অর্ণব আইচ: ‘‘মেরে ফেল। সবকটাকে ধরে মেরে ফেল।’’ চিৎকার করছে কয়েকজন মদ্যপ যুবক। এক তরুণীর চুল ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে রাস্তায় দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। কেউ বা টানছে তরুণীর জামা ধরে। বর্ষবরণের রাতে এই ঘটনার সাক্ষী থাকল বালিগঞ্জ। গভীর রাতে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মদ্যপ যুবকদের হাতে আক্রান্ত হলেন এক তরুণী। তাঁর উপর হামলা চালায় জনা দশেক যুবক। তিনি প্রতিবাদ করে উঠলে গাড়ি থেকে নামিয়ে তরুণী, তাঁর বন্ধু ও পরিবারের লোকেদের উপর চলে অকথ্য অত্যাচার। কোনওমতে প্রাণরক্ষা করে বালিগঞ্জ থানায় পৌঁছান ওই তরুণী এবং সমস্ত ঘটনা জানান পুলিশ অফিসারদের। অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। অভিযোগ পাওয়ার পরই অভিযুক্তদের ধরার জন্য তৎপর হয় বালিগঞ্জ থানার পুলিশ। সিসিটিভির মাধ্যমে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
[দমদমের পর গড়িয়া, এসি রেকের দরজা না খোলায় ফের আতঙ্ক মেট্রোতে]
পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব কলকাতার আনন্দপুরের বাসিন্দা ওই তরুণী তাঁর বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে বছরের শেষ দিনটায় দক্ষিণ কলকাতার পদ্মপুকুর রোডে এসেছিলেন। এখানে বর্ষবরণ উদযাপন করার পর রাত আড়াইটে নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। পুলিশের কাছে তরুণী অভিযোগ জানিয়েছেন, গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখনই জনা দশেক মদ্যপ যুবক তাঁকে দেখে কটূক্তি করতে শুরু করে। এর মধ্যে তাঁর বন্ধু চলে আসেন। তরুণীর দাবি, তিনি কটূক্তিকে পাত্তা না দিয়ে গাড়ির ভিতরে গিয়ে বসার চেষ্টা করছিলেন। তখনই গাড়িটি ঘিরে ধরে ওই মদ্যপরা। হতবাক হয়ে তরুণীর বন্ধু এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তখনই গালিগালাজ শুরু করে ওই যুবকরা। প্রতিবাদ জানিয়ে গাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন তরুণীর বন্ধু। এরপরই মেরে তাঁর নাকের হাড় ভেঙে দেওয়া হয় এবং মাথা ফাটিয়ে দেয় ইভটিজাররা। রুখে দাঁড়িয়ে ওই মদ্যপ যুবকদের আক্রমণের মুখে পড়েন তরুণীর বোন ও কাকা। তাঁদের রাস্তার উপর ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
[নিঃস্বার্থভাবে কাজের জন্য প্রতিষ্ঠা দিবসে দলীয় কর্মীদের অভিনন্দন মমতার]
জানা গিয়েছে, বন্ধুকে আক্রান্ত হতে দেখে রুখে দাঁড়ান তরুণী। তিনি একজন মদ্যপ যুবককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতেই অভিযুক্ত এক যুবক তাঁর চুল ধরে টেনে কিছুটা দূর নিয়ে যায়। তাঁর কাপড় ধরেও টানতে থাকে ওই যুবক ও তার এক সঙ্গীরা। একইসঙ্গে তাঁর বন্ধুর উপরও হামলা চলতে থাকে তারা। বাঁশ দিয়ে মারধরের সময় তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এক যুবক তাঁকে এমনভাবে লাথি মারে যে, তাঁর নাক ভেঙে যায়। তাঁর মাথা ফেটে যায়। কপালের অংশ কেটে যায় তাঁর। এই অবস্থা দেখে তাঁর বোনও গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁর বোনের উপরও চলে হামলা। বোনের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। বোনের দাঁত ভেঙে যায়। অন্য এক বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়ও ছিলেন তাঁদের সঙ্গে। বাইরে বেরিয়ে এসে তিনিও প্রতিবাদ জানান। তাঁকেও ইট দিয়ে মারা হয়। তাঁর কানে আঘাত করে অভিযুক্তরা। তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, এর পরও তাঁকে তাড়া করা হয়। লরির আড়ালে লুকিয়ে থাকার পর তিনি পুলিশের কাছে যান। পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে দেখেন, তরুণীর গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে পালিয়েছে অভিযুক্তরা। এরপরই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ৷ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় যুক্ত ছ’জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা৷