সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমেরিকায় ফিরল জর্জ ফ্লয়েডের স্মৃতি। মার্কিন পুলিশের হাঁটুর চাপে প্রাণ গেল এক কৃষ্ণাঙ্গ প্রৌঢ়ের! মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে ফ্লয়েডের মতো তিনিও বার বার বলেছিলেন, "আমি শ্বাস নিতে পারছি না।" কিন্তু তখনও তাঁর ঘাড়ের কাছে পা দিয়ে চেপে রেখেছিলেন ওই অফিসার। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির।
সংবাদ সংস্থা এপি সূত্রে খবর, মৃত ব্যক্তির নাম ফ্র্যাঙ্ক টাইসন। গত ১৮ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার ওহিও প্রদেশে একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তাতে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন টাইসন। ঘটনার পর থেকেই তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছিল। অবশেষে ওইদিনই সেখানকার একটি পানশালায় খোঁজ মেলে টাইসনের। সেদিনের ঘটনা নিয়ে বডি ক্যামেরার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ওহিও পুলিশ।
[আরও পড়ুন: ৫২৭ টি ভারতীয় খাবারে ক্যানসারের ‘বিষ’! এবার চাঞ্চল্যকর দাবি ইউরোপীয় ইউনিয়নের]
৩৬ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পুলিশ তাঁর হাত ধরতে গেলে চিৎকার শুরু করেন টাইসন। "ওরা আমাকে মেরে ফেলবে" বলে চেঁচামেচি জুড়লেই পুলিশকর্মীরা তাঁকে মাটিতে ফেলে হাত চেপে ধরেন। এর পর হাঁটু দিয়ে টাইসনের ঘাড়ের ঠিক নিচে চেপে রাখেন এক মার্কিন অফিসার। ভিডিওতে টাইসনকে বলতে শোনা যায়, "আমি শ্বাস নিতে পারছি না। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন। আমার ঘাড় থেকে পা নামান।" তখন এক অফিসার বলেন, "তোমার কিছু হবে না, শান্ত হও।"
এর পর ওই পুলিশকর্মী টাইসনের উপর থেকে উঠে যান। কিন্তু দেখা যায় নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছেন টাইসন। সেখানে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকরা বলাবলি শুরু করেন, "ও বেঁচে আছে তো? শ্বাস নিচ্ছে তো?" সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর দেওয়া হয় ওই কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিটিকে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এর পর স্থানীয় ক্লিভল্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তাঁর।
এই ঘটনার ভিডিও উসকে দিয়েছে জর্জ ফ্লয়েডের স্মৃতি। ২০২০ সালের মে মাসে আমেরিকার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, মিনিয়াপোলিসের পুলিশ আধিকারিক ডেরেক শভিন হাঁটু দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধ করে রেখেছেন। ফ্লয়েড বারংবার অনুরোধ করছিলেন শভিনের কাছে যে তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। কিন্তু শভিন হাঁটু সরাননি। প্রায় সাড়ে নমিনিট এভাবে থাকার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন ফ্লয়েড। এর পরই গোটা বিশ্বে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরু হয়। সেই বিক্ষোভের চাপে অভিযুক্ত শভিনের ২০ বছরের জেল হয়।
[আরও পড়ুন: সন্তান চেয়েছিল হামাস জঙ্গি! বন্দিদশার গল্প শোনালেন ইজরায়েলি তরুণী]
বলে রাখা ভালো, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষের শিকড় অত্যন্ত গভীর। বারে বারে ফিরে এসেছে ফ্লয়েডের স্মৃতি। ২০২২ সালে গুলি করা হয় জর্জ ফ্লয়েডেরই চার বছরের নাতনি আরিয়ানাকে। জটিল অস্ত্রোপচার করে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয় খুদের। এর পর ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়ায় এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাকে মাটিতে ছুড়ে ফেলে তাঁর মুখে গোলমরিচ স্প্রে করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মার্কিন পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনারও ভিডিও ভাইরাল হয়। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র।