সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদিকে পশ্চিম এশিয়ায় ঘনিয়েছে ভয়ংকর যুদ্ধের মেঘ। গাজা-লেবাননে রক্ত ঝরাচ্ছে ইজরায়েলি ফৌজ। যে কোনও সময় সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে পারে ইরান-ইজরায়েল। অন্যদিকে তিন বছর হতে চলল, রক্তক্ষয়ী লড়াই থামছেই না ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে। 'বন্ধু' দেশকে প্রতিনিয়ত অস্ত্রের জোগান দিয়ে এই যুদ্ধে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, উত্তর কোরিয়ার মতো পরমাণু শক্তিধর দেশ। আর এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কার বাণী শোনালেন বিখ্যাত বহুজাতিক মার্কিন ব্যাংকিং কোম্পানি জেপি মর্গ্যান চেজের সিইও জেমি ডিমন। সতর্ক করে তিনি বলেছেন, এখন যা পরিস্থিতি তাতে বলাই যায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে!
এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে জ্বালানির দাম, খাদ্য সামগ্রী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং নানা দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর এই যুদ্ধগুলো সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মত জেমি ডিমনের। তিনি জানিয়েছেন, "আমরা খুব ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দেশ চলমান লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। এই সংঘাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বাসঘাতকতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে এর ফল খুবই খারাপ হতে চলেছে।"
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাঁধভাঙা জলের মতো ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে রুশ সেনা। পালটা মার শুরু করে কিয়েভও। আমেরিকার অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায় ইউক্রেনীয় সেনা। এই যুদ্ধে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশের পাশে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। শান্তির বার্তা দিলেও মস্কোর পাশ থেকে সরে আসেনি চিন। যা নিয়ে বেজিংকে দুষেছে আমেরিকা। একই সুর শোনা গিয়েছে জেমি ডিমনের গলাতেও। এই যুদ্ধের জন্য চিন-রাশিয়াকে দায়ী করে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পশ্চিমি বিশ্বের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে চিন এবং রাশিয়া।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য বরাবরই বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এতে বিস্ফোরণ ঘটায় গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের বুকে হামাসের হামলা। প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও গাজায় ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ চালিয়ে যাচ্ছে তেল আভিভ। সংঘাত শুরু হয়েছে লেবাননে। এবার সম্মুখ সমরে ইরান-ইজরায়েল! ফলে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল গাজায়, এখন তা লেবানন-ইরান হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে প্রায় মধ্যপ্রাচ্যে। আর এখানেও ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে শক্তি যোগাচ্ছে আমেরিকা। বিশ্লেষকদের মতে, এই মার্কিন বিশেষজ্ঞ যতই দোষারোপ করুন রাশিয়া ও চিনকে, দায় ঝেরে ফেলতে পারে না ওয়াশিংটনও। এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতেও ইরানকে হুমকি দিয়েছে আমেরিকা। তেল আভিভে আক্রমণ শানালে পালটা দেবে তারাও। ফলে এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্বের ছায়া-অবদান অনস্বীকার্য।
এমনিতেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে বরাবরই আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক চিন ও রাশিয়ার। যে সংঘাত এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে সামরিক মহড়া শুরু করেছে রুশ ফৌজ। এদিকে, ইরানের হাতেও হয়েছে আণবিক হাতিয়ার। তেহরানের সঙ্গেও খুব একটা ভালো সম্পর্ক নয় আমেরিকার। ফলে আগামী দিনে এই জটিল ভূরাজনৈতিক সমীকরণ কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকেই নজর থাকবে গোটা বিশ্বের। আর এই পরিস্থিতিতেই জেমি ডিমন জানিয়ে দিলেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে!