রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: চব্বিশ ঘণ্টা আগে তাঁকে হেড কোচ হিসেবে ঘোষণা করেছে কেকেআর। সেই তিনি, ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন’ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে।
প্রশ্ন: কেকেআর (KKR) কোচ হিসেবে আপনার নাম দেখে অনেকে চমকে গিয়েছে। নতুন দায়িত্ব পেয়ে কী মনে হচ্ছে?
পণ্ডিত: দেখুন, কেকেআর পরিবারে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত। বড় দায়িত্ব এটা।
প্রশ্ন: কিন্তু চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের (Chandrakant Pandit) অভিধানে দায়িত্বের সমার্থক শব্দ আছে একটা। সাফল্য। তিনটে আলাদা টিমকে রনজি চ্যাম্পিয়ন করেছেন। গত বার মধ্যপ্রদেশে একজনও তারকা ক্রিকেটার ছিলেন না। তবু মুম্বইকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন!
পণ্ডিত: (হেসে) সব কোচই তো তাই চায়, তাই না? কিন্তু মনে রাখবেন, আইপিএলের প্রত্যেক টিম ভাল, প্রত্যেক টিমই ট্রফি জেতার ক্ষমতা রাখে। কী করতে হবে না হবে, সেটা নিয়ে বসব আমরা।
প্রশ্ন: একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন?
পণ্ডিত: বলুন না।
প্রশ্ন: চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে (KKR Head Coach) লোকে চেনে কঠোর ক্রিকেট গুরু হিসেবে। যিনি পুরাতন ক্রিকেটীয় মডেলে বিশ্বাসী। যিনি শৃঙ্খলার সঙ্গে আপস করেন না কখনও। মধ্যপ্রদেশ টিমকে প্র্যাকটিসেও সাদা জার্সি পরে আসতে হত। আইপিএলের ঝাঁ চকচকে, কর্পোরেট সংস্কৃতির পৃথিবীতে কোচ পণ্ডিত কি কোনও অ্যাডজাস্টমেন্ট আনবেন?
পণ্ডিত: মনে রাখতে হবে, আইপিএলে যারা খেলছে, তারা প্রত্যেকে অভিজ্ঞ। অনেকেই দাপিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। দেখুন, জানি যে ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেট এক জিনিস নয়। আমি কী করব না করব, এখনই কিছু বলছি না। এটুকু বলতে পারি, খেলাটা ক্রিকেটারদের কাছে যা চাইবে, ক্রিকেটারদের সে সব করতে হবে। তবে শুনেছি, কেকেআরে ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি অসম্ভব ভাল।
[আরও পড়ুন: এশিয়া কাপে ফেভরিট রোহিতরাই, একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন সৌরভ]
প্রশ্ন: কেকেআরে নিজস্ব কোচিং মডেলটা নিয়ে তো বলতে পারেন।
পণ্ডিত: আমার কোচিং দর্শন একটাই হবে। খেলাটাকে সম্মান করো। খেলাটার উপরে উঠতে যেও না। আর প্রাণ দিয়ে খাটো। পরিশ্রম করো। যাতে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে ছোটা যায়।
প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং করা এক জিনিস, আর আইপিএলে আর এক। ঘরোয়া ক্রিকেটে আপনি হেরে গেলে সাত দিন সময় পাবেন হার ভুলে মাঠে নামার। কিন্তু আইপিএলে পাবেন না। সময়ই দেবে না টুর্নামেন্ট আপনাকে। এমনকী ট্রেনিংও করতে পারবেন না রোজ। সামলাবেন কী ভাবে?
পণ্ডিত: আমাকে বলুন তো, আইপিএল কি আজ থেকে হচ্ছে? নাকি আইপিএল এই প্রথম ক্রিকেটাররা খেলবে? এই অ্যাডজাস্টমেন্ট তো ক্রিকেটাররা অলরেডি জানে। যা সময় পাবেন, তার মধ্যেই আপনাকে যা গুছানোর, গুছিয়ে ফেলতে হবে। আর প্র্যাকটিস বলছেন? ক্রিকেটাররা কেউ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে আসবে। কেউ ঘরোয়া ম্যাচ খেলে। ম্যাচের মধ্যেই তো থাকবে ওরা। তা হলে?
প্রশ্ন: বুঝলাম। আপনাকে দশ-এগারো বছর আগে কেকেআর একবার অফার করেছিল। সে বার প্রত্যাখান করেছিলেন। এবার এলেন। হঠাৎ?
পণ্ডিত: ভুল করছেন। প্রত্যাখান করিনি। কিছু জিনিস মেলেনি, তাই আসিনি। এটুকু বলব, কেকেআর পরিবার যে বিশ্বাস দেখিয়েছে আমার উপর, তাতে খুশি।
প্রশ্ন: কারণটা কি এটা যে, চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে নতুন একটা চ্যালেঞ্জ টানছিল? ঘরোয়া ক্রিকেটে আপনি সুপার কোচ। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের কি মনে হয়েছিল, নিজের কমফোর্ট জোন থেকে এবার বেরিয়ে আইপিএল-চ্যালেঞ্জে নিজেকে ফেলে দেখি?
পণ্ডিত: জীবনে চ্যালেঞ্জ ছাড়া কিছু আছে নাকি? জীবনে এগোতে হলে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে হবে আপনাকে। সহজে কিছু পাবেন না আপনি। আমিও তাই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। আর খুশিতে ভেসে যাওয়া নয়, আমাকে কাজ করে দেখাতে হবে।
প্রশ্ন: নিজস্ব সাপোর্ট স্টাফ নিয়ে কিছু ভেবেছেন?
পণ্ডিত: না। এখনও না।
প্রশ্ন: কেকেআরে আসি। গত কয়েক বছরে খেলা দেখেছেন টিমটার? ২০১৪ সালের পর আর চ্যাম্পিয়ন হয়নি টিমটা। একবার ফাইনালে উঠেছে মাত্র। কী করা দরকার কেকেআরের ফাইনাল হার্ডল টপকাতে গেলে?
পণ্ডিত: খেলা দেখেছি কেকেআরের। আমার তো টিমটাকে দারুণ মনে হয়েছে। শ্রেয়স আইয়ার দারুণ ক্যাপ্টেন। টিমের বাকি প্লেয়াররা ভাল। দুর্ভাগ্য যে গত বার টিমটা ফাইনালে যেতে পারেনি। কী জানেন, আইপিএলে সব ক’টা টিমই টাফ। সবাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লড়ে।
প্রশ্ন: লোকে বলে, টিমটা গত কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত আন্দ্রে রাসেলের উপর নির্ভরশীল।
পণ্ডিত: লোকে বলে। কিন্তু আমার কাছে টিমের সব সদস্যই সমান। আমি বিশ্বাস করি, আমার টিমে এক থেকে এগারো সবাই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। নাইট অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারকে আপনি চেনেন। মুম্বইয়ের ক্রিকেটার তিনি। ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে চেনেন। মধ্যপ্রদেশে কোচিংয়ের সময় পেয়েছেন। এই জায়গায় অ্যাডভান্টেজ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত তো?
পণ্ডিত: বলতে পারেন। শ্রেয়সের মতো অন্যান্য ক্রিকেটারদের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক দারুণ। আর আমি ভারতীয় বলে কে কেমন ক্রিকেটার, জানি। ভাষা এক হওয়ায় যোগাযোগেও সুবিধে।