সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিরল শ্বেতপলাশ গাছের লিজ নিতে বাজার দর উঠল ৮০ লক্ষ টাকা! শ্বেতপলাশ যে একেবারেই আজকাল দেখতে পাওয়া যায় না। পুরুলিয়ার হুড়ার গ্রামে (ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গ্রামের নাম লেখা হয়নি) চলতি বসন্তের মরশুমে এই গাছ নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। এই শ্বেতপলাশ গাছের সৌন্দর্য দেখতে হুড়ার ওই গ্রামে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। সামাজিক মাধ্যমেও এই গাছের ফুলের ছবি রীতিমতো ভাইরাল। পুরুলিয়ার উপ-উদ্যানপালন অধিকর্তা ড. সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া বলেন, “শ্বেত পলাশ বিরল। হুড়ার গ্রামে একটি গাছ রয়েছে। ওই গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বিষয়টি উদ্যানপালন বিভাগে জানানো হয়েছে। বনদপ্তর ও উদ্যানপালন বিভাগ চেষ্টা করছে এই গাছের বীজ বা অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়ে গাছের সংখ্যা যাতে আরও বাড়ানো যায়।” ওই আধিকারিক হুড়ার গ্রামে যাওয়ার পরই সেখানে পিচ বোর্ড টাঙিয়ে লেখা হয়েছে এই গাছের ডাল ও ফুল তুললে ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
বেশ কয়েক বছর ধরেই এই গাছে শ্বেতপলাশ ফুটছে। কিন্তু এই গাছ যে বিরল, মূল্যবান তা জানতো না ওই গ্রাম। ওই গাছ রয়েছে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে। এই শ্বেত পলাশ গাছের মালিক স্বপনকুমার মাহাতো বলেন, “আমাদের চাষাবাদ করেই দিন চলে। আমরা জানতাম না শ্বেত পলাশ গাছ এত মূল্যবান ও বিরল। আগে আমরা জ্বালানির কাজে ব্যবহার করতাম। কয়েক বছর ধরেই সুন্দর ফুল হচ্ছে। লাল পলাশের গাছের মধ্যেই একটি শ্বেত পলাশ গাছ আমাদের রয়েছে। এই গাছের লিজ নিতে বহুজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কলকাতার একটি পার্টি ৮০ লক্ষ টাকা দেবে বলেছে। কিন্তু লিজ দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখনও রাজি হইনি। যতটা পারব চেষ্টা করব এই গাছকে সংরক্ষণ করে রাখতে। তবে প্রশাসন ও সরকার এগিয়ে এলে ভাল হয়। উদ্যানপালন বিভাগের ওই আধিকারিক গ্রামে ঘুরে যাওয়ার পরেই আমরা সতর্কতামূলক বোর্ড লাগিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু, ৬ মাসের জন্য বর্ধমানের চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল]
সাধারণভাবে বসন্ত গাছে যে পলাশ ফুল ফোটে তা চার রঙের হয়। লাল পলাশ পুরুলিয়া-সহ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ফাগুনের মরশুমে ছয়লাপ হয়ে যায়। তবে সবচেয়ে বেশি হয় পুরুলিয়ায়। আর এই পলাশকে ঘিরে পুরুলিয়ার পর্যটনও এখন জমজমাট। তবে লাল পলাশ ছাড়াও হলুদ বা বাসন্তী, সাদা বা শ্বেতপলাশ এবং নীল রঙের পলাশ হয়ে থাকে। নীল রঙের পলাশ একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এই গাছের ঔষধি গুন অনেক বেশি বলে উদ্যান পালন বিভাগ জানিয়েছে। এই শ্বেত পলাশ থেকে বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ, যৌন শক্তি বর্ধক ওষুধ তৈরি হয়। সেই কারণেই এতটা দামি এই পলাশ গাছ। এই গাছের রসে গ্যালিক ও ট্যানিক অ্যাসিড থাকে। গাছের ওই রস থেকে দূরারোগ্য ব্যাধি নিরাময় হয়। এমনকি ক্যানসার রোগ নির্মূল করতেও শ্বেত পলাশ গাছ নিয়ে গবেষণা চলছে। শরীরের রূপ – লাবণ্যে উপকারী। এই গাছের কচি পাতার রস মাত্র ৬-৭ চামচ জলে মিশিয়ে খেলেই দেহে আলাদা লাবণ্য ফিরে আসে।
এক নজরে শ্বেত পলাশ
বৈজ্ঞানিক নাম: Butea monosperma var alba
গাছের সন্ধান- আপাতত বাংলার তিন জায়গায় এই গাছের দেখা মিলেছে। পুরুলিয়ার হুড়া, বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ও নদীয়ার তেহট্ট।
ঔষধি গুণ- বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ, যৌন শক্তি বর্ধক ওষুধ তৈরি হয়। ফিরিয়ে আনে রূপ লাবণ্য।