সোমনাথ রায়, দাদর: কুস্তির দঙ্গলে লড়াইটা সীমাবদ্ধ থাকে তাঁর ও প্রতিপক্ষের মধ্যে। রেফারি থাকলেও তাঁর ভূমিকা অনেকটাই নির্ভর করে দুই খেলোয়াড়ের চাল ও ভুলত্রুটির উপর। কিন্তু রাজনীতির আখড়ায় আসল ভূমিকা পালন করে সেই রেফারিই। যাঁর আরেক নাম জনতা জনার্দন। তবু নতুন দঙ্গলে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেশকে টানা দুটি কমনওয়েলথ গেমসে সোনা এনে দেওয়া ববিতা ফোগাট।
সোমবার হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন। লাস্ট ল্যাপে চূড়ান্ত ব্যস্ততায় কাটছে প্রার্থীদের। কিন্তু তিনি এসবে অভ্যস্ত। ধোবি পাছাড় দিয়ে কিভাবে প্রতিপক্ষকে ‘নক আউট’ করতে হয়, তা ববিতার নখদর্পণে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই গ্রামে গ্রামে প্রচার করছেন নিজস্ব স্টাইলে। যেখানে ভোটারদের কাছে প্রার্থী নয়, যাচ্ছেন ঘরের মেয়ে হিসেবে।
[আরও পড়ুন: হরিয়ানায় ভোটের প্রচারে গিয়ে চার-ছয় হাঁকাচ্ছেন রাহুল গান্ধী! ভাইরাল ভিডিও]
ঘড়িতে তখন দুটো। আটেলা ন্যাশনাল স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ঠায় একঘন্টা। দেড়টার সময় সেখানে আসার কথা থাকলেও কোনো পাত্তা নেই ববিতার। মিডিয়া সেক্রেটারির ফোনও নট রিচেবেল। ওদিকে ক্ষিদের জ্বালায় পেট নাজেহাল। অগত্যা একটি ধাবায় গিয়ে খাওয়া শুরু করতেই ৩৩৪বি জাতীয় সড়কে দেখা মিলল ববিতার কনভয়ের। কোনোমতে খাওয়া শেষ করেই দৌড়।
ড্রাইভার হরদীপ সিংয়ের তৎপরতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা মিলল কনভয়ের। রাস্তার ধুলো উড়িয়ে বরসনা গ্রামের দিকে ছুটছে তারা। গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমে দঙ্গল ছবির ‘হানিকারক বাপু’ গানের সুরে বাজছিল- ভাইও দেশ কে সেবা কারনে খাতির আইস হ্যায়, এমএলএ বাননে দঙ্গল কি বেটি ববিতা আইস হ্যায়।’ ববিতার জন্য অপেক্ষা করছিল গোটা গ্রাম। কেউকেটা গোছের একজনের বাড়িতে চলল ছোট্ট জনসভা। নিমেষে চলে এল লস্যি, ছাঁছ, জল, মিষ্টি, কোল্ড ড্রিংকস। নিজে হাতে মিষ্টি তুলে খেলেন। সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বললেন, “তাউ, তাই, কাক্কা, কাক্কি সবনে পরনাম। তোমাদের বেটিকে জেতাবে তো?” পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন, ‘লোকসভা ভোটে আমাদের গ্রামের ৮০ শতাংশ ভোট বিজেপি পেয়েছে।’ একগাল হেসে ববিতা বললেন, “তাহলে বেটিকে ১০০ নাহলেও ৯০ শতাংশ তো দিতেই হবে।”
[আরও পড়ুন: মুসলিম ভাবাবেগে আঘাতের জেরেই খুন উত্তরপ্রদেশের হিন্দুত্ববাদী নেতা]
ঠিক এই জায়গাতেই মাস্টারস্ট্রোক দিয়ে যাচ্ছেন ববিতা। প্রার্থী নয়, নিজেকে জাহির করছেন বেটি হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসেছেন রাজনীতিতে। তাঁর ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ স্লোগানকে নিজের মতো সাজিয়ে জুড়েছেন আরও একটি কথা। ‘বেটি খিলাও’। নিজে যেহেতু খেলোয়াড় তাই সবাইকে খেলতে উদ্বুদ্ধ করছেন। পাশাপাশি নিজেও ‘বেটি’ হয়ে উঠছেন। প্রচারের ফাঁকে পরিচয় দিতেই বললেন, “গাড়িতে উঠে পড়ুন।” একেকটি গ্রামে যাওয়ার মাঝে মাঝে চলছিল কথাবার্তা। বললেন, “কুস্তি হোক বা রাজনীতি, আত্মবিশ্বাসটাই আসল। ওখানেও দিনভর প্রাকটিস, এখানেও সারাদিন প্রচার। খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।”
গতবার তাঁর আসন দাদরিতে জিতেছিলেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দলের প্রার্থী। সেসব নিয়ে ভাবছেন না ববিতা। বললেন, “এবার আমাদের স্লোগান অব কি বার পঁচাত্তর পার। আমি জানপ্রাণ দিয়ে লড়ছি। কুস্তির ভাষায় যাকে বলে ‘এড়ি চোটি কা জোর’। সবাই কত ভালোবাসা দিচ্ছে দেখছেন তো। এই জন্যই এত দেরি হয়ে যাচ্ছে। তবে, আত্মবিশ্বাস আর আত্মতুষ্টি এই দুটো যাতে এক না হয়ে যায়, সেদিকেও নজর দিচ্ছি।
[আরও পড়ুন: সংঘাতের আবহেই মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হচ্ছেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়]
মোদীজি, আমির ভাই সবাই এই কথা বলেছেন।” প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হতেই ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পর্দায় তাঁর বাবার চরিত্রে অভিনয় করা আমির খান। তবে গায়ে রাজনীতির রং লাগাতে না চাওয়ায় তিনি প্রচারে আসেননি। শনিবার ববিতার হয়ে প্রচার করেছেন আরেক বলিউড তারকা তথা বিজেপি সাংসদ সানি দেওল। নির্বাচনে জিততে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ববিতা, যে নিজের কর্মসূচিও ঠিক করে ফেলেছেন। “এমনিতে হরিয়ানাতে আগে মেয়ে সন্তানদের যেভাবে দেখা হতো, তা এখন অনেক কমে গেছে। বাকিটা আমি বন্ধ করব। বলব আমিওতো তোমাদের বেটি। দেশের নাম উজ্বল করেছি। এটা মাথায় রেখ। এছাড়া পথ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চাকরিতেও জোর দেব।” সাধারণ সালোয়ার স্যুট আর গলায় বিজেপি উত্তরীয়। এই পোশাকেই টুক করে একের পর এক গ্রামের ঘরের হেঁশেলে ঢুকে গেলেন ববিতা। যেভাবে তাঁকে আপ্যায়ন করলেন প্রত্যেকে তাতে বলাই যায় যে, রাজনীতির দঙ্গলেও ববিতার জয় পাক্কা।
The post হরিয়ানায় রাজনীতির দঙ্গলে ববিতা ফোগাট, বিরোধীদের ‘ধোবি পাছাড়’ দিতে প্রস্তুত কুস্তিগির appeared first on Sangbad Pratidin.