সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলোর 'একাধিপত্যে'র পালটা দিতে এবার কোমর বেঁধে নামছে ব্রিকস। তথাকথিত অপশ্চিমি দেশগুলোর জোট ব্রিকসে এবার থেকে আর্থিক লেনদেনের নতুন সিস্টেম শুরু হোক, এমন প্রস্তাব দিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা। সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাব, ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে খাদ্যশস্য আদানপ্রদানের বিশেষ ব্যবস্থা হোক। আগামী দিনে খাদ্যশস্যের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে এই বিশেষ ব্যবস্থা।
ঠিক কী প্রস্তাব এনেছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান? লুলা বলেন, কেবলমাত্র ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর ব্যবহারের জন্য় আর্থিক লেনদেনের নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক। নতুন এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে তথাকথিত পশ্চিমি দেশগুলোর কোনও নিষেধাজ্ঞাই বলবৎ হবে না। তার ফলে ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে কোনও বাধা থাকবে না। অন্যদিকে পুতিনের মতে, 'ব্রিকস গ্রেন এক্সচেঞ্জ' গড়ে তোলা হোক। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, "বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্যশস্য, তৈলবীজ উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রিকস রাষ্ট্রগুলো। সেই জন্যই গ্রেন এক্সচেঞ্জ গড়ে তোলা হোক। আগামী দিনে খাদ্যশস্য ছাড়াও অন্যান্য় ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে এই এক্সচেঞ্জ।
সামিটে গিয়ে ব্রিকসের শক্তি নিয়ে জোর সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তিনি বলেন, ব্রিকস দেশগুলোর অর্থনীতির মোট পরিমাণ ৩০ লক্ষ কোটি ডলারেরও বেশি। গোটা বিশ্বের অর্থনীতির ৪০ শতাংশ রয়েছে ব্রিকস গোষ্ঠীর হাতে। গত দুই দশকে একাধিক সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে ব্রিকস। আগামী দিনেও আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবিলায় সদর্থক ভূমিকা নেবে এই জোট, আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী।
রাশিয়ার কাজানে চলছে ব্রিকস সম্মেলন। মঙ্গলবার সামিটের ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন পুতিন। পরের দিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় মোদি এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে। তার পরেই ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এবার ভারত-চিনের মধ্যে বরফ গলতে পারে। দুই দেশের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছে রাশিয়া, এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। তার কারণ, সামরিক-অসামরিক দুই ক্ষেত্রেই আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমি দেশগুলোর একাধিক জোট রয়েছে। সেগুলোর 'পালটা' হিসাবে ব্রিকসকে তুলে ধরতে চাইছে রাশিয়া-চিন। তার জন্য ভারতের সহায়তা একান্ত কাম্য দুই দেশের পক্ষেই। নয়াদিল্লিকে সন্তুষ্ট করতেই কি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় টহলদারি নিয়ে একমত হল বেজিং? উঠছে সেই সম্ভাবনাও।
বিশ্লেষকদের মতে, জি৭-এর মতো পশ্চিমি দেশের জোটগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কার্যত ছড়ি ঘোরায়। সেই ক্ষমতা খর্ব করাই ব্রিকসের উদ্দেশ্য। কিন্তু এই কাজে সফল হতে গেলে ভারতের মতো বিশাল দেশের সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। তাই ব্রিকসকে আরও শক্তিশালী করতে রাশিয়া-চিন যে নীল নকশা করেছে, সেখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ভারতকে। নয়াদিল্লির সায় থাকলে গ্লোবাল সাউথে শক্তি বাড়াতে পারবে ব্রিকস। তাই ব্রিকসের চলতি সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মোদিই, একথা বলাই বাহুল্য।