কলকাতার একজন সফল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ ডা. সৌম্য ভট্টাচার্য।
হাড়ের মজ্জায় মজ্জায় ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারও হার মানে তাঁর হাতযশ-অভিজ্ঞতার কাছে। ক্যানসার হোক বা বিরল রক্তের অসুখ- তাঁর অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে সফল স্টেম সেল প্রতিস্থাপনে প্রাণে ফিরে পেয়েছেন ১৬ বছরের কিশোর থেকে পঁয়ত্রিশের যুবক কিংবা ৫৬-এর প্রৌঢ়া। বিশিষ্ট এই হেমাটো-অঙ্কোলজিস্টের দাবি, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট নিয়ে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। তবে জটিল পদ্ধতিও এখন সরল হয়েছে। কোন ক্যানসারে কখন অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হবে? কেমন হবে মায়োলোমার ট্রিটমেন্ট? জেনে রাখুন।
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট
হাড়ের ভিতরে থাকে অস্থিমজ্জা। একেই বলে বোন ম্যারো। বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন কিডনি, হার্টের মতো অঙ্গ প্রতিস্থাপন নয়। অন্যের শরীর থেকে বোন ম্যারো নিয়ে রোগীর শরীরে বসিয়ে দেওয়ার ব্যাপার নয় এটি। এবার জানাই, ট্রান্সপ্ল্যান্ট দু’রকমের হয়। প্রথম ক্ষেত্রে, রোগীর শরীর থেকেই স্টেম সেল সংগ্রহ করে তা বসানো হয়। একে অটোলোগাস ট্রান্সপ্ল্যান্ট বলে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অন্যের শরীর থেকে নিতে হয়। একে অ্যালোজেনিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট বলে। প্রতিস্থাপনের আগে রোগী বা ডোনারকে গ্রোথ ফ্যাক্টর ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এই ইঞ্জেকশন রক্তকে স্টিমুলেট করে স্টেম সেলকে রক্তের মধ্যে নিয়ে আসে। তারপর শিরার মধ্য দিয়ে রোগীর রক্তে স্টেম সেল প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। তারপর স্টেম সেল নিজে থেকেই খুঁজে খুঁজে রক্তের মাধ্যমে রোগীর অস্থিমজ্জার ভিতরে চলে যায়। এরপর ধীরে ধীরে নিজে নিজেই স্টেম সেল, শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে থাকে। একে বলে এনগ্র্যাফট। এনগ্র্যাফট হওয়া মানে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সফল হওয়া। হাসপাতালে চিকিৎসা সম্পূর্ণ হতে অন্তত তিন সপ্তাহ লাগে। এরপর প্রথম তিন মাস নিয়মিত ডাক্তারের কাছে চেক-আপ করতে হয়। ব্লাড টেস্ট করে দেখা হয় ক্যানসার সেল ফের তৈরি হচ্ছে কি না বা অন্য সমস্যা হচ্ছে কি না।
কোন অসুখে প্রতিস্থাপন?
ব্লাড ক্যানসার যেমন লিউকোমিয়া, লিম্ফোমা, মায়োলোমা এছাড়া থ্যালাসেমিয়া, অ্যাপ্ল্যাসটিক অ্যানিমিয়া ও কয়েকটি বিরল রক্তের অসুখের চিকিৎসা বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন। এছাড়াও মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, স্ক্লেরোডার্মা প্রভৃতি অসুখেও ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়।
[ মহৌষোধি শাক, নিয়মিত খেলে পালায় একাধিক রোগ ]
বাড়ছে মায়োলোমা
রক্তে প্লাজমা সেল বেড়ে গিয়ে মায়োলোমা ক্যানসার হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর লক্ষণ হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া, গায়ে কালশিটে দাগ, গায়ে ব্যথা, হাড় ক্ষয়, কিডনির অসুখ হওয়া। মায়োলোমা চিকিৎসার প্রথম ধাপ কেমোথেরাপি। তারপর অটোলোগাস বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট জরুরি।
পেরিফেরাল ব্লাড স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট কী?
বোন ম্যারো ক্যানসারের আধুনিকতম চিকিৎসা হল এই পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ডোনারের শরীর থেকে অ্যাফেরেসিস পদ্ধতিতে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়। দুধ মন্থন করে যেমন মাখন ওঠে সেইরকম অ্যাফেরেসিস যন্ত্রের সাহাযে্য রক্ত থেকে স্টেম সেল বের করে নেওয়া হয়। ব্লাড ব্যাগ যেমন হয়, তেমনই একটি ব্যাগে লাল-কালো রঙের রক্তের মতো দেখতে স্টেম সেলগুলি রাখা হয়। এই সেল বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের মূল অস্ত্র। ডোনারের কাছ থেকে স্টেম সেল গ্রহণের আগে রোগীকে কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি দিয়ে তাঁর অস্থিমজ্জায় থাকা ক্যানসার সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে হবে যাতে স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টের সময় অস্থিমজ্জা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে।
[ মেকি হিরোইজম নয়, ক্যানসার রোগীর মনোবল বাড়ান স্বাভাবিক আচরণে ]
দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক
যে কেউ বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টে স্টেম সেল দিতে পারেন। তবে তার আগে চেস্ট এক্স-রে, ইকো কার্ডিওগ্রাফি, ইসিজি করে দেখে নেওয়া হয় তিনি ধকল সামলাতে পারবেন কি না। ডোনারকে বেডে পা ছড়িয়ে রিল্যাক্স পজিশনে বসিয়ে রেখে অ্যাফেরেসিস পদ্ধতি চালু করা হয়। একটি যন্ত্র ডোনারের রক্ত থেকে স্টেম সেল বের করে নিয়ে ব্যাগে জমা করে। তারপর বাকি রক্ত চ্যানেলের মধ্য দিয়ে আবার ডোনারের অন্য হাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়। তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে স্টেম সেল দিয়ে ডোনার অফিস পর্যন্ত যেতে পারেন।
ডা. সৌম্য ভট্টাচার্য
অঙ্কোলজিস্ট, হেমাটোলজিস্ট অ্যাপেলো
গ্লেনিগলস হাসপাতাল
পরামর্শে 98311 70269
The post কোন ক্যানসারে কখন বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট? জেনে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ appeared first on Sangbad Pratidin.