বিক্রম রায়, কোচবিহার: হাড়হিম করা ঘটনা। বন্ধ বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হল বৃদ্ধের কম্বলে মোড়ানো রক্তাক্ত মৃতদেহ। ওই বৃদ্ধের ছেলে পলাতক। বাড়ির সেপ্টিক ট্যাঙ্ক থেকে মিলল পলাতকের পিসতুতো দাদার বিকৃত মৃতদেহ। বাবা-দাদাকে খুন করে পালিয়েছে গুণধর ছেলে? চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার ডাওয়াগুড়ি বৈশ্য পাড়া এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজয়কুমার বৈশ্য (৭০) নামে ওই বৃদ্ধ নিজের একমাত্র ছেলে প্রণবকুমার রায়কে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন। বেশ কিছু সময় ধরেই ওই বৃদ্ধ অসুস্থ ছিলেন। সেভাবে বাইরে বেরোতেন না। এক মাছ বিক্রেতার থেকে তিনি নিয়মিত মাছ কিনতেন। ওই ব্যক্তি রোজ মাছ তাঁদের বাড়িতে দিয়ে যেতেন। আজ সোমবার সকালে ওই বিক্রেতা মাছ বিক্রি করতে গেলে বাড়ির দরজা বন্ধ দেখেন। বাইরে একটি চিঠি লেখা কাগজ পড়েছিল। কাগজে লেখা, প্রণব বাবাকে নিয়ে চেন্নাই গিয়েছেন চিকিৎসা করাতে।
এই দেখে ওই মাছ বিক্রেতা প্রতিবেশীদের খবর দেন। স্থানীয়রা ওই বাড়ির সামনে এসে জড়ো হন। সেই সময় নজরে আসে বারান্দার কিছু জায়গায় লাল ছোপ রয়েছে। আর অপেক্ষা না করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। কোতোয়ালি থানার পুলিশ সেখানে গিয়ে বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। ভিতরের ঘরও বন্ধ ছিল। সেই ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকলে একাধিক জায়গায় ফের লাল ছোপ দেখা যায়। পুলিশের আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি, সেই লাল ছোপ আসলে রক্ত। পুলিশের নজর যায় ঘরের ভিতর থাকা একটি শোকেস কাম আলমারির দিকে। সেটি খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ সকলের।
তার ভিতরে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় ঢোকানো ছিল ওই বৃদ্ধের মৃতদেহ। তাঁর শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ওই বৃদ্ধকে ভারী কিছু দিয়ে একাধিক বার আঘাতে খুন করা হয়েছে। স্থানীয়রা সেই সময় জানান, প্রণবের পিসতুতো দাদা গোপাল রায় (৪৪) এক মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি কিছুটা দূরেই একটি বাড়িতে থাকতেন। সেই কথা শুনে ওই বৃদ্ধের বাড়িতে খানাতল্লাশি শুরু হয়। জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান রায় নিজে তদন্তে যান। বাড়ির পিছন দিকে থাকা সেপ্টিক ট্যাঙ্কের সামনে থমকান তদন্তকারীরা। ট্যাঙ্কের ঢাকনা খুলে ফেলতেই দুর্গন্ধ ছড়ায়।
সেখান থেকে প্লাস্টিকে জড়ানো অবস্থায় আরও একটি মৃতদেহ উদ্ধার হল। দেহ বিকৃত হয়ে গিয়েছে। জামাকাপড় দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান সেটি গোপাল রায়ের মৃতদেহ। গোটা ঘটনায় বৃদ্ধের ছেলে প্রণবের দিকেই সন্দেহের আঙুল উঠছে। সকাল থেকেই তিনি বেপাত্তা। পুলিশ তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, বছর ৩১-এর প্রণব নেশাগ্রস্ত থাকত। বৃদ্ধ বাবাকে মারধরও করত। তাহলে কি বাবাকে খুন করেই চিঠি লিখে পালিয়েছে ছেলে? গোপালকে খুন করেও সেপ্টিক ট্যাঙ্কে ফেলেছিল সে? তাঁকেও কি ওই বাড়িতেই খুন করা হয়েছিল? পুলিশ সুপার দ্যুতিমান রায় জানিয়েছেন, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পলাতকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।