অর্ণব দাস, বারাকপুর: প্রায় আটজন যুবক। জনা চারেক মিলে একজনের হাত পা ধরে চ্যাংদোলা করেছে। সেই অবস্থাতেই ঝুলিয়ে লাঠি জাতীয় কিছু নিয়ে চলছে গণপ্রহার। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনির মাঝে এই ভিডিও সামনে এসেছে (সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ভাইরাল ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে রাজ্যের শাসক দলের কর্মীদের। আরও স্পষ্ট করে বললে কামারহাটির আড়িয়াদহের মা, ছেলেকে পিটুনির ঘটনায় অভিযুক্ত জয়ন্ত সিংহ ও তার ঘনিষ্ঠদের নাম সামনে আসছে।
ভিডিওটি সামনে ছড়িয়ে পড়তেই বারাকপুর পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে। এক্স হ্যান্ডেলে পুলিশের তরফ থেকে লেখা হয়েছে, 'পুরনো ভাইরাল হাওয়া একটি ভিডিও বারাকপুর পুলিশের নজরে এসেছে। সেখানে এক মহিলাকে মারধর করা হচ্ছে। এই ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। ভিডিওতে মারধরকারী সবার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার মধ্যে দুজন আগে থেকেই জেলে রয়েছে।'
জানা গিয়েছে, ওই মারধরের জায়গাটি কামারহাটি পুরসভার তালতলা ক্লাব। বিজেপি অভিযোগ তুলেছে এই ঘটনায় তৃণমূলের যোগ রয়েছে। স্থানীয়রাও দাবি করেছেন, এই ভিডিওতে তৃণমূলের কয়েকজন রয়েছেন। আরও অভিযোগ, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জয়ন্ত সিংহের লোক তারা। জয়ন্ত আবার কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত।
কামারহাটির তালতলা ক্লাবে মারধরের ভিডিওটি সামনে আসে সোমবার রাতে। তবে ভিডিওটি পুরনো বলে দাবি করা হয়েছে। সে কথা মেনে নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় জয়ন্ত ও তার লোকজনের দাপট রয়েছে। তাঁরা অনেকেই বলছেন একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযুক্তকে ক্লাবের ভিতরে মারধর করা হয়েছিল।
বিজেপি অভিযোগ করে জানিয়েছে, "কামারহাটির তালতলা ক্লাবে মদন-ঘনিষ্ঠ জয়ন্ত সিংহ কী ভাবে মহিলাকে মারছেন। যে রাজ্যের সরকার নারীদের সুরক্ষা নিয়ে গর্ব করে, সেখানেই এই বর্বরতা। ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং বিচার চাই।"
পালটা তৃণমূলের মুখপাত্র ঋজু দত্ত এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, "এটি ২০২১ সালের মার্চ মাসের ভিডিয়ো। অভিযুক্তেরা জয়ন্ত সিংহ এবং তাঁর অনুগামী। ভিডিয়োতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে অন্ত্যত দুজন এখন জেলে। আক্রান্ত পুরুষ হতে পারেন। তদন্ত করে দেখতে হবে।’
এদিকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই জাতীয় মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ঘটনার তদন্তের দাবি করেছে। সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
গত রবিবার আড়িয়াদহের মা ছেলে রাস্তায় ফেলে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত জয়ন্ত ও তার ঘনিষ্ঠরা। অভিযোগ, দুই যুবকের ব্যক্তিগত ঝামেলার মধ্যে জয়ন্তেরা ঢুকে পড়েন। মহিলা এবং তাঁর পুত্রকে হকি স্টিক, লাঠি, ইট দিয়ে মারধর করা হয়। এই ঘটনার পর জয়ন্ত-সহ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাত-আট বছর আগে জয়ন্ত মদনের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।