সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চেতেশ্বর পুজারা ভারতীয় টেস্ট টিম থেকে বাদ পড়ার পর থেকে যে চর্চাটা চলছিল, তার চিত্রনাট্যে যে এমন মোচড় অপেক্ষা করে আছে, কে জানত! কে জানত, টেস্টে ভারতের নতুন তিন নম্বর হিসেবে যশস্বী জয়সওয়াল নয়, নিজের নাম শেষ মুহূর্তে ঢুকিয়ে ফেলবেন শুভমান গিল (Shubman Gill)? স্বয়ং ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) কাছে দাবি পেশ করে?
পুজারা বাদ পড়ার, টেস্ট টিমে জয়সওয়ালের অন্তর্ভুক্তির পর তাঁকেই পুজারার উত্তরসুরি হিসেবে ভাবা হচ্ছিল। কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে, সবার অলক্ষ্যে নিজেকে তৈরি করছেন গিল, ভবিষ্যতের তিন নম্বর হিসেবে! আজ, বুধবার থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের (West Indies) বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে নেমে পড়ছে ভারত (India)। তার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে ভারত অধিনায়ক রোহিতই বললেন গল্পটা। বললেন যে, ‘‘রাহুল ভাইকে (দ্রাবিড়) গিয়ে গিল বলে যে, ও তিন নম্বরে খেলতে চায়। সারা জীবন ও তিন বা চার নম্বরে ব্যাট করে এসেছে। তাই ওই পজিশনে খেললে, টিমের প্রতি আরও বেটার অবদান রাখতে পারবে। তাই যশস্বী ওপেনিংয়ে যাচ্ছে। আর গিল যাবে তিন নম্বরে। টিমের বিচারেও ঠিকই আছে। বহু দিন পর আমরা ডান হাতি-বাঁ হাতি ওপেনিং কম্বিনেশন পাব। আশা করি, ভবিষ্যতে যা চলবে।’’
[আরও পড়ুন: আজ লিগে মোহনবাগানের সামনে টালিগঞ্জ, দু’টি কারণে বিশেষ সতর্ক সবুজ-মেরুন]
অর্থাৎ, জয়সওয়াল ওপেনিংয়ে, গিল তিনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের কম্বিনেশন কী হতে পারে, সেটাও মোটামুটি বলে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। দুই স্পিনার আর তিন পেসারের কম্বিনেশনে যাচ্ছে ভারত। রোহিত বলছিলেন যে, ‘‘২০১৭ সালে এখানে যখন শেষ টেস্ট ম্যাচ হয়, সেই উইকেটে স্পিনাররা উইকেট পেয়েছিল। কারণ, পিচে বাউন্স আছে। আমরা তাই দুই স্পিনারে যাচ্ছি। আর তিন পেসার।’’
এদিকে ডোমিনিকার আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে বৃষ্টির মেঘ। বৃষ্টির জন্য দু’ দিন অনুশীলন পুরোদস্তুর হয়নি। প্রথম দিনেও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ২৪ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন আবহাওয়া ভাল থাকবে বলেই পূর্বাভাস। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন ১৭, ১৭ ও ১৫ শতাংশ বৃষ্টির আশঙ্কা বলে খবর। কিন্তু ম্যাচের পঞ্চম দিনে বৃষ্টির সম্ভাবনা আরও বাড়বে। ৪২ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রোহিতকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এত অনভিজ্ঞ পেস ব্যাটারি নিয়ে। যাঁদের সম্মিলিত টেস্ট উইকেট সংখ্যা ৮৮। উত্তরে ভারত অধিনায়ক বলে দেন, ‘‘কী করব? আমাদের টিমে তো ফাস্ট বোলাররা লাইন দিয়ে বসে নেই। অনেকেরই চোট-আঘাত রয়েছে। তবে সবাইকে নতুন বলা চলে না। সিরাজ আছে। জয়দেব (উনাদকট) আছে। ওরা দু’জনে কম ক্রিকেট খেলেনি। আর আছে মুকেশ কুমার। পারফর্ম করে, সবাইকে মুগ্ধ করে যে টিমে ঢুকেছে।’’
রোহিতের মতো আরও একজনকে সমান আত্মবিশ্বাসী শোনাল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর টিম থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল। কেউ ভাবেওনি যে, এরপরেও তাঁর পক্ষে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হবে। ভাবাটা সম্ভবও নয়। ভারতীয় টিমের একটা স্লটকে নিয়ে যে পরিমাণ হানাহানি চলে, তাতে একবার বাদ পড়ে গেলে ফিরে আসা বড় কঠিন। কিন্তু মাঝের সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেট মরশুম আর মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে একটা আইপিএল–রাহানের ভাগ্যাকাশে ফের সুদিন নিয়ে আসে। সোজা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে সুযোগ পেয়ে যান রাহানে। আর একা কুম্ভ হয়ে সেই টেস্ট ফাইনালে প্রতিরোধ করার পর ফের টেস্ট সহ অধিনায়কও হয়ে যান! বিরাট জমানায় যা ছিলেন তিনি।
ক্রিকেট কেরিয়ারের এই নয়া মোচড় নিয়ে কী বলবেন? ‘‘কিছুই বদলায়নি, এটুকু বলব। সিএসকে আমাকে একটা ভূমিকা দিয়েছিল, সেটা পালন করেছি আমি। আগে আমার ভূমিকা ছিল অ্যাঙ্করের। কিন্তু সিএসকে বলে দেয়, স্বাধীনতা নিয়ে খেলো। দেখুন, আমি স্ট্রোক প্লেয়ার। শট খেলতে আমি ভালবাসি,’’ বলে দিয়েছেন রাহানে। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘একই রকম ভাবে যে ভূমিকা আমাকে রোহিত দেবে, সেটাও একই ভাবে পালন করার চেষ্টা করব। রোহিতের নেতৃত্বে খেলতে দারুণ লাগে। প্লেয়ারদের অবাধ স্বাধীনতা দেয় ও। আর সহ অধিনায়কত্ব? এই ভূমিকা আমার চেনা। পাঁচ বছর ধরে টেস্ট ভাইস ক্যাপ্টেন্সি করেছি আমি। তাই কোনওরকম অসুবিধা হবে না। আমার বিশ্বাস টেস্ট সিরিজে শুরুটা দারুণভাবে করতে পারব।’’
দেখার, সহ অধিনায়কত্বের দ্বিতীয় পর্ব কেমন যায় রাহানের। উত্তর তো আজ থেকে।