখন অনেক কিছু বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। বাংলার মানুষ এই প্রলোভনে পা দেবে না। অসম ও ত্রিপুরায় কী বলে ক্ষমতায় এসেছিল আর কী করেছে গোটা দেশ জানে।”