দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: গোসাবার কুমিরমারি দ্বীপের বাসিন্দা সাবিত্রী মণ্ডল। বছর চারেক ধরে কাজ করছিলেন সুরাটের একটি বস্ত্র বিপনীতে। লকডাউন পরিস্থিতিতে সেখান থেকে ফিরে এসেছেন গ্রামে। নষ্ট হয়েছে আয়ের পথ। তকমা পেয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকের। কিন্তু গ্রামে ফেরার পর জোটেনি কোন কাজ। বাড়িতে বসে আর সংসার চলছে না। জীবিকা উপার্জনের আশায় তাই গ্রামের অন্যান্য মহিলাদের মতো তিনিও নেমে পড়েছেন রায়মঙ্গল নদীর নোনা জলে। শুধু সাবিত্রী মণ্ডল নয়, অর্চনা দাস, নমিতা সরকার, কল্যাণী হালদার সকলেই এখন নদীর ভাটার টানে জাল নিয়ে নদীতে বাগদার মীন ধরতে ব্যস্ত। তবে কোটালের সময় সংসার চালানোর মতো রোজগার হলেও অন্য সময় বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে। দিনে নদীর নোনা জলে ছয়-সাত ঘণ্টা করে থাকার ফলে বাড়ছে জরায়ুর রোগ। শুধু জরায়ুর রোগ হচ্ছে এমন নয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে দেখা দিচ্ছে অন্যান্য অসুখ ও চর্মরোগ।
[আরও পড়ুন:রাজ্যে চলছে পরপর দু’দিনের লকডাউন, শুনশান রাস্তাঘাট, মোড়ে মোড়ে জারি নাকা তল্লাশি]
মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২৯টি ব্লক নিয়ে সুন্দরবন (Sundarbans) অঞ্চল গঠিত। যার মধ্যে সাতটি ব্লকের বেশ কিছু মানুষজন নদীতে বাগদার মীন ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন জীবিকার জন্য প্রায়শই সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী, খালে অথবা জঙ্গলের উপর নির্ভর করে থাকেন। শুধু পুরুষরা নন, বাড়ির মহিলারা সমানতালে নামেন নোনা জলে। আর নোংরা ঘোলাটে নোনা জলে নামার ফলে বিভিন্ন মহিলার শরীরে দেখা দিচ্ছে একাধিক রোগ। এ বিষয়ে ঊষা রানি হালদার নামে এক মহিলা জানান, “শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন চুলকানি রোগ দেখা দেয়, তেমনি হাতে পায়ে হাজা হচ্ছে। শুধু তাই নয় অনেকে আবার জরায়ুর রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে শরীরে নানা রকম অসুবিধা দেখা দিচ্ছে।”
মহিলাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এখনও সম্ভব হয়নি। বহু পুরুষরা ন্যূনতম মজুরিটুকুও প্রতিদিন কাজ করে জোটাতে পারেন না। আর তাই নদীতে জাল টেনে বিভিন্ন মাছ ঘেঁটে ছোট্ট বাগদার মীনের সন্ধান চালান এলাকার পুরুষ ও মহিলারা। কারণ বাগদার মীন ছাড়া অন্য মাছের বাচ্চার তেমন দাম নেই। ফলে সবগুলোই ফেলে দিতে হয় নদীর জলে।
[আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর পৌষমেলা প্রাঙ্গনে পাঁচিল ভাঙা কাণ্ডে তদন্তে ED]
শুধু বাড়ির বড়রা নন স্কুলপড়ুয়া কিশোরী থেকে শুরু করে বাড়ির বউরা দিনভর নদী-নালাতে কোমর ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাগদার মীন সংগ্রহ করার জন্য। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ রিসার্চ এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের প্রায় লক্ষাধিক মহিলারা ভুগছেন স্ত্রীরোগে। এ বিষয়ে গোসাবা ব্লক হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিত্রলেখা সর্দার বলেন, “প্রতিনিয়ত নোনা জলে নামার ফলে বিভিন্ন অসুখ দানা বাঁধছে। কারণ মাছ ধরার জন্য নদীতে মহিলাকে কখনো কোমর কখনো আবার গলা পর্যন্ত জলে ডুবে থাকতে হচ্ছে। যে সমস্ত মহিলারা স্ত্রী রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে সাদা স্রাব ও মূত্রনালী সমস্যার আধিক্যই বেশি। জলবাহিত জীবাণু বা দূষণের জন্য যোনিপথে সংক্রমণ হচ্ছে। তার সঙ্গে আছে পরিচ্ছন্নতার অভাব।”
The post স্ত্রীরোগের আঁতুড়ঘর সুন্দরবন, সংসার চালাতে নোনা জলে নেমে বাড়ছে জরায়ুর সমস্যা appeared first on Sangbad Pratidin.