shono
Advertisement

অমানবিক! করোনামুক্ত হয়েও ঘরে ঠাঁই হয়নি, ঘুপচি দোকানঘরে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু মহিলার

পরিবার কিংবা বাপের বাড়ি - ঠাঁই দিতে চায়নি কেউ।
Posted: 07:44 PM May 09, 2021Updated: 08:34 PM May 09, 2021

কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: করোনামুক্ত (Coronavirus) হয়ে ফেরার পরও ঘরে ঠাঁই হয়নি। না স্বামীর বাড়ি, না বাপের বাড়ি – অসুস্থ মহিলাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি কেউ। শেষমেশ শাটার দেওয়া দোকানঘরে থাকার ব্যবস্থা হয় তাঁর। মাত্র একদিন সেখানে কাটিয়েই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন মহিলা। অমানবিক এই ঘটনার সাক্ষী রইল নিউটাউনের (New Town) গৌরাঙ্গনগর। করোনা নিয়ে হাজারও সচেতনতা প্রচারের মাঝেও আসলে মানুষের আতঙ্ক কাটানো যায়নি এখনও, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।

Advertisement

ঘটনার শুরু গত ২৬ এপ্রিল। গৌরাঙ্গনগরের শ্রীকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দা দিনমজুরের স্ত্রীর জ্বর আসে। দরিদ্র পরিবারে ডাক্তার দেখানো বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ ছিল না। পরে সেখানকার বিদায়ী বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ২৯ তারিখ তাঁর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর মহিলাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপরই বাধে গোলমাল।

[আরও পড়ুন: কোকেন কাণ্ড: পামেলার ব্যাগে মাদক রাখার অভিযোগে এবার গ্রেপ্তার রাকেশ ঘনিষ্ঠ অমৃত

সদ্যই করোনার কবল থেকে সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু তারপরও তাঁর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তাই শ্রীকৃষ্ণ পল্লির ছোট্ট এলাকায় একসঙ্গে ২৬ ঘরের বসতবাটিতে থাকলে বিপদ বাড়বে, ভেবে স্বামী শংকর সর্দারও স্ত্রীকে ঘরে ফেরাতে দ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। এখানে শৌচালয়ের সমস্যাও রয়েছে। প্রায় ৫৫ জন বাসিন্দার জন্য একটিই শৌচালয়। তাই বাকি প্রতিবেশীরা তো চাননি যে করোনামুক্ত হয়ে তিনি এখানে ফিরুন। কাছেই মহিলার বাপেরবাড়ি। রয়েছেন মা, ভাই। কিন্তু তাঁরাও মেয়েকে ঘরে ফেরাতে চাননি।ঘটনা জানাজানি হতে হস্তক্ষেপ করে স্থানীয় পঞ্চায়েত। ২ নং জ্যাংরা-হাতিয়াড়া পঞ্চায়েতের সদস্য শম্পা মহালদারের স্বামী তপন মহালদারের অভিযোগ, ”বৈঠক করে সবাইকে বোঝানো হয়, মহিলাকে ঘরে রাখলে কোনও ঝুঁকি নেই। কিন্তু রাজি হননি কেউ।”

[আরও পড়ুন: টিকার সংকট কাটাতে মোটা টাকার বিনিময়ে ২ লক্ষ কোভ্যাক্সিন কিনল রাজ্য]

বাপের বাড়িতেও যখন আশ্রয় মিলছিল না, সেসময় মহিলার বোন এসে দাবি করেন, দিদির থাকা নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না। একটা নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাস্তবে দেখা যায়, যেখানে তাঁকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, তা মূলত শাটার দেওয়া দোকানঘর। শ্রমিকরা থাকেন। ঠিক হয়, শাটারের অর্ধেকটা খোলা রেখে পরদা দেওয়া হবে, যাতে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে। কিন্তু ঘুপচি দোকানঘরে আর থাকতে পারেননি মহিলা। একদিন থাকার পরই মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকদের প্রাথমিক অনুমান, তীব্র গরমে শ্বাসকষ্ট হয়েই প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

দিদির মৃত্যু সংবাদ শুনে ভাই বিশ্বজিতের বক্তব্য, ”আমাদের বাড়িতে বাথরুম নেই। অনেকের জন্য একটাই বাথরুম। সবাই ঘরে আনতে বারণ করেছিলেন। সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিদিকে আনা যায়নি। আর আমরা শুধু না, ওঁদের স্বামীর বাড়ির লোকও ঘরে রাখতে চায়নি।” করোনামুক্ত হয়েও স্রেফ ঠাঁই নিয়ে টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে সুস্থ জীবনটাই চলে গেল। মহামারী সংকটে গত এক বছর যাবৎ জনগণের আতঙ্ক আর অবিশ্বাসের জেরে এই ছবি বারবার ফুটে উঠছে সমাজে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement