সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘এমন কোনও ইনভেস্ট কি আছে, ইনভেস্টের বিনিময়ে যেখানে বিন্দুমাত্র এক্সপ্লয়টেশন থাকবে না?’- এক সভামধ্যে এ প্রশ্ন ছুঁয়ে দিয়েছিলেন মৃদুভাষি লেখিকা-অধ্যাপিকা মীরা চক্রবর্তী৷ বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই অধ্যাপিকা এখন জৈন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফ্যাকাল্টি৷ নিঃসন্দেহে তাঁর প্রশ্ন ভাবনা উদ্রেককারী৷ এবং সহজে উত্তরের নাগালও পাওয়া যায় না৷ অধ্যাপিকা জানালেন, এ প্রশ্ন তিনি বিদেশের ম্যানেজমেন্ট ছাত্রদেরও করেছেন৷ কিন্তু উত্তর মেলেনি৷ সত্যি এমন কোন ইনভেস্টর আছেন, যিনি সব দিয়েও কোনও রকম এক্সপ্লয়েট করবেন না? অধ্যাপিকার উত্তর, আছে, তা হল প্রকৃতি৷ হেন কোনও জিনিস নেই যা প্রকৃতি আমাদের দেয় না৷ বিনিময়ে প্রত্যাশা করে না কিছুই৷ অবশ্য ইনভেস্টর বা বিনিয়োগকারী বলতে চলতি অর্থে যা বোঝায় পরিবেশকে ঠিক তা বলা যায় কি না, তা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে, কিন্তু এ ভাবনাটি যে অন্যরকম তা বলাই বাহুল্য৷ কর্পোরেট সংস্কৃতি যখন আমাদের যাপনকে আছন্ন করছে তখন এভাবে ভাবলে মন্দ কী! ঠিক যেমন ‘অয়দিপাউস’ নাটকে, কিছুদিন আগের এক প্রযোজনায়, ‘ইডিপাস কমপ্লেক্স’ উঠে এসেছিল পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ভাবনাকে উসকে দিয়ে৷ যে পরিবেশ তথা প্রকৃতি থেকে আমাদের জন্ম, তাকেই কি ভোগ করছি না আমরা?
এত কথা বলা কারণ আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস৷ যে পরিবেশে থেকে প্রতিনিয়ত উপাদান আহরণ করে আমাদের বেঁচে থাকা, সেই পরিবেশের জন্যই আলাদা একটা দিন ধার্য করেছে মানুষ৷ কেন একটা মাত্র দিন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে৷ তবে এর সদর্থক দিকও কম নয়৷ আর তাই এক দিনের জন্য হলেও পরিবেশ নিয়ে সচেতন হচ্ছে মানুষ৷ সারা দুনিয়া জুড়েই আজ, ৫ জুন, পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস৷
দিকে দিকে নেওয়া নানা কর্মসূচি৷ ছোট থেকে বড় -সব স্তরেই পরিবেশ নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে৷ মানুষের সভ্যতার উন্নতির কোপে পরিবেশ যে কাবু তা মানুষের থেকে ভাল আর কেউ জানে না৷ মানুষেরই ছোট ছোট কাজে প্রতিদিন বড় মাপের দূষণ গ্রাস করছে পরিবেশকে৷ আর তাই মানুষই ছোট ছোট উপায়ে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে৷
পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সাহচর্যে থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে৷ তবে সবথেকে বড় ব্যাপার, কর্পোরেট সংস্থাগুলিও সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ওলা সংস্থা ১০,০০০ বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা নিয়েছে৷
প্রকৃতিপ্রেমী অধ্যাপিকা আরও এক ভাবনার গোড়ায় জল দিয়েছিলেন৷ সেটি হল, এই যে এত ধরনের কসমেটিক প্রোডাক্ট আমরা ব্যবহার করি, সে তো কোনও না কোনওভাবে প্রকৃতির উপাদান ব্যবহার করেই তৈরি৷ এবং, এ জন্য পরিবেশ দূষণের পরিমাণও কম নয়৷ কিন্তু হাজারটা প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে যদি একটি কি দুটো প্রোডাক্টই ব্যবহার করা যেত, তাহলে কী পৃথিবীটা অনেক ভালো হত না৷ নিঃসন্দেহে এ এক স্বপ্ন৷ আমাদের সমবেত প্রচেষ্টায় তা সফল হয়ে উঠতে পারে৷ আজ বিশ্ব পরিবেশে দিবসে যদি আমরা সুবজের রং ফিকে না হওয়ার শপথ নিই এবং ভাবনার জং গোড়াতেই ছাড়িয়ে নিই, তবে বোধহয় কোনও একদিন এই স্বপ্নেও পৌঁছনো সম্ভব হবে৷
The post বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৬: সবুজের রং যেন ফিকে না হয়… appeared first on Sangbad Pratidin.