সুকুমার সরকার, ঢাকা: জঙ্গি দমন ও মাদককারবারীদের বিরুদ্ধে কড়া দাওয়াইয়ের মতো যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধেও কড়া মনোভাব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করে তাদের কড়া শাস্তির দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরপর বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আদালতের নির্দেশ অনুসারে কমিটি গঠন করা হয়েছে কিনা, তা জানতে চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
রবিবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই বিষয়ে রিট পিটিশন দাখিল করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। দু’সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট তালিকা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ চাওয়া হয়েছে ওই রিটে। এছাড়া আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও আইন মন্ত্রক যাতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন করে, তারও নির্দেশ চাওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন-বাংলাদেশে ফের বিস্ফোরণ, গুলির লড়াইয়ে নিকেশ ২ জেহাদি ]
এই মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও আইন মন্ত্রকের সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-সহ সংশ্লিষ্ট ২১ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরকে নিয়ে গঠিত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।
[আরও পড়ুন- শেখ হাসিনার নির্দেশে জঙ্গি নির্মূলে নয়া পদক্ষেপ বাংলাদেশের]
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন যৌন হেনস্থার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলার আবেদনে রাষ্ট্র কেন এই সংক্রান্ত বিষয়ে পদক্ষেপ করবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই মামলার রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম-সহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি‘ নামে একটি কমিটি গঠনের আদেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কিনা তাই জানতে চেয়ে রবিবার ঢাকা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
[আরও পড়ুন-অস্তিত্বহীনতার পথে জামাত, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের তোড়জোড় বহিষ্কৃতদের]
এদিকে রবিবার চুয়াডাঙা জেলার পুরসভা এলাকার এক নাবালক ছাত্রকে(৯) যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার আদালতে তোলা হলে তাকে জেলে পাঠানো হয়। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করছিলেন ওই মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তার ভিত্তিতে রবিবার রাতে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে ওই নাবালককে চুয়াডাঙার ওই মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে ভরতি করেন তার অভিভাবক। গত ২১ এপ্রিল রাতে মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্ররা ঘুমোতে গেলে অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রকে কৌশলে ডেকে যৌন নিপীড়ন করে। পরেরদিন সকালে বিষয়টি মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীরা জেনে যায়। তারপর বিষয়টি মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এর ফলে আবাসিক শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। রাতে এলাকাবাসী বিষয়টি জানার পর মাদ্রাসা ঘেরাও করে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাইলাল কর, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াশীমুল বারী ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
The post যৌন হেনস্থা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তালিকা চেয়ে হাই কোর্টে আইনজীবী appeared first on Sangbad Pratidin.