সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যেমনটা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তেমনটাই করলেন। চিন, ব্রিটেন-সহ বিভিন্ন দেশের উপর নয়া শুল্ক আরোপ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাদ দেননি 'বন্ধু' ভারতকেও। নয়াদিল্লির উপর ২৬ শতাংশ কর চাপিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে এবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রক। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নয়া শুল্ক ঘোষণায় রেগে লাল বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতারা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি থেকে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান অ্যান্টনি অ্যালবানিজ, সকলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আমেরিকার থেকে 'বদলা' নেওয়ার। পাশাপাশি চিনও হুঙ্কার দিয়েছে, এই শুল্ক যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহার করতে হবে ওয়াশিংটনকে। না হলে এর ফল ভালো হবে না। আমেরিকাকে বড় মাশুল চোকাতে হবে।
বুধবার গভীর রাতে আছড়ে পড়ে ট্রাম্পের ‘শুল্ক-বোমা’। চিনের উপর ৩৪%, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ২০%, ভিয়েতনাম ৪৬%, জাপান ২৪%, দক্ষিণ কোরিয়া ২৫%, ব্রিটেন ১০%, থাইল্যান্ড ৩৬% এবং সুইজারল্যান্ডের উপর ৩১% শুল্ক চাপানোর কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, “ছাড় রেখেই এই শুল্কের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দেশগুলো যা কর চাপায় এটা তার অর্ধেক। আমরা ছাড় দিয়েই শুল্ক চাপিয়েছি।’ কথা বলতে বলতে উঠে ভারতের প্রসঙ্গ। ট্রাম্প জানান, “ভারতের শুল্কের পরিমাণ খুবই বেশি। তবে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমার খুব ভালো বন্ধু। সম্প্রতি তিনি আমেরিকা থেকে ঘুরেও গিয়েছেন। তখন আমি তাঁকে বলেছিলাম, শুল্কের ব্যাপারে আপনারা আমেরিকার সঙ্গে ঠিক করছেন না। ভারত আমাদের থেকে ৫২ শতাংশ কর নেয়। কিন্তু আমরা ছাড় দিয়ে তার অর্ধেক মানে ২৬% শুল্ক চাপাচ্ছি।”
পিটিআই সূত্রে খবর, নয়া নিয়ে শুল্ক নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার মুখ খোলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রকের এক আধিকারিক। তিনি জানান, "ভারত যে পণ্যগুলো আমেরিকায় রপ্তানি করে ৫ এপ্রিল থেকে সেগুলোর উপর ১০ শতাংশ কর চালু হবে। আর বাকি ১৬% ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হবে। এতে যে ভারতের উপর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে সেটা নয়, আবার যে খুব ভালোও হবে তেমন নয়। সবটাই মেলানো-মেশানো।" তিনি আরও জানান, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক গোটা বিষয় নিয়ে নানা বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা করছে। বাণিজ্যে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করছেন।
এদিকে, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণা করতেই ফুঁসে উঠেছেন বিশ্বনেতারা। রীতিমত 'যুদ্ধে'র হুঙ্কার দিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেছেন, "আমরা লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। ট্রাম্প যে শুল্কযুদ্ধ শুরু করেছেন তাতে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। আমেরিকার এই পদক্ষেপ কানাডার লক্ষ লক্ষ নাগরিককে বিপদে ফেলবে। আমরা এর পালটা দেবই।"
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজের হুঁশিয়ারি, "এই অন্যায্য পদক্ষেপের জন্য আমেরিকার অনেক বড় মূল্য চোকাতে হবে।" চিনের বাণিজ্য মন্ত্রকের হুঙ্কার, অবিলম্বে এই শুল্ক বাতিল করতে হবে আমেরিকাকে। না হলে বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিপন্ন হবে। এইভাবে বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হতে পারে না। আবার ট্রাম্পের 'বন্ধু' ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলানি জানিয়েছেন, "এই বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে আমাদের অন্য চুক্তিতে যেতে হবে। না হলে পশ্চিমা বিশ্ব দুর্বল হয়ে পড়বে।" স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জানিয়েছেন, "তাঁর সরকার দেশের সমস্ত কোম্পানি এবং কর্মীদের রক্ষা করবে। একটি উন্মুক্ত বিশ্বের তারা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।" ফলে বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পকে পালটা দিতে এক জোট হতে পারে এই দেশগুলো।