সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আলাপন বন্দ্যোাপাধ্যায়ের (Alapan Banerjee) বদলি নিয়ে তুঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপোড়েন। চিঠি, পালটা চিঠি ঘিরে উত্তাল সুদূর দিল্লির নর্থ ব্লক থেকে বাংলার নবান্ন। কিন্তু কেন এই আইএএস আধিকারিককে (IAS) নিয়ে এত টানাটানি? শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই কি ১৯৮৭ সালে এই আইএএস অফিসারকে ডেকে পাঠাল দিল্লি? স্রেফ কেন্দ্রকে উচিৎ জবাব দিতেই কি প্রাক্তন মুখ্য সচিবকে ছাড়লেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কারণ?
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Banerjee)-১৯৮৭ সালে IAS বাংলা ক্যাডার। তার আগে ঝকঝকে শিক্ষাজীবন। মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর, সবক্ষেত্রেই দাগ কেটে গিয়েছে তাঁর মেধা। কর্মজীবনে হাতেখড়ি সাংবাদিক হিসেবে। তবে অধ্যবসায়, মেধা এবং একনিষ্ঠতার জেরে টপকেছিলেন ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের কঠিন গন্ডি। তার পর থেকেই আমলাতন্ত্রের অলিন্দে চরকিপাক আলাপনবাবুর। বাম আমলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ‘কাছের মানুষ’ ছিলেন এই দুঁদে আমলা। তাঁর বুদ্ধিমত্তার উপর ভরসা রাথতেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ২০১১ সালে রাজ্যের পালাবদল। রাইটার্সের বদলে নবান্নের চোদ্দতলা হয়ে উঠল রাজ্য প্রশাসনের ক্ষমতার অলিন্দ। পেশার চাহিদামতো ক্রমেই নতুন সরকারেরও ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: মানসিক চাপ দূর করতে কাজের সময় কমল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের]
কর্মজীবনের হাওড়া, দুই ২৪ পরগনার জেলাশাসক ছিলেন আলাপন (Alapan Banerjee)। পরে কলকাতা পুরসভার কমিশনারের দায়িত্বও সামলেছেন। ২০১৫ সালে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদেও বসেছিলেন তিনি। সচিব হয়েছেন পরিবহণ, ক্ষুদ্র, কুটির এবং মাঝারি শিল্প, তথ্য ও সংস্কৃতি, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের। এমনকী রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। কোভিড পরিস্থিতি গত সেপ্টেম্বর রাজ্যের মুখ্য সচিবের পদে বসেন তিনি। সরকারের অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, রাজ্যের তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম ভরসাস্থল ছিলেন এই বাঙালি আইএএস-ই। কোভিড পরিস্থিতি থেকে আমফান, কিংবা হালের ঘূর্ণিঝড় যশ, প্রতিটি পরিস্থিতি দক্ষ হাতে সামলেছেন তিনি। জেলা সফর থেকে এলাকা পরিদর্শন, কিংবা প্রশাসনিক বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর কার্যত ‘ছায়াসঙ্গী’ ছিলেন আলাপন। সামলাতে হয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
আমলাদের কেউ কেউ বলেন, আলাপনের নজরদারিতেই নির্বাচনের আগে রাজ্যে তুমুল সাফল্য পেয়েছিল ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প। সরকারের অন্দরের খবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা বলছেন, এই বাঙালি আইএএসের ঝরঝরে বাংলা ও ইংরেজি বলার দক্ষতা, ঠান্ডা মাথা, বিচক্ষণতার সঙ্গে নির্দেশ পালনের অভ্যেস এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতায় মুগ্ধ রাজ্য প্রশাসন তথা মন্ত্রিসভা। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে এমন দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং কর্মঠ আমলাকে হাতছাড়া করতে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার উপর আবার যশে বিধ্বস্ত রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। মুখ্যমন্ত্রী আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Alapan Banerjee) আমফান মোকাবিলার অভিজ্ঞতার উপর ভরসা করে দিঘা পুনর্গঠনের দায়িত্ব সঁপেছেন তাঁর উপর। এমন অবস্থায় তিনি দিল্লিতে বদলি হলে ক্ষতি হত রাজ্যেরই। এমনই মত ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।
[আরও পড়ুন: ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মনোজ পাণ্ডে]
এদিকে করোনা পরিস্থিতি সামলাতে নাজেহাল কেন্দ্র সরকার। সূত্রে বলছে, বাংলার মুখ্যসচিবের দক্ষতা নজর কেড়েছে দিল্লিরও। ফলে তাঁকে ডেকে নিলে কেন্দ্রও একজন দক্ষ আধিকারিক পেত। আবার বাংলার প্রশাসনকেও বড় ধাক্কা দেওয়া যেত। তাই আলাপনের কর্মজীবনের মেয়াদ বাড়িয়েও দিল্লিতে বদলি করতে চেয়েছিল মোদি সরকার, বলছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টারস্ট্রোকে ভেস্তে গিয়েছে সেই ছক। আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হয়েই রাজ্য প্রশাসনের কাজে সহযোগিতা করবেন IAS আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুদায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে।