সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা মহামারীর জেরে আমেরিকায় মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। তার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চূড়ান্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেন দেশের একাধিক গভর্নর। তাঁদের মধ্যে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, দু’দলের সদস্যই আছেন। বিবাদের কারণ, কবে থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হবে, তার সিদ্ধান্ত কে নেবেন। ট্রাম্পের দাবি, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সর্বোচ্চ অধিকারী। অন্যদিকে, গভর্নররা মনে করেন, প্রদেশের ক্ষেত্রে তাঁদেরই এ বিষয়ে প্রাথমিক দায়িত্ব। যা নিয়ে চরম ডামাডোল চলছে মার্কিন মুলুকে।
ঝামেলার সূত্রপাত রবিবার। ট্রাম্প দায় এড়াতে গিয়ে সাফ বলে দেন, করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাথমিক দায়িত্ব গভর্নরদের। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুর বদলে সোমবার ঘোষণা করেন, এই লড়াইয়ে তিনিই অধিনায়ক। এবং কখন, কীভাবে বিধিনিষেধ শিথিল করে দেশে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হবে, তা নিয়ে তিনিই শেষ কথা বলবেন। যার ফলে সাংবিধানিক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আদতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কতটা। এবং প্রদেশগুলির সঙ্গে তাঁর সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ল। করোনা রুখতে যে কোনও ব্যর্থতার দায় তিনি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গভর্নরদের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। এমন ভাব করেছেন, যেন তিনি নেহাতই ‘সাপোর্টিং প্লেয়ার’। এখন যেই স্রোতের অভিমুখ ঘুরতে শুরু করেছে, অমনি লাফিয়ে ‘নায়ক’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। সান্ধ্য ব্রিফিংয়ে তাঁর ঘোষণা, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তাঁর অনুমোদন ছাড়া প্রদেশগুলির কোনও কিছুই করার ক্ষমতা নেই।” উত্তপ্ত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন ধেয়ে আসে, আপনি সব খুলে দিতে চাইলেও প্রদেশ যদি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, কী করবেন? কোন আইনে তাঁদের বাধ্য করবেন? ট্রাম্পের জবাব, “অনেক রাস্তা আছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্বই চূড়ান্ত।” যদিও কোন আইনে তা সম্ভব, তা এড়িয়ে যান ট্রাম্প।
[আরও পড়ুন: করোনার ছোবলে দেশে মৃত্যুমিছিল, ভারতকে অস্ত্র বিক্রি করতে ব্যতিব্যস্ত আমেরিকা]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, করোনার প্রকোপ ও ঝুঁকি অনেকটা কমে গেলে জনজীবন স্বাভাবিক করতে হবে। কবে, কীভাবে তা হবে, তা নিয়ে যদি প্রেসিডেন্ট ও গভর্নররা বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন, তাহলে কী হবে। ওয়াশিংটন ও প্রাদেশিক রাজধানীর বিপরীতধর্মী নির্দেশ কীভাবে পালন করবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্মীরা।
বাস্তবে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই ট্রাম্পের কাজকর্মে হতচকিত হয়ে পড়ছেন প্রশাসনের কর্তারা। যেমন, সোমবার তিনি দাবি করেন, প্রাথমিক হুঁশিয়ারি মেনে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ করেন। কোনও ঢিলেমি দেননি। তা প্রমাণ করতে মঞ্চে হাজির করেন ডা. অ্যান্টনি ফাউচিকে। যিনি আমেরিকার করোনা যুদ্ধের সেনাপতি। অথচ, একদিন আগেই ফাউচিকে সরানোর দাবি তোলা একটি টুইট ট্রাম্প রিটুইট করেন। সোমবার অবশ্য তাঁর দাবি, ফাউচিকে সরানোর কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁর। অন্যদিকে, ফাউচি দাবি করেছিলেন, সময়ে ব্যবস্থা নিলে মৃত্যুমিছিল ঠেকানো যেত। এতেই শেষ নয়। সোমবার ব্রিফিংয়ের ফাঁকেই চালিয়ে দেওয়া হয় প্রচারমূলক ভিডিও। তাতে করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্প কী কী করেছেন, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট গভর্নররা তাঁর প্রশংসা করে কী বলেছেন, সে সব তুলে ধরা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে লেখার জন্য সংবাদমাধ্যমকে তুলধোনা তো আছেই। ট্রাম্প এদিন প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, তিনি এবং ফাউচি করোনা ইস্যুতে গোড়া থেকেই একমত। অথচ করোনা মোকাবিলায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের সাফল্য নিয়ে ফাউচিকে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ খুলতে বাধা দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
[আরও পড়ুন: চিনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, WHO’র অনুদান বন্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন]
The post করোনা আবহে গভর্নরদের সঙ্গে বেনজির সংঘাতের পথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প appeared first on Sangbad Pratidin.
