সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর হিলারি ক্লিন্টনকে পরাস্ত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তাঁর এই জয় 'অপূর্ব'! কিন্তু ক্লিন্টনের অনুগামীরা হতাশই হয়েছিলেন। কেননা গোটা দেশের হিসেবে ট্রাম্পের থেকেও ৩০ লক্ষ ভোট বেশি পেয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট নেত্রী। তবু শেষ হাসি হাসেন রিপাবলিকান নেতাই। আসলে এর পিছনে রয়েছে মার্কিন নির্বাচন কাঠামোর এক অদ্ভুত নিয়ম।
কী সেই নিয়ম? মনে রাখা দরকার ভারতের মতোই গণতান্ত্রিক দেশ হলেও সে দেশের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিস্তর ফারাক রয়েছে। ভারতে যেমন নির্বাচন কমিশন ভোট করায়, তেমন কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা আমেরিকায় নেই। আমেরিকার প্রত্যেকটি রাজ্য নিজের আইনমাফিক নির্বাচন সম্পন্ন করে। ফলে ভোটগণনার নিয়মও হয় ভিন্ন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মার্কিন জনতা পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে ইলেক্টরদের ভোট দেয়। ৫৩৮টি ইলেক্টরের মধ্যে যিনি বেশি ভোট পান তিনিই প্রেসিডেন্ট পদে বসেন। এক্ষেত্রে ভারতের মতো কোনও দলের কেন্দ্রভিত্তিক ভোট হয় না। মোট ৫৩৮টা ইলেক্টরাল কলেজের মধ্যে ম্যাজিক ফিগার ২৭০ কোন প্রার্থী আগে ছুঁয়ে ফেলেছেন তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সেইমতো বিরোধী প্রার্থী পরাজয় স্বীকার করে নেন। তার পর বাকি থাকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। ১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধানে এই নিয়ম বর্ণিত হয়। আজও যার ব্যত্যয় হয়নি।
অর্থাৎ আমেরিকায় নির্বাচন রাজ্যভিত্তিক, কেন্দ্রভিত্তিক নয়। সে-দেশে ভোটাররা পরোক্ষে ভোট দেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে। আর সেইসঙ্গে এক-একটা রাজ্য একসঙ্গে হয়ে ওঠে লাল বা নীল। ‘লাল’ হল রিপাবলিকান দলের রং, আর ‘নীল’ ডেমোক্র্যাটদের। আবার এমন রাজ্যও রয়েছে, যার এক-এক ভাগ নিজেদের মতো করে লাল বা নীল হয়ে উঠতে পারে। সব মিলিয়ে দেশের মানচিত্রটা লাল-নীলের নকশা হয়ে ওঠে, রাজ্য ধরে ধরে।
৫৩৮ আসনের ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’-এ বিভিন্ন রাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট আসন অবশ্য অনেকটাই তাদের জনসংখ্যার উপরে নির্ভরশীল। সেই বিচারে এক-এক রাজ্যের গুরুত্ব এক-এক রকমের। আমাদের যেমন সবচেয়ে বেশি লোকসভা আসন উত্তরপ্রদেশে, আমেরিকায় তেমনই ৫৪টি ইলেক্টোরাল আসন নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। তবে, পার্থক্য হল, ক্যালিফোর্নিয়ার ওই ৫৫টি আসন কোনও একটি দল পাবে একসঙ্গে। এর পরই টেক্সাস ৪০ এবং ফ্লোরিডা ৩০। ওদিকে, আলাস্কা, ডেলাওয়্যার, ওয়াশিংটনের মতো রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট মাত্র ৩টি। মোটের উপর কতটা লাল বা নীল হয়ে ওঠে অনিশ্চিত রাজ্য বা ‘সুইং স্টেট’গুলি, তার ভিত্তিতেই ঠিক হবে হোয়াইট হাউসের পরের চার বছরের মালিকানা।