কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টুইটার ব্যানের হুমকি ও ব্যক্তিমত দমনের যে অভিযোগ এনেছেন জ্যাক ডরসি, তার সপক্ষে সাক্ষ্য কই?
প্রশ্ন ছিল ‘কোনও দেশের সরকার কি কখনও আপনাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল?’ টুইটারের প্রাক্তন অধিকর্তা ও সহ-স্রষ্টা জ্যাক ডরসি এর উত্তরে যখন তুললেন ভারতের নাম ও যেভাবে তুললেন বিভিন্ন চাপের আখ্যান, সেসব নিয়ে এখন শোরগোল তুঙ্গে। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর অধীন কোম্পানিকে কী কী চাপ দিয়েছিল, কী হুমকি ছুড়েছিল, সেসব নতুন করে উল্লেখ না-করে বরং, কথা-শেষে তাঁর বাক্যস্ফুলিঙ্গে দৃকপাত করা যাক। অন্তিমে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘এই তো হল ভারত, নাকি গণতান্ত্রিক দেশ!’ তাঁর অভিযোগের ধরণধারণ যেমন, বলা বাহুল্য, যে কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও তার পরিচালনার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশ্ন হানে। আত্মপক্ষ সমর্থনে উঠেপড়েও লেগেছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির মন্ত্রিকুল। ডরসি-কালে টুইটার ভারতের কী কী আইন লঙ্ঘন করেছে, সেসব নিয়ে হুজ্জত করছে। আর, আসছে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এহেন আন্তর্জাতিক স্তরের অভিযোগ বিরোধী দলগুলির কাছে হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অস্ত্র।
নিঃসন্দেহে, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র রক্ষার অপারগতা বিষয়ে অভিযোগের শেষ নেই। দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। বাক্স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় আন্তর্জাতিক তালিকায় ভারতের নাম মোদি সরকার আসার পর থেকে যত বছর যাচ্ছে, তত তলানির দিকে থিতিয়ে পড়ছে– সেই তথ্যও লুক্কায়িত নয়।
[আরও পড়ুন: চিন না পাকিস্তান, প্রধান শত্রু কে? কী গল্প বলছে প্যাংগং-ডাল]
কিন্তু হঠাৎ ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে ডরসির উদ্বেগ জাগল কেন? উপর্যুপরি, যে-প্রশ্ন পেশ করা হয়েছিল, তাতে কেবলমাত্র নামোল্লেখেই যথেষ্ট আলোড়ন তৈরি হতে পারত। ডরসি তঁার উত্তরের এত ব্যাখ্যা ও ‘জাস্টিফিকেশন’-এ গেলেন কেন? মার্কিন সিলিকন ভ্যালি যেভাবে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে ও মানুষের ব্যক্তিগতে আধিপতে্যর চাষ শুরু করেছে, তার কিছু অবদান ডরসির টুইটারেরও কি নয়? কৃষক আন্দোলনের সময়ই সরকার-বিরোধী টুইট ডিলিট করে, তারপর আবার ফিরিয়ে ‘ইনসাফিসিয়েন্ট জাস্টিফিকেশন’ তকমা দিয়ে রেখে দেয়নি টুইটার? সত্য-কে আখ্যান ও মিথ্যাকে ভাষ্য বানানোর চেষ্টা তারাও কি করেনি? তাঁর টুইটার-কালে যে যে শর্তের জন্য এগুলি নিয়ে এতকাল নীরব ছিলেন ডরসি, সেসব হঠাৎ ছিন্ন হল ভারতের জন্য চিন্তায় কেবল? অভিযোগ আনলে, সাক্ষ্য প্রয়োজন সর্বাগ্রে, নয়তো সেই অভিযোগ পোক্ত হয় না এই উত্তর সত্যের কালে।
ডরসি যা বলছেন, তা যদি সত্য হয়, দেখা যাবে কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রতি-অভিযোগ পেশ করছে, তা-ও ঠোস। তাহলে তো কাটাকুটি খেলা! না কি এ কোনও স্বার্থের সংঘাত? এর নেপথে্য থাকতেই পারে মার্কিন-ভারত কূটনীতির হাঁসফাঁস, ডরসির সন্তানসুলভ টুইটার হারানো ঈর্ষা ও টুইটারের কঠোর ইলন মাস্ক যুগ। কিন্তু কাউকে অভিযোগের অন্ধকারে ঠেলতে গেলে আগে যে ত্রুটি সম্পূর্ণত আলোয় তুলে ধরতে হয়! নয়তো অপ্রয়োজনীয় ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ চলে এবং ক্রমশ ত্রুটি হাওয়ায় ভেসে হারিয়ে যায়। ফলে, ঠোস সবুতের অপেক্ষা অমূলক নয়।