সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপি আর সিপিএম যে দুই মেরুর বাসিন্দা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রায়ই আরএসএস ও বামপন্থীদের সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয় ওঠে ‘ঈশ্বরের আপন দেশ’ কেরল। তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি কম কিছু হয়নি। এই প্রেক্ষাপটেই মঞ্চ ভাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার গুরুত্ব বোঝাতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দু’দিনের সফরে কেরল পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেখানে কোচি মেট্রো-সহ একাধিক প্রকল্পের সূচনা করেন তিনি। একইসঙ্গে কেরলে তিনটি স্টেশনের নবনির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন কোচিতে এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে মোদিকে সাদরে আপ্যায়ন করেন বিজয়ন। বিশ্লেষকদের মতে, ‘ইজম’ বা মতাদর্শ সরিয়ে রেখে যেভাবে কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার বার্তা দিলেন বিজয়ন ও মোদি তা প্রশংসনীয়। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী যে দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে সেই বার্তাই দিলেন তাঁরা। উল্লেখ্য, কেরলে যানজটের সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি এবং প্রয়োজন বলে এদিন প্রধানমন্ত্রীকে জানান বিজয়ন। তিনি বলেন, “৬৬ নম্বর জাতীয় সড়কের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। এই প্রকল্প কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সহযোগিতার উদাহরণ।”
[আরও পড়ুন: ‘সোমবার পর্যন্ত অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নয়’, ইডির জেরার মধ্যেই জানাল সুপ্রিম কোর্ট]
এবারের সফরে কেরলের জন্য একাধিক প্রকল্পের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন রাজ্যে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি স্টেশনের নবনির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন তিনি। কুরুপপানথারা-কোট্টায়াম চিঙ্গাভানাম সেকশনে ২৭ কিলোমিটার লম্বা ডাবল রেললাইনের উদ্বোধন করেন মোদি। প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা খরচ করে এই রেললাইন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, একাধিক ট্রেন রুটের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Modi) হাত ধরে শুরু হয় দেশে তৈরি প্রথম বিমানবাহী রণতরী INS বিক্রান্তের যাত্রা। ওই অনুষ্ঠানেও একসঙ্গে দেখা যায় বিজয়ন ও মোদিকে।
উল্লেখ্য, সংসদীয় গণতন্ত্রে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত নতুন কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। ১০০ দিনের কাজের টাকা ও প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা পাওনা মেটাচ্ছে না কেন্দ্র বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। একাধিকবার নীতি আয়োগের বৈঠকও এড়িয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পালটা, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে নিজের নামে চালাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল বলে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রের শাসকদলের নেতামন্ত্রীরা। ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মতো কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পও এরাজ্যে অনুমোদন পায়নি। এই সংঘাত রাজ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অনেকের মত। এহেন পরিস্থিতিতে বিজয়নের পদক্ষেপ নতুন দিশা দেখিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।