ধীমান রায়, কাটোয়া: প্রতিবেশী যুবকের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বধূ। অভিযোগ, তার জেরেই আত্মঘাতী হন যুবক। তারপরই মৃত যুবকের পরিবারের লোকজন চড়াও হন বধূর শ্বশুরবাড়িতে। বধূকে বারোয়ারি কালী মন্দিরের সামনে ল্যাম্প পোস্টে বেঁধে পেটানো হয় বলেও অভিযোগ। ওই ঘটনার সপ্তাহ পার হতেই আত্মঘাতী হলেন মঙ্গলকোটের নারায়ণপুর গ্রামের ওই বধূ।
জানা যায়, মৃত গৃহবধূর নাম নয়নমণি মাঝি (২৩)। বীরভূমের নানুরের নবগ্রামের নয়নমণির বিয়ে হয় বর্ধমানের মঙ্গলকোটের নারায়ণপুরে। সেখানে স্থানীয় যুবক সপ্তম মাঝির সঙ্গে তাঁর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয় বলে অভিযোগ। সপ্তম দু’সপ্তাহ আগে হুগলির হরিপালে কাজে গিয়েছিলেন। সেখানেই ৩০ এপ্রিল গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। সপ্তমের পরিবারের অভিযোগ, সম্পর্ককে হাতিয়ার করে নয়নমণি বারবার তাঁর কাছে টাকা চাইতেন। এভাবে ব্ল্যাকমেল করায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন সপ্তম। হুগলিতে কাজে যাওয়ার পরও তাঁকে নয়নমণি ফোন করে টাকা চেয়ে হুমকি দেয় বলে পরিবারের দাবি। তারপরই আত্মঘাতী হন সপ্তম।
[আরও পড়ুন: হিন্দুদের পবিত্র বট গাছে উঠে নগ্ন ফটোশুট! সরকারের রোশের মুখে রুশ দম্পতি]
তবে ওই ধরনের অভিযোগ সম্বলিত কোনও সুইসাইড নোট হরিপাল পুলিশ পায়নি। কিন্তু সপ্তমের মৃত্যুর খবর আসার পরই তাঁর পরিবারের লোকজন স্থানীয়দের নিয়ে চড়াও হন নয়নমণির শ্বশুরবাড়িতে। অভিযোগ, কাকভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় গৃহবধূ ও তাঁর পরিবারের লোকেদের তুলে আনা হয়েছিল। তারপর গ্রামের কালীমন্দিরের সামনে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে গৃহবধূকে কয়েক ঘণ্টা বেঁধে রাখা হয়। বেধড়ক মারধরও করা হয়। তাঁর স্বামীর সামনে অত্যাচারিত হন নয়নমণি। গ্রামের কেউ বাঁচাতেও আসেননি। এমনকী পরিবারের অন্যরাও নিগৃহীত হন। অত্যাচারে জ্ঞান হারান ওই বধূ। খবর পেয়ে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ এসে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে। হাসপাতালে ভরতিও করা হয়। পরে সুস্থ হলে গৃহবধূকে বোলপুর নিয়ে যান তাঁর বাপেরবাড়ির লোকজন।
বোলপুরের ১০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রমেশ বাহাদুরের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন নয়নমণির মা। ওই বাড়ি থেকেই শুক্রবার তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এই খবর নারায়ণপুর গ্রামে পৌঁছতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ। ওই বধূর স্বামী সজল ও শ্বশুর অমল মাঝি বলেন, “আমার স্ত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে প্রকাশ্যে বেঁধে মারধর করেছে ওরা। সেই অপমানেই নয়নমণি আত্মঘাতী হয়। আমাদেরকেও মারা হয়েছে। আমি হাতজোড় করে ওদের কাছে আকুতি জানিয়েছিলাম। গ্রামের কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।”
[আরও পড়ুন: নতুন সংসারে পা রেখেই বিপাকে শ্রাবন্তী! দেখুন ভয় না পেয়ে কী করলেন অভিনেত্রী]
যদিও মৃত যুবকের বাবা সনৎ মাঝি বলেন, “ওই মেয়েটি আমার ছেলের কাছে বারবার টাকা চাইত। আমার ছেলে ভয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরা কাউকেই মারিনি।” প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ বধূকে উদ্ধার করলেও কেন ব্যবস্থা নেয়নি? পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন বলেন, “আমরা ওই বধূকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছিলাম। সঙ্গে তাঁর বাড়ির লোকজনও ছিলেন। তারপর ওই বধূর বাড়ির লোকজনই আবার থানায় জানিয়ে বধূকে বাড়ি নিয়ে যান। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। অভিযুক্তরা ছাড়া পাবে না।”