কলহার মুখোপাধ্যায়: আমফানে (Amphan) ভেঙে যাওয়া ছাদ সারানো হয়েছে বাড়ির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকায়। ফলে, হাতে নেই ট্যাব-মোবাইল কেনার রসিদ। কিন্তু রসিদ তো জমা দিতেই হবে স্কুলে, আর সেই কারণে ভয়ে স্কুলমুখোই হচ্ছে না উচ্চমাধ্যমিকের পড়ুয়ারা।
অনলাইন পঠনপাঠনের স্বার্থে ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া রাজ্য সরকারের টাকা ঠিক কাজে লাগানো হয়েছে কিনা, তার প্রমাণ দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হতেই সমস্যার সূত্রপাত। জানা যাচ্ছে, ওই টাকার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’, অর্থাৎ ট্যাব বা মোবাইল কেনার রসিদ কোথা থেকে দেব, এই ভেবে স্কুলে আসাই ছেড়ে দিয়েছে বা ছেড়ে দিতে চাইছে গরিব ঘরের বহু ছাত্রছাত্রী। কারণ, তারা ওই টাকার ট্যাব-মোবাইল কেনেনি। বলা ভাল, কিনতে পারেনি। আমফান ঝড়ে ভেঙে যাওয়া বাড়ি মেরামতিতে কিংবা পরিবারের লোকের চিকিৎসাতেই তা বেরিয়ে গিয়েছে। তারা আদৌ উচ্চ মাধ্যমিকে বসবে কিনা, স্কুল কর্তৃপক্ষ সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। স্কুলমুখো না হলে কীভাবে তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করবে? আদৌ পরীক্ষায় বসবে তো? প্রশ্ন এটাই।
[আরও পড়ুন: ‘দল ভাঙড়ে পাকিস্তানের লোককে দাঁড় করালেও আমরাই জেতাব’, প্রচারে বিস্ফোরক আরাবুল]
শিক্ষা দপ্তরের কাছে এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে সমাধানসূত্র খোঁজার অনুরোধ জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক। গ্রামীণ এলাকার অধিকাংশ প্রধানশিক্ষকের বক্তব্য, ট্যাব বা মোবাইলের টাকা অ্যাকাউন্টে ঢোকার পর দরিদ্র বহু ছাত্রছাত্রী তা কেনেনি। অনেকে ওই দশ হাজার টাকায় আমফানে ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামত করেছে, অনেকে চিকিৎসায় খরচ করেছে। এবার বিল জমা দিতে বলা হলে তারা ভয়ে স্কুল পথে যাচ্ছে না। এই বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা-প্রস্তুতি কীভাবে শেষ করবে, কীভাবেই বা তাদের ফের স্কুলমুখী করা যাবে, এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে শিক্ষাদপ্তরের দরবারে হাজির হয়েছে রাজ্যের প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস।’ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দনকুমার মাইতির আক্ষেপ, “গ্রামাঞ্চলের প্রতি স্কুলের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ পড়ুয়া মোবাইল বা ট্যাব না কিনে অন্য প্রয়োজনে টাকা ব্যবহার করেছে। স্কুল বিল দিতে চাপ দেওয়ার পর অনেকে স্কুলে আসছে না, অনেকে আবার ভুয়া বিলও জমা দিয়েছে। সেই বিল কী পদ্ধতিতে প্রধানশিক্ষক যাচাই করবেন, তার উপায় খুঁজতে মাথার চুল ছেঁড়ার দশা।”
অনলাইনে পড়াশুনার জন্য রাজ্যের সব উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ট্যাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তারপর রাজ্যের কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি দশ হাজার টাকা করে পাঠানো হয়েছে। সরকারের তরফে থেকে স্কুলগুলোকে বলা হয়েছিল, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ট্যাব বা মোবাইল কেনার উপযুক্ত বিল বা ভাউটার নিয়ে, তা যাচাই করে ইউটিলাইজেশন সার্টইফিকেট (ইউসি) তৈরি করে শিক্ষাদপ্তরে পাঠাতে হবে। প্রক্রিয়া শুরুর পর একাধিকবার ইউসি দেওয়ার তারিখ বৃদ্ধি করেছে শিক্ষাদপ্তর। কিন্তু তারই মধ্যে এই নতুন সমস্যার সুরাহা কী ভাবে মিলবে, শিক্ষকমহলে তার দিশা নেই।