রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: ‘রেশন বন্ধ থাকলে মৃত্যুর মিছিল শুরু হত আমাদের চাবাগানে।’ ঢেকি শাক সেদ্ধ দিয়ে রুটি চিবোতে চিবোতে বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ জন রিচার্ড ওরাওঁ। এই রেশন কেন্দ্র দেয় না রাজ্য দেয়, তাতে কিছু আসে-যায় না রিচার্ডের। উনি জানেন তেল কেনার টাকা নেই, তাই জঙ্গল থেকে ঢেঁকি শাক তুলে সেদ্ধ করে নেওয়া। বন্ধ দলমোর চা-বাগানের এই শ্রমিক মাথা পিছু পাঁচ কেজি চালের মূল্য কতটা জানেন। এই চা-বাগানের শ্রমিকরা দুর্গা পুজোার সময় ১৬ শতাংশ বোনাসের দাবি করেছিলেন। মালিক ৮ শতাংশ দিতে চেয়েছিলেন। শ্রমিকরা মানেননি। আর তাই সাত মাস এই চা-বাগান বন্ধ করে চলে গিয়েছে মালিকপক্ষ। তারপর বৈঠকের পর বৈঠক হয়েছে। কিন্তু চা-বাগান খোলেনি, রিচার্ড বলছিলেন। ফলে ভোটের মরশুমেও তাঁদের চিন্তা একটাই, কবে খুলবে চা বাগান।
শুধু দলমোর নয়, বীরপাড়া থেকে গোমটু ভুটান যাওয়ার এই রাস্তার পাশে আরও দু’টো চা-বাগান বন্ধ। লঙ্কাপাড়া ও রামঝোরা। আলিপুরদুয়ার লোকসভা (Alipurduar Lok Sabha Election News) কেন্দ্রে মুহুর্তে আট চাবাগান বন্ধ। বন্ধ চা-বাগানের তালিকায় রয়েছে কালচিনি, রায়মাটাং, দেবপাড়া ও ঢেকলাপাড়া। কাজ হারিয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। ফলে দৈনিক ২৫০ টাকা মজুরি আর নেই। বহু কষ্টে সংসার টানছেন প্রিয়াঙ্কা লাকরা। বন্ধ রামঝোরা চা-বাগানের এই শ্রমিক বলেন, “২০১১ সালের আগে আমাদের দৈনিক মজুরি ছিল ৬৭ টাকা। এখন মজুরি বেড়ে দৈনিক ২৫০ টাকা হয়েছে। কিন্তু বাগানই বন্ধ থাকলে মজুরি বেড়ে আর কি লাভ আমাদের?’’
[আরও পড়ুন: ইজরায়েলে হামলা ইরানের, আপৎকালীন বৈঠক ডাকল রাষ্ট্রসংঘ! ফোনে কথা নেতানিয়াহু-বাইডেনের]
এই সব চা-বাগানে মোদি না মমতা, কে সেরা তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। নেই কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে কোন উত্তাপও। ভোটের পরে চা-বাগান কী খুলবে? আবার কাজ ফিরে পাবেন শ্রমিকরা? সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। আর এই ইস্যুতে রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠছে রাজনীতিও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, উত্তরবঙ্গে ৫৯টি চা-বাগান খোলার। আর আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগগা বলেন, “বন্ধ চা-বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না রাজ্য সরকার। তাঁদের লিজ বাতিল করে ব্যবস্থা নিলে মালিকরা কথায়-কথায় চা-বাগান বন্ধ করার সাহস দেখাতেন না।’’ পালটা তোপ দেগেছেন আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রকাশচিক বরাইক। তিনি বলেন, “২০১৪ সালে বিজেপি বলেছিল পাঁচটি চা-বাগান খুলবে। তারা একটি চা-বাগানও খুলল না। আমরা চা-বাগান খুলেছি। চা-বাগানে পানীয় জল, রাস্তা, হাসপাতাল করেছি। ভারতীয় চা পর্ষদ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। চা-বাগানের জন্য বিজেপি কিছুই করেনি।” ভোট এলে হাওয়া গরম হয়। কিন্তু ভোট পর যেই কে সেই! প্রচারে বেরিয়ে বন্ধ চা বাগান কী খুলবে কিনা, তার জবাব দিতে পারেন না রাজনীতির কারবারিরা।