সুকুমার সরকার, ঢাকা: সোনম কাপুরের ‘ডলি কী ডোলি’ সিনেমায় বিয়ে করে লোক ঠকানো ও টাকা রোজগারের দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন অনেকে। পরে প্রায় একই ধরনের একটি সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায় আরশাদ ওয়ারসিকে। তবে সেখানে কল্পনার গরু গাছে উঠিয়েও ছবির মূল চরিত্রদের আট-দশটির বেশি বিয়ে দেওয়ানোর সাহস দেখাননি পরিচালক। আসলে তখনও তিনি জানতেন বাংলাদেশের জাকির হোসেন ব্যাপারীর নাম। যিনি গত ১৪ বছরের মোট ২৮৬টি বিয়ে করেছেন। আর তারও উদ্দেশ্য ছিল লোক ঠকানো বা প্রতারণা।
[আরও পড়ুন: বিদেশ থেকে পিঁয়াজ উড়িয়ে এনেও অধরা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, দাম বাড়ছে অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর]
জাকির হোসেন ব্যাপারী ওরফে রাব্বি প্রথম বিয়ে করছিল ২১ বছর বয়সে। আর এখন তার বয়স হয়েছে ৩৫। মাঝের এই ১৪ বছরে টাকা রোজগার ও বিনে পয়সায় নারী শরীর ভোগ করার জন্য ২৮৬ বার বিয়ে করেছে সে। আর রোজগারের টাকা দিয়ে দামি গাড়িতে ঘোরা ও নামী হোটেল খাওয়া থেকে শুরু করে জীবনের সব প্রয়োজনই মিটিয়েছে। দামি দামি পোশাক পরে আর মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে বহু মেয়ের জীবন ছারখার করে দিয়েছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতারিত এক যুবতীর অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও থানার পুলিশ। আর তারপর তাকে জেরা করতেই জানা গিয়েছে গত ১৪ বছরের ইতিহাস।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে লালমনিরহাট জেলার আদিত্যপুর থানার দুর্গাপুর গ্রামে বাস করত রাব্বি। পরে ঢাকার টঙ্গি থানার আহসান মোল্লা রোডের আইচপাড়ায় চলে আসে। ধর্ষণ ও টাকা রোজগার করার জন্য গত ১৪ বছর ধরে প্রচুর মেয়েকে বিয়ে করে সে। শুধু তাই নয়, মেয়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থার ভিডিও তুলে পরে ব্ল্যাকমেলিংও করত। কয়েকদিন আগে তার নামে ঢাকার তেজগাঁও থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন এক প্রতারিত মহিলা। এরপরই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অবশেষে ঢাকার মণিপুরী পাড়া থেকে এই গুণধরকে গ্রেপ্তার করে তারা। পরে পুলিশের জেরায় নিজের সমস্ত অপরাধের কথা স্বীকার করে জাকির ওরফে রাব্বি।
[আরও পড়ুন: পরীক্ষা দিচ্ছেন মা, সন্তান কোলে বসে শিক্ষক! নেটিজেনদের প্রশংসা কুড়োচ্ছে ভাইরাল ছবি]
এপ্রসঙ্গে তেজগাঁও থানার ওসি শামিম রশিদ তালুকদার বলেন, ‘রাব্বি একজন পাকা প্রতারক। কোনও চাকরি বা ব্যবসা না করে শুধু বিয়েই করত। আর সেখান থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে চাপত দামি গাড়িতে। দামি দামি পোশাক পরে ঘুরত। ফেসবুক প্রোফাইলে নিজেকে লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় দিত। ২০০৫ সাল মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করে। তারপর থেকে প্রায় প্রতি মাসেই একটি করে বিয়ে করেছে। এর জন্য তার এক স্ত্রী শাপলা বেগম, নকল মৌলভি ও কাজীকে নিয়ে একটি চক্রও তৈরি করেছিল। কিছুদিন আগে মীরপুরের এক যুবতী জাকিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ, রাব্বি সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেকে অবিবাহিত এবং সরকারি বা বেসরকারি আধিকারিক বলে পরিচয় দিত। লোভ দেখিয়ে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলত। তাদের মধ্যে অনেককে বিয়েও করে। আর বিয়ের পর স্ত্রীয়ের বাসায় থাকত এবং কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত। শুধু তাই নয়, নতুন স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার সময়ে ভিডিও করে রাখত। কেউ প্রতিবাদ করলে ওই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাত।’
The post ১৪ বছরে ২৮৬টি বিয়ে! ধৃত বাংলাদেশের ‘গুণধর’ যুবক appeared first on Sangbad Pratidin.