আলাপন সাহা: বিকেল গড়িয়ে ততক্ষণে সন্ধে নেমেছে। কালীঘাট মাঠ থেকে বেরিয়ে লাল এসউইভি গাড়িটার দিকে যাচ্ছেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। গত চব্বিশ ঘণ্টায় তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার নিয়ে কী পরিমাণ আলোচনা হয়েছে, সেটা জানেন। এক সংবাদসংস্থার খবর অনুযায়ী, ঋদ্ধিমানকে নাকি টিম ম্যানেজমেন্টের একাংশ জানিয়ে দিয়েছে, তাঁকে আর টেস্ট টিমে ভাবা হবে না। কেউ কেউ আবার বলছেন, দেশের একনম্বর উইকেটকিপার এবার অবসর নিয়ে নেবেন। সংবাদ প্রতিদিন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অবসর জল্পনা উড়িয়ে দিলেন ঋদ্ধিমান সাহা।
প্রশ্ন: গত চব্বিশ ঘণ্টায় আপনাকে নিয়ে যা হল, তাতে খারাপ লেগেছে নিশ্চয়ই?
ঋদ্ধি: আমি এসব নিয়ে খুব একটা ভাবি না। আমাকে দেখে আপনার মনে হচ্ছে যে, ভীষণ দুঃখে আছি? সেটা হলে তো বাড়িতে বসে থাকতাম। এখানে বসে আপনার সঙ্গে এভাবে আড্ডা দিতাম না।
প্রশ্ন: কী বলছেন? মিডিয়াতে আপনাকে নিয়ে লেখালেখি চলছে।
ঋদ্ধি: আমি কাগজ খুব একটা দেখি না। তাই ওরা ঠিক কী লিখেছে, সেটা বলতে পারব না। তবে জানি আপনি ঠিক কী বলতে চাইছেন।
প্রশ্ন: সবার একটাই প্রশ্ন, কী ঘটেছে?
ঋদ্ধি: এটা যিনি বলেছেন, তিনিই বোধহয় সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: ‘ভারতীয় টেস্ট দলে আপনাকে আর প্রয়োজন নেই’, ঋদ্ধিমানকে জানিয়ে দিল টিম ম্যানেজমেন্ট!]
প্রশ্ন: সবাই আপনার দিকটা জানতে চাইছে?
ঋদ্ধি: এটা নিয়ে কোনও কথা এখনও বলব না। কেরিয়ারের প্রথম দিন থেকে আমি একটা প্রোটোকল মেনে এসেছি। টিমের (Team India) অংশ থাকাকালীন টিম সংক্রান্ত কোনও কথা আমি বলি না। এখনও সেটাই করব। শ্রীলঙ্কা সিরিজের দল কি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে? আমি এখনও নিজেকে দলের পার্ট মনে করি। এই মুহূর্তে কোনও কথা বলা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: অনেকেই তো লিখছেন আপনি অবসর নিতে চলেছেন।
ঋদ্ধি: লিখুক না। কে কী বলবেন কিংবা কে কী লিখবেন, সেটা আমি কী করে নিয়ন্ত্রণ করব? এটা তাঁদের চয়েস। তাছাড়া এই প্রথম হচ্ছে না। এর আগেও অনেকবার হয়েছে। তবে একটা কথা বলব, আমি কবে অবসর নেব, সেটা দেখছি লোকেরাই ঠিক করে দিচ্ছে।
প্রশ্ন: তাহলে এখনই অবসরের পরিকল্পনা নেই বলছেন?
ঋদ্ধি: কেন এখনই অবসর নিতে যাব বলুন তো? একজন ক্রিকেটার তখনই অবসর নেয়, যখন সে পারফর্ম করতে পারে না। কিংবা তাঁর ফিটনেসে সমস্যা থাকে। আপনি বলুন, আমি কি পারফর্ম করছি না? আর ফিটনেস? আমি এখনও জোর দিয়ে বলতে পারি, ফিটনেস টেস্টে দলের প্রথম তিন-চারজনের মধ্যে থাকব।
[আরও পড়ুন: দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সুখবর ভারতীয় শিবিরে, করোনামুক্ত হয়ে দলে যোগ দুই তারকার]
প্রশ্ন: আপনি তো রনজি থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিলেন।
ঋদ্ধি: সিএবিকে (CAB) পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিলাম, ব্যক্তিগত কারণের জন্য এবারের রনজি (Ranji Trophy) আমি খেলতে পারব না। ‘এবারের’ কথাটা আমি আলাদাভাবে মেনশন করে দিয়েছিলাম। তাছাড়া কোথাও কি বলেছি যে, আমি আর খেলব না? আপনাকে একটা ঘটনা বলি, চার বছর আগে কাঁধে চোট পেলাম। চোট এতটাই মারাত্মক ছিল যে, আর পনেরো শতাংশ বেশি টিয়ার হলে, হাড় বেরিয়ে আসত। যে ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম উনি বলেছিলেন, চাইলে ইঞ্জেকশন নিয়ে সিরিজটা খেলে অবসর ঘোষণা করতে পারি। আমি তখনই ওঁকে বলে দিই, এখন কেন অবসর নেব? আরও খেলব। চাইলে তখনই অবসর নিয়ে নিতে পারতাম।
প্রশ্ন: কখনও মনে হয় না, আপনাকেই সবসময় কেন এত পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়?
ঋদ্ধি: আমি সব সময় সবকিছুকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিই। কানপুর টেস্টে যখন প্রথম ইনিংসে রান পেলাম না, তখন আমার মনে হয়েছিল, মুম্বই টেস্টে ভরতকে (শ্রীকর) খেলানো হবে, এটা কার্যত ঠিক হয়েই গিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে যদি রান না করতাম, তাহলে মুম্বই টেস্টে আমাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হত।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন, বিদেশের মাঠে আপনার সেভাবে রান নেই।
ঋদ্ধি: সবাই পরিসংখ্যান দেখে বলে। যেটা দেখে না, সেটা হল সেনা (SENA) কান্ট্রিতে কতগুলো ম্যাচ খেলেছি। সবমিলিয়ে আমি ওখানে চারটে মাত্র ম্যাচ খেলেছি। কোনও সিরিজেই সব ম্যাচে টানা খেলিনি। দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা টেস্ট খেলেছিলাম, সেখানে দশটা ক্যাচ নিয়েছিলাম। কিন্তু মুশকিল হল, এসব কেউ দেখে না। সবাই পরিসংখ্যান দেখে বিচার করে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে স্ট্যাটস দেখে আমার মনে হয়, আরও একটু ভাল হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এমন পরিস্থিতিতে ব্যাট নামতে হয়েছে, যেখানে দ্রুত রান করতে হবে। টিম ডিক্লেয়ার করবে। সবসময় টিমের কথা ভেবেই খেলেছি। আমার মনে হয়েছে, দ্রুত রান করতে গিয়ে যদি পনেরো-কুড়ি করেও আউট হই, তাতে যদি টিমের লাভ হয়, তাহলে সেটাই করব। কানপুরে ৬১ করেছিলাম আট নম্বরে নেমে। রাঁচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যে সেঞ্চুরি করেছিলাম, সেটাও আটে নেমেই। নিজের কথা ভেবে যদি ক্রিকেটটা খেলতাম, তাহলে আমার স্ট্যাটস আরও বেটার হত।