সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্যশস্যের অভাব। কারণ, বিশ্বের বহু দেশে শস্য রপ্তানি করে কিয়েভ। এই ৩ বছরে কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনীয় বন্দরে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। যার জেরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে টন টন শস্য। কিন্তু এবার যুদ্ধের কালো মেঘ সরে গিয়ে শান্তির হাওয়া বইবে কৃষ্ণসাগরে! আমেরিকার প্রস্তাবে সায় দিয়ে এই অঞ্চলে হামলা না চালাতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন।

জানা গিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবে শেষ হয়েছে তৃতীয় পর্যায়ের শান্তি বৈঠক। মার্কিন আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুযুধান দু'দেশের প্রতিনিধিরা। আলোচনার পর কৃষ্ণসাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলা না চালানোয় সম্মত হয়েছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন। এছাড়া দু'দেশই কৃষ্ণসাগরে পণ্যবাহী জাহাজের নিরাপদ চলাচল ও সামরিক জাহাজের ব্যবহার বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এনিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জানান, কৃষ্ণসাগরে শান্তি বজায় রাখতে কিয়েভ চুক্তিতে যেতে রাজি। কিন্তু রাশিয়া কতটা এই চুক্তি মানবে তা নিয়ে তাদের সংশয় রয়েছে বলেই জানান রুস্তেম।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় খাদ্যশস্যের অভাব। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘ এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় সেই বছরের ২৪ জুলাই কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে শস্য রপ্তানিতে মঞ্জুরি দেয় রাশিয়া। কিন্তু তার কয়েকদিনের মধ্যেই সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে মস্কো। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী ওডেসা ও মাইকোলাইভে ঘনঘন হামলা চালিয়েছে রুশ ফৌজ। যার জেরে ধাক্কা খেয়েছে ইউক্রেনের অর্থনীতি। পালটা একাধিকবার কৃষ্ণসাগরে রুশ ফৌজের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেনের সেনা।
উল্লেখ্য, দু'দেশের এই সংঘাতে কিয়েভ থেকে খাদ্যশস্যের জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। বিশ্লেষকরা বারবার বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারী দেশ ইউক্রেন থেকে পণ্যের যোগান বন্ধ হয়ে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে বিশ্ববাজারে। শস্যের দাম লাফিয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। সারা বিশ্বে দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট। অন্যদিকে, ইউক্রেনের গুদামগুলোতে টন টন শস্য পড়ে নষ্ট হবে। কারণ রাশিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, কৃষ্ণসাগরের ইউক্রেনীয় বন্দরে আসা জাহাজগুলোকে অস্ত্রবাহী বলে গণ্য করা হবে এবং সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু আমেরিকার হস্তক্ষেপে আপাতত কৃষ্ণসাগরে সংঘাতের মেঘ কাটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন রাশিয়া-ইউক্রেন কতটা অস্ত্র গুটিয়ে রাখে সেটাই এখন দেখার।